মহালছড়িতে পরিবেশ, ফসলী জমি ও বনাঞ্চল ধ্বংস করে অবাধে চলছে ইটভাটা

Mahalchari brickfeild picture

মহালছড়ি প্রতিনিধি :

বর্ষা শেষ হয়ে শীতের বার্তা আসতে না আসতেই খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়িতে শুরু হয়ে গেছে পাহাড়ী বনাঞ্চল ধ্বংস করে ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানোর মহা প্রস্তুতি। ফসলী জমি ধ্বংস আর জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মূখে ঠেলে দিয়ে এ কর্মকাণ্ড প্রতি বছর চলে আসলেও অবৈধ ইট ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ নেই। আইন প্রয়োগকারী প্রশাসন যেন দেখেও পর্দার অন্তরালেই নীরব দর্শকের ভূমিকায় পালন করে আসছে বছরের পর বছর।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৪ সাল থেকেই লাইসেন্সবিহীন ৩টি ইট ভাটায় সরকারী নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে অবাধে পাহাড়ের সংরক্ষিত বাগানের কাঠ পোড়ানোর কাজ থেমে না থাকলেও প্রশাসনের ও আইনের দিক থেকে কোন বাধায় ছিল না। নেওয়া হয়নি অমান্যকারী অবৈধ ইট ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা।

১টি ভাটায় পাকা ১২০ ফুটের চিমনী হলেও অপর ২টিতে টিনের ১০-২০ ফুটের “নিষিদ্ধ চিমনী” দিয়েই চলে আসছিল ইটভাটা। অবাধে শতভাগ কাঠ পুড়িয়ে আইন লঙ্ঘন করার পরও অজ্ঞাত কারণে নীরব ছিল প্রশাসন।

ইতোমধ্যে ফসলী জমিতেই ইট ভাটা ও ইট তৈরির কাজ চলছে। মজুদ করা হচ্ছে জ্বালানী হিসেবে বনাঞ্চলের বড়-ছোট পাহাড়ী কাঠ। পোড়ানো হবে কোটি কোটি টাকার পাহাড়ের বনজ সম্পদ।

সম্প্রতি জরিমানা আদায়ের শর্ত সাপেক্ষে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর নিদের্শনা আসলেও তাও মানছে না ভাটার মালিকরা। ভাটা গুলোতে কয়লার স্থলে কাঠ পোড়ানোই পরিবেশ দুষণ, সংরক্ষিত এলাকায় ইটভাটা না করার নির্দেশনাসহ সরকারী আদেশের তোয়াক্কা করছেনা এ এখানকার ভাটার মালিকরা।

ইট তৈরীতে গাছ পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন (১৯৮৯) এবং এর সংশোধনী অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও তাতে কর্ণপাত নেই কারো। ইট ভাটার এক মালিক জানান, প্রশাসনসহ জেলার সকল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই চলছে ইট ভাটা।

সংরক্ষিত এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করলে পাঁচ বছরের কারাদন্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) বিল-২০১৩’ পাস হয়েছে। নতুন এই আইনে ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, আবাসিক,সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা,সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর,সরকারী বা ব্যাক্তি মালিকাধীন বন,অভয়ারণ্য,বাগান বা জলাভূমি,কৃষিপ্রধান এলাকা এবং পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। তবে এ সব মানছেনা কেউ। প্রশাসনের নাকের ডগাই এ সব নিষিদ্ধ কাজ চললেও অজ্ঞাত কারনে তারা নীরবতা পালন করে আসছেন।

বিদ্যমান আইনে পার্বত্য এলাকায় অর্ন্তভুক্ত না থাকলেও নতুন আইনে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, সনাতন পদ্ধতির ইটভাটার মাধ্যমে অতিমাত্রায় পরিবেশ দুষণ করা হচ্ছে। তাই পরিবেশ বিপর্যয রোধ করে ইট প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে গতিশীল ও প্রায়োগিক করতে এই বিল আনা হয়েছে। তারপরও অপ-তৎপরতা কমেনি।

অন্যদিকে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ফলে পরিবেশের সুদুরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বিধায় সরকার নীতিগতভাবে সনাতন পদ্ধতির ইট-ভাটার ছাড়পত্র প্রদান বন্ধ ঘোষণা করেছে। সে আলোকে সনাতন পদ্ধতির ইট-ভাটার জন্য আর কোন ছাড়পত্র প্রদান করা হচ্ছে না বলে সুত্র জানায়।

এ বিষয়ে মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশফাকুল নুমান বলেন- জেলা প্রশাসক,পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের কর্মকতা ও স্থানীয় গন্যমান্যসহ স্থানীয় ইটভাটার মালিকদের সমন্বয়ে ২৭ ডিসেম্বর খাগড়াছড়িতে বৈঠক হবে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বিধি মোতাবেক ইটভাটা চালু হলেও মাঠে কাজ করবে ভ্রাম্যমান আদালত। আইন অমান্য করা হলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ শাস্তি মুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন