বৈদ্যুতিক ফাঁদে বন্যহাতি হত্যা মামলার আসামীরা গ্রেপ্তার হয়নি এখনো 

fec-image

সম্প্রতি সময়ে কক্সবাজারের চকরিয়ায় খাদ্যের সন্ধানে বন্য হাতির দল ক্ষেতে নামতে গেলে একটি বন্য হাতিকে বৈদ্যুতিক ফাঁদে ফেলে হত্যা করা হয়। বন্য হাতি হত্যার এ অপকর্ম চাপা দিতে হাতিটির দেহ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।

এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বনবিভাগ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর তফসিল ০১ বিধি লঙ্ঘন অপরাধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। বন্যহাতি হত্যা মামলা এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও মূল আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের চূড়াফুলা ফুইজার ঝিরি নামক এলাকায় গত ১৩ নভেম্বর এই হাতি হত্যার ঘটনা ঘটে। হাতি হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বনবিভাগ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর তফসিল ০১ বিধি লঙ্ঘন অপরাধে ৫ জনকে আসামি করে গত ১৪ নভেম্বর চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টৈটং বনবিট কর্মকর্তা জাবেদুল আব্বাছ চৌধুরী বাদী হয়ে একটি হাতি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

মামলার আসামীরা হলেন, উপজেলার হারবাং মোছন সিকদার পাড়ার মৃত জব্বার আলীর পুত্র আহমদ হোছন ওরফে লুলা মিয়া, একই ইউনিয়নের মসজিদের মুড়া এলাকার মৃত শামসুল আলমের পুত্র জানে আলম প্রকাশ জানু, ভায়াকাটা এলাকার নন্না মিয়ার পুত্র জসিম উদ্দিন, মসজিদের মুড়া এলাকার মীর কাসেম আলীর পুত্র হারুন ও গোদার পাড়া এলাকার আবদুস সালামের পুত্র মো. জমির।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হারবাং সংরক্ষিত বনের ভেতর সমতল জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। সেই ধান রক্ষায় চারদিকে গাছের খুঁটি পুঁতে তার দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। দৃশ্যত ওই তারে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার পরই তাতে জড়িয়ে মারা পড়ে বন্য হাতিটি। মূলত শীত মৌসুমের শুরুতে বন্য হাতির বিচরণ বাড়ে ওই এলাকায়। খাবারের সন্ধানে এসে প্রায়ই ধানক্ষেতসহ ফসলি জমি নষ্ট করছিল হাতির দল। তাই হাতির উপদ্রব থেকে ধানক্ষেত রক্ষায় একটি দখলবাজ চক্র জেনারেটর দিয়ে বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদ বসানো হয়। ওই বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে হাতি হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানায়।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, বন্যহাতি হত্যার ঘটনাটি এক মাস পেরিয়ে গেলেও ঘটনায় জড়িত ও মামলার আসামি কাউকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বন্যহাতি হত্যায় দায়েরকৃত মামলার ৫নম্বর আসামি ও সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার মামলায় এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি মো. জমির উদ্দিনসহ অপরাপর আসামি প্রকাশ্যে দিবালোকে এলাকায় ঘুরা-ফেরা করলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করছেনা বলে স্থানীয়দের অভিযোগে উঠে। যারা ধানক্ষেত রক্ষায় জেনারেটরের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ফাঁদ পেতে হাতিকে হত্যা করেছে তারা দেশ ও জাতির শত্রু।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চকরিয়ার হারবাং বনবিট কর্মকর্তা মো. শাহীনুর রহমান বলেন, একটি দখলবাজ চক্র সংরক্ষিত বনভূমির জমি দখলে নিয়ে ধান চাষ করে আসছিল। ওই চক্রটি বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে মূলত হাতি হত্যার ঘটনাটি করেছে। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার, থানার ওসি এবং হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির আইসিকে অবগত করা হয়েছে।

চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, বন্যহাতি হত্যার ঘটনায় আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের পক্ষথেকে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া আসামীদের অবস্থান চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন