ভাসানচর পর্যবেক্ষণে গেলেন ৪০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল

fec-image

নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য গড়ে তোলা আবাসন প্রকল্প দেখার জন্য উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ টি ক্যাম্প থেকে ৪০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল শনিবার সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রওয়ানা হয়েছে। তারা সেখানকার সার্বিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ শেষে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ফিরবেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার।

আরআরআরসি মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, প্রতিনিধি দলে যারা রয়েছেন তারা সকলেই কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ
বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি, মাঝি ও মসজিদের ইমাম। প্রতিনিধিদল ভাসানচর আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। তাঁরা সেখানে থাকা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানবেন এবং ফিরে এসে রোহিঙ্গাদের কাছে সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরবেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কক্সবাজার থেকে সড়কপথে চট্টগ্রাম যাবেন। তারপর নৌবাহিনীর জাহাজযোগে তাঁদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ক্যাম্প ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীচক্র সেখানে অধিপত্য বিস্তার করছে। এসব কারণে রোহিঙ্গাদের তুলনামূলক ভালো আবাসনে স্থানান্তর প্রয়োজন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গারা রাজি হলে যেকোনো সময় তাদের ভাসানচরে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন আরআরআরসি মাহবুবুল আলম তালুকদার।

এদিকে প্রতিনিধিদলের থাকা উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন-বালুখালী ক্যাম্প-৯ এর ব্লক আই-টু এর বাসিন্দা নূর আলম, বালুখালী ক্যাম্প-১০ এর ব্লক জি ২২্#৩৯;র নূর মোহাম্মদ, ক্যাম্প ১১ এর হেড মাঝি মোঃ ওসমান, ব্লকমাঝি দিল মোহাম্মদ ও গোল ফারাজ, ক্যাম্প ১২ ময়নার ঘোনা হেডমাঝি আব্দুর রহিম, ব্লকমাঝি নূর হোসাইন ও নূর জাহান, ক্যাম্প ১৯ বর্মপারা হেডমাঝি মুজি উল্লাহ, ব্লকমাঝি মোঃ হাবিবুর
রহমান,নূর মোস্তফা ও মো: রফিকসহ বিভিন্ন ক্যাম্পের ৪০জন।

এদেরকে শুক্রবার নিয়ে এসে উখিয়ার টিভি রিলে কেন্দ্র সংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়৷ কোভিড-১৯ ঝুঁকি থাকায় স্বাস্থ্য পরিক্ষা শেষে শনিবার ভোরে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সশস্ত্র বাহিনী।

জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের ভাসানচরে সরকার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করেছে, যাতে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করতে পারবে। আবাসন প্রকল্প ঘিরে প্রায় ১৩ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার, প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও চিকিৎসা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।

কিন্তু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও জাতিসংঘের সম্মতি না থাকায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে ক্যাম্পে ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরের পরিবর্তে খোলামেলা স্থানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে সরকার। সংস্থাগুলো সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং স্বেচ্ছায় স্থানান্তরের শর্ত আরোপ করেছে।

বর্তমানে ৩০৩ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে বসবাস করছে, যাদের বিভিন্ন সময় সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচারের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার করেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টের পরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে। ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সরকার ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন