ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেও একই গল্প বাংলাদেশের

fec-image

ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেও একই গল্প, একই পরিণতি। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানে অলআউট হয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ভালো শুরু পেয়েও শান্ত, জাকির, সাকিব, মুশফিক, লিটনরা ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। বরং বাজে শটে আউট হয়ে দলকে বিপদে ফেলেছেন। মুমিনুলের একার লড়াই গড়ে দেয় দিয়েছে মূল পুঁজি।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ঢাকা টেস্টের প্রথম সেশনে দুই উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ২৮ ওভারে যোগ হয়েছে ৮২ রান। দ্বিতীয় সেশনে ২৯ ওভারের খেলায় ৩ উইকেট পড়েছে। যোগ হয়েছে ১০২ রান। শুধু মুমিনুলের ব্যাটিংয়েই একপ্রান্তে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে উঠে। চায়ের বিরতিতে যাওয়ার আগে ৫৭ ওভার শেষে ৫ উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে স্কোর ছিল ১৮৪ রান। মেহেদী হাসান (৪) ও মুমিনুল (৬৫) রান নিয়ে ফিরে আশা দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু উমেশ যাদবের বলে কাট করতে গিয়ে পান্তর হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন দারুণ খেলতে থাকা মিরাজ (১৫)।

মিরাজ আউট হতেই দ্রুত ভেঙে পড়ে লেটঅর্ডার। নুরুল হাসানও বেশিক্ষণ ঠিকতে পারেননি। উমেশ যাদবের ভেতরে ঢোকা বলে সংযোগ ঘটাতে পারেননি। ফলে প্রথম টেস্টের মতো ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ব্যর্থ হলেন এই উইকেট কিপার ব্যাটার। ১৩ বলে ৬ রান করে উমেশ যাদবদের বলে তিনি এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন। সোহানের আউটের পর তাসকিনকে নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকেন মুমিনুল। কিন্তু ড্রাইভ শট খেলতে গিয়ে পয়েন্টে সিরাজের হাতে তাসকিন (১) তালুবন্দি হলে সেই প্রতিরোধও স্থায়ী হয়নি।

তাসকিনের আউটের পরের ওভারেই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা মুমিনুল অশ্বিনের দারুণ এক ডেলিভারিতে আউট হয়েছেন। অফস্ট্যাম্পের বাইরে পড়া বলটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বলটি বাঁক নিয়ে বাঁহাতি ব্যাটারেরর গ্লাভস ছুঁয়ে চলে যায় পান্তর হাতে। তাতে মুমিনুলের ৮৪ রানের দারুণ ইনিংসটির সমাপ্তি ঘটে।

মুমিনুলের নিজের কাছে এই ইনিংসের গুরুত্ব মোটেও কম নয়। ১২ ইনিংস পর হাফসেঞ্চুরি দেখা পেয়েছেন। ১৫৭ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় নিজের ৮৪ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন এই ব্যাটার। মুমিনুলের আউটের পর দুই বল পড়েই আউট হন তাইজুল ইসলাম। তাতে ২২৭ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।

বাংলাদেশের শুরুটাও খারাপ ছিল না। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ঘণ্টা অবিচ্ছিন্ন থেকেই পার করেছেন জাকির-শান্ত। চার বলের ব্যবধানে দুই ওপেনার বিদায় নিলে চাপে পড়তে হয় তাদের। সেখান থেকে প্রথম সেশনের বাকি সময় সাকিব আল হাসান-মুমিনুল হকের দৃঢ়তাতেই পার করে স্বাগতিকরা।

বাজে ফর্মে আগের দুই টেস্টের একাদশে মুমিনুল সুযোগ পাননি। আর সেই মুমিনুলই ভারতের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট দিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন। আগের ৯ ইনিংসে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে না পারা এই ব্যাটার তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ১৬তম ফিফটি।

সাকিব-মুমিনুলের আগে উদ্বোধনী জুটি প্রথম ঘণ্টায় বিনা উইকেটে যোগ করেছে ৩৭ রান। আর দুই রান যোগ হওয়ার পর ১৪তম ওভারে জাকিরকে ফিরিয়ে এই জুটি ভেঙেছেন উনাদকাট।

উনাদকাটের বাড়তি বাউন্সের বলে কাট করতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন জাকির। গ্লাভস ছুঁয়ে বল চলে যায় স্লিপে। তাতে ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে তার বিদায়ে। প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা জাকির ৩৪ বলে ১৫ রান করেছেন।

পরের ওভারে অশ্বিনের বলটি ঠিকমতো বিচার করতে পারেননি শান্ত। পা বাড়িয়ে ডিফেন্ড করেছিলেন। লেগ বিফোরের আবেদনে আম্পায়ার আঙুলও তুলে দেন। পরে রিভিউ নিয়েও শান্ত বাঁচতে পারেননি। জাকিরের পর ফেরা শান্ত ২৪ রান করতে পেরেছেন।

যদিও প্রথম সেশনের শেষটায় দৃঢ় চেতা ব্যাটিং ছিল মুমিনুল-সাকিবের। দুজনের ব্যাটে দ্বিতীয় সেশন সম্ভাবনার ইঙ্গিতও দিচ্ছিল। কিন্তু লাঞ্চ ব্রেক থেকে ফিরে প্রথম বলেই এই জুটি ভাঙে সাকিবের বিদায়ে। ৪৩ রানের জুটি ভাঙলে মুশফিকুর রহিম, লিটন দাসও জুটি গড়ে মুমিনুলকে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু খুব বেশি সতর্ক না হওয়ায় দ্বিতীয় সেশনে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন তারা।

গত টেস্টের মতো এই টেস্টেও সাকিবকে আগ্রাসী রূপে দেখা গেছে। লাঞ্চের পর প্রথম বলে এই আগ্রাসন ধরে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন। উমেশ যাবের বলে সাকিবের ক্যাচ নিয়েছেন চেতেশ্বর পূজারা। তাতে ভেঙেছে ৪৩ রানের জুটি। সাকিব আউট হয়েছেন ১৬ রানে।

৮৩ রানে তৃতীয় উইকেটের পতনের পর প্রতিরোধের নেতৃত্বে থাকেন মুমিনুলই। মুশফিককে নিয়ে দ্রুত গতিতে রানও তুলতে থাকেন তিনি। দলের স্কোর ১৩০ রান হতেই উনাদকাটের বলে পরাস্ত হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন মুশফিকুর রহিম। বল ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে। এই জুটিতে যোগ হয় ৪৮ রান। মুশফিক ফেরার আগে ৪৬ বলে ২৬ রান করেছেন।

লিটন দাসের বেলাতেও দ্রুত শট খেলে রান তোলার তাড়না দেখা গেছে। দ্রুত ৪২ রান যোগ করে ফেলেন লিটন-মুমিনুল। কিন্তু থিতু হওয়ার মানসিকতা না থাকায় লিটন ফ্লিক করতে গিয়ে বল তুলে দেন বাতাসে। মিডউইকেটে রাহুলের সহজ ক্যাচে পরিণত হয়ে ২৫ রানে ফিরতে হয়েছে তাকে।

ভারতের বোলারদের মধ্যে উমেশ যাদব ২৫ রানে চারটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৭১ রানে চারটি এবং উনাদকাট দুটি উইকেট নিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ, ভারত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন