মানিকছড়ির প্রথম গ্র্যাজুয়েট ও শিক্ষানুরাগীর শেষ কর্মদিবসে আবেগাপ্লুত

fec-image

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়ি উপজেলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট ব্যক্তিত্ব ও তিনটহরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মো. আতিউল ইসলাম(এম.এ) গতকাল ছিল চাকরী জীবনের শেষ কর্মদিবস। শেষ সময়ে সহকর্মীদের নিয়ে অনাড়ম্বর পরিবেশে আলোচনা তিনি কর্মজীবনের স্মৃতিচারণে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আর উপজেলার শিক্ষানরাগী, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পরোক্ষ সংগঠকের চাকরীবিধি অনুযায়ী বিদায় হলেও স্কুল কমিটি খন্ডকালীন হিসেবে আগামী দুই বছর নিয়োগ বাড়িয়েছে তাঁর।

কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ছাতিয়ানী গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবার মো. আলী আহম্মদ ও ছামিনা বেগমের ৫ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে মেঝ পুত্র মো. আতিউল ইসলাম ১৯৬২ সালের ৩ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শেষে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার পশ্চাৎপদ জনপদ সাপমারা গ্রামে পরবর্তীতে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন এই সম্ভ্রান্ত পরিবার।

জনপদে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় পাশ্ববর্তী চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮০সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়ে ১৯৮৬ সালে সামাজিক বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাস করেন।

এদিকে পিতার স্থায়ী বসবাস করা পশ্চাৎপদ জনপদ মানিকছড়ি উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবক ১৯৮০-১৯৯২ সালে উপজেলায় একাধিক মাধ্যমিক ও একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় মেধা ও শ্রম বিনিময়েএগিয়ে আসেন। ১৯৮৬ সালে অর্নাস ও মাস্টার্স শেষে অনগ্রসর উপজেলায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে উপজেলার প্রথম মাধ্যমিক রাণী নিহার দেবী উচ্চ বিদ্যালয়ে স্ববেতনে চাকরী শুরু করলেও নিয়োগ জটিলতায় তা ভেস্তে যায়! পরে এই শিক্ষানুরাগী নিরাশ না হয়ে নিজ উদ্যোগে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন শেষ কর্মস্থল তিনটহরী উচ্চ বিদ্যালয়। যা ১৯৯৮ সালে এমপিও ভুক্ত হয়। এই কর্মময় জীবনে উক্ত প্রতিষ্ঠান ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৬৫৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করে অনেকে সরকারি, বেসরকারি চাকরীতে কর্মরত আছেন। এই শিক্ষানুরাগী, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্বের পারিবারিক জীবনে স্ত্রী ও ৪ কন্যা সন্তান রয়েছেন।

এদিকে এই মহতি ও শিক্ষানুরাগীকে উপজলাবাসী বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের পরোক্ষ সংগঠক হিসেবেও মূল্যায়িত করেন। এ প্রসঙ্গে উপজেলার সাবেক ও সফল স্বর্ণপদক প্রাপ্ত তিন তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান এবং যোগ্যাছোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম.কে.আজাদ বলেন, এ অঞ্চলের প্রথম গ্র্যাজুয়েট এবং শিক্ষানুরাগী আসলেই একজন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পরোক্ষ সংগঠক ছিলেন। দেশপ্রেম ও শিক্ষার প্রতি তাঁর ভালোবাসা স্মরনীয়। তাঁর জায়গা পূরণীয় ব্যক্তি এই জনপদে এখনো জন্মায়নী।

শিক্ষকতার শেষ কর্মজীবনে মো. আতিউল ইসলাম বলেন, দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকাকীন সময়ে আমি প্রায় ১০ বছর বয়সী শিশু হলেও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আমার বড় ভাই সাবেক সেনা সদস্য মনু মিয়া ও সেজ ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ধনা মিয়ার মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধকৌশল, অভিযান, অস্ত্র আনা-নেওয়ার দৃশ্য দেখেছি এবং মুক্তিবাহিনীকে (বাড়ির আশে-পাশে) যুদ্ধকালীন সময়ে অস্ত্র, গোলাবারুদ, মেশিনগান, রকেট এগিয়ে দেওয়া, রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া, খাবার সরবরাহ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।

এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একাধিকার সভা-সমাবেশে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। বয়স কম থাকায় সরাসরি যুদ্ধে নিজেকে জড়াতে পারিনি। তবে এই ভূখন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা আজও পরাধীন থাকতাম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকেই দেশপ্রেম মানবতাবোধ, শিক্ষাদীক্ষায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে শিখেছি। সব মিলিয়ে আমি একজন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ। আমি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সুখী। অবসর জীবনেও শিক্ষা ও মানবতা নিয়ে কাজ করব।

বিশেষ করে আমার নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন হিসেবে আরও দুই বছর কমিটি আমাকে রেখে দেওয়ায় দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে এলাকার জন্য কাজ করবো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন