মাটিরাঙ্গায় প্রশাসনের নীরবতায় বিপন্ন সবুজ পাহাড়

09.10

মাটিরাঙ্গা সংবাদদাতা :

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতার সুযোগে বিপন্ন হচ্ছে একর পর এক সবুজ পাহাড়। সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ পাহাড়। ধীরে ধীরে বৈচিত্রময় জীব-জন্তুর নিরাপদ স্থানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। হারিয়ে যেতে বসছে মাটিরাঙ্গা বিস্তীর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ ও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। অপরিকল্পিত ভাবে পাহাড় কাটার ফলে যেকোন ধরনের ভূমি ধ্বসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাঁদের আশঙ্কা, এ ভাবে বে-আইনি পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে হুমকির মুখে পড়বে এখানকার সবুজ অরণ্য।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় থানা পুলিশের নাকের ডগায় বিনা বাধায় চলছে পাহাড় কাটা। স্থানীয় মো: ইয়াছিন নামক এক ব্যাক্তি বাড়ি তৈরীর জন্য পাহাড় কাটছেন। প্রতিদিন ৭/৮ জন শ্রমিক গত ১২/১৪দিন ধরে কোন ধরনের বাঁধা ছাড়াই পাহাড়টি কেটে সমতল করছেন। আর পাহাড় কেটে সমতল করতে গিয়ে প্রচুর বনজ ও ফলজ বৃক্ষ নিধন করছে শ্রমিকরা। নিজের নাম প্রকাশ করতে অনিহা প্রকাশ করে এক শ্রমিক বলেন, আমরা কাজ করে খাই, কোন আইন বুঝিনা। তবে একাধিকবার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে বলেও জানায় এ শ্রমিক। তবে মালিক পক্ষের সাথে কি কথা হয়েছে তা জানাতে পারেনি।

একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও পাহাড় কাটার হোতা মো: ইয়াছিনকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে তার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছোট ছেলে মোহাম্মদ ইউছুফ বলেন, আমরা অবৈধ ভাবে পাহাড় কাটছিনা। বাড়ি করার জন্যই পাহাড়টি কাটছি। অবৈধ বলতে কি বুঝাতে চাইছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাহাড়টি আমাদের নিজের। এটা অন্য কারো নয়। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা নিজেরে পাহাড়ই কাটছি তাই কোন ধরনের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।

এবিষয়ে তবলছড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি এসআই গোলাম মোরশেদ সরকার বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা। তবে বন্ধ করে দেব। আপনি না জানলে কিভাবে বন্ধ করবেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি পুজা ও গরু বাজার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। বিষয়টি পরে দেখবো। নিজেদের নাম ও পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয়রা জানায়, এসআই গোলাম মোরশেদ সরকারের সহযোগিতায় পাহাড়টি কাটা হচ্ছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) অনুযায়ী পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ হওয়া স্বত্বেও এখানে পরিবেশ আইনের কোন প্রয়োগই চোখে পড়ছেনা। ফলে অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটা যেন থামছেনা বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে পুলিশের ছত্রছায়ায়। অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটা বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে অবহিত করা হলে অজ্ঞাত কারনে কোন ব্যবস্তা নেয়নি প্রশাসন।

স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাহাড় কাটা পরিবেশ আইনে সর্ম্পূণভাবে নিষিদ্ধ হওয়া স্বত্বেও তবলছড়ির বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার খবর শুনেছি। তিনি পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী বলেও মনে করেন।

এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকাউল বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি আমি জানিনা। তবে এবিষয়ে খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন