বিষ দিয়ে কাউখালীর সামিয়া ডেইরি ফার্মের ৮ গরু মেরে ফেলেছে দুষ্কৃতকারীরা আরো অসুস্থ ১৪

কাউখালী প্রতিনিধি:

রাঙামাটির কাউখালীতে সামিয়া ডেইরি ফার্মে খাবারের সাথে দূষ্কৃতিকারীদের দেয়া বিষে ৮ গরুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আরো ১৪টি গরু। ১৯ জুলাই (বুধবার) সন্ধ্যা সাতটা থেকে আটটা এ অল্প সময়ের মধ্যেই পর পর আটটি গরু মারা যায় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. নজরুল ইসলাম তাজল। উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মো. মঈনুল ইসলাম বিষ প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এব্যাপারে কাউখালী থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছে প্রতিষ্ঠানের মালিক।

উপজেলার নাইল্যাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা সামিয়া ডেইরি ফার্মের মালিক মো. নজরুল ইসলাম তাজল (২৫) জানান, ইচ্ছা ছিল বিদেশ যাওয়ার। কিন্তু প্রবাসী ভাইয়ের অনুরোধে আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধজাত গরুর ফার্মের জন্য ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কৃষি ব্যাংক কাউখালী শাখা হতে ১৬ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন এ তরুন ফার্মার। পরিবারের সহযোগিতা ও ব্যাংক ঋণ সব মিলয়ে তার এ ফার্মে পূঁজি বিনিয়োগ করেন প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।

প্রাথমিক পর্যায়ে দেশি বিদেশি মিলে তার ফার্মে ২২টি গরু ছিল। ফার্মের বাইরে বিভিন্ন স্থানে বর্গা দিয়েছেন প্রায় ১০/১২টি গরু। রাতদিন খাটা খাটনির মাধ্যমে নিজের চোখের সামনেই বেড়ে উঠতে থাকে এসব গরু। আসছে ঈদুল আযহায় গরু বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু ১৯ জুলাই নজরুলের সবকিছু তছনছ করে দিল দুষ্কৃতিকারীরা। আসরের নামাজের পর ফার্মের গরুর জন্য খাবার প্রস্তুত করে গরুর সামনে দিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে মসজিদে যায় নজরুল। এরই মধ্যে কোন এক ফাঁকে অজ্ঞাত দূষ্কৃতিকারী ফার্মে থাকা গরুগুলো খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। বিষাক্ত খাবার খেয়ে গরুগুলো ছটফট করতে থাকে। নামাজ শেষে নজরুল ফার্মে এসে দেখেন ২২টি গরুর মধ্যে ৮টি গরুই মাটিতে লুটে পড়ে ছটফট করছে। অবশিষ্ট গরুগুলোও বিষক্রিয়া আক্রান্ত হয়ে ছটফট করছে।

একটু আগেই যে গরুগুলো সুস্থ্য ও স্বাভাবিকভাবে খাবার গ্রহণ করছিল তার চোখের সামনেই কাটা কবুতরের মত ছটফট করতে দেখে নিজেই হুশ হারিয়ে ফেলেন নজরুল। শেষমেষ কাউখালী প্রাণীসম্পদ অফিসে খবর দেন তিনি। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. মঈনুল ইসলাম প্রায় দু’ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু তিনি যাওয়ার আগেই আটটি গরুই মারা যায়। যার বাজার মুল্য ৮ থেকে ১০ লক্ষ হবে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক। এর আগে স্থানীয় প্রাণী চিকিৎসক ধনপতি সরকারকে দিয়ে গরুগুলো বাঁচাতে প্রাণপন চেষ্টা করেন নজরুল। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

ধনপতি সরকার জানান, দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর ধরে অবলা প্রাণী নিয়ে কাজ করছি। অনেক গরু ছাগল আমার সামনে মারা গেছে কিন্তু কোন দিন এত খারাপ লাগেনি। কিন্তু এক সাথে এতগুলো আমার সামনে মারা যেতে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।

পরিশ্রমী, নম্র, ভদ্র নজরুলে গরু মারা যাওয়ার খবর শুনে হাজার খানেক মানুষ ছুটে আসে তার ফার্মে। এসময় নজরুলে পাশাপাশি শত শত মানুষকে বিলাপ ধরে কাঁদতে শুরু করে। এলাকাবাসীর দাবি যেসব নরপশু দল এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের উপযুক্ত বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত নজরুল জানান, আমার সাথে কারো ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকতে পারে, কিন্তু আমার নিরীহ প্রাণীগুলো কি দোষ করেছে। আমি কারো কাছে বিচার প্রার্থী হবোনা, এর বিচার আমি আল্লাহর দরবারে দিলাম।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মো. মঈনুল ইসলাম জানান, আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ৮টি গরু মারা যায়। অবশিষ্ট ১৪টি গরুও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এসব গুরুগুলোকে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে বিষ গরুর রক্তের সাথে মিশে যাওয়ায় বেঁচে থাকা গরুগুলোর অবস্থাও আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছেনা।

কাউখালী থানার ওসি আব্দুল করিম জানান, অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কাউখালী থানায় মামলা রুজু করেছে বাদী নজরুল ইসলাম। তদন্তস্বাপেক্ষে আসামিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন