উখিয়ায় এনজিওকর্মীর মৃত্যু রহস্যজনক!

fec-image

গেল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালীর জামতলী এলাকার হাফেজ নুরুল ইসলামের ভাড়া বাসা থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ফাতেমা খাতুন (২৩) নামের এক এনজিওকর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে ওই এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে নানান কৌতুহল দেখা দিয়েছে মানুষের মাঝে। তবে ওইদিন রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী বিল্লাল হোসেনকে হেফাজতে নিয়েছে উখিয়া থানা পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় এনজিওকর্মীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এটি কি হত্যা না আত্মহত্যা সেটা তদন্তের পর জানা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২ মার্চ বুধবার সরেজমিনে গেলে বিভিন্ন তথ্য ওঠে আসে।

আজ থেকে গত ৭ মাস আগে থাইংখালীর জামতলী এলাকার বাসিন্দা হাফেজ নুরুল ইসলামের বাসার এক কক্ষ বিশিষ্ট ৪ নাম্বার রুমে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া থাকা শুরু করে ফাতেমা-বিল্লাল দম্পতি। তবে তাদের বিয়ের বিষয়ে বাড়ির মালিক কাগজপত্র দেখে সন্দেহ করলে পরে মেয়ের বাড়ি থেকে ফাতেমার বাবা-মা তাদের ভাড়া বাসায় আসলে বাড়ির মালিক নিশ্চিত হয় যে, তারা বিবাহিত। তবে এই দম্পতির কোনো সন্তানসন্ততি নেই।

নিহত ফাতেমা খাতুন জামালপুরের ভারুয়াখালী ঘোড়াধাপ এলাকার আলাল উদ্দিনের মেয়ে এবং বিল্লাল হোসেন টাঙ্গাইল জেলার জোরদিগির পূর্বপাড়ার নান্নু মিয়ার ছেলে।

জানা গেছে ফাতেমা খাতুন টেকনাফ উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এমএসএফ হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্বামী বিল্লাল হোসেনও উখিয়ার জামতলী অস্থায়ী ক্যাম্পে এমএসএফ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।

তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে পুলিশের নির্দেশে রুমের দরজা তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ওই রুমের দরজার কাছে যেতেই দেখা যায় ট্যাপ লাগানো প্রিন্ট করা একটি ছবি। সেখানে লিখা আছে বিল্লাল-ফাতেমা দম্পতির ভালোবাসা নিদর্শন। ইংরেজি অক্ষরে লিখা আছে Happy Anniversary, Hubby. Thanks your for all the love and special care.!
(Billal+Fatema). কিছুদিন আগেই নাকি তারা বিবাহবার্ষিকী পালন করে।

এটি দেখে যে কারোরই মনে হতে পারে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল। কিন্তু ঘটে যাওয়া চিত্র তার ঠিক বিপরীত মেরুতে।

স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, বিল্লাহ হেসেন মাঝেমধ্যে নেশাদ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত ছিলেন। অনেকেই ধারণা করছেন হয়তো এই বিষয়কে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে ঘটনার দিন রাতে পুলিশকে দেওয়া স্বামী বিল্লালের বক্তব্যের বরাত দিয়ে বাসার মালিক ও তার ছেলে বর্ণনা দেন, ঘটনার দিন বিল্লাল হোসেন কক্সবাজার শহরে গিয়েছিলেন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে। বিল্লাল হোসেনের স্বীকারোক্তী অনুযায়ী পরে সে বাসায় ফিরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে। তার কথা অনুযায়ী সে ঘরে ঢুকেই স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়। কিন্তু এ বিষয়টি বিল্লাল তাৎক্ষণিক জানায়নি বাড়ির মালিককে। বাড়ির মালিককে সে ফোন দেয় রাত ২টা বেজে একটু পরে। তবে এরই মাঝে থ্রিপল নাইনে ফোন করে পুলিশকে খবর দেয় বিল্লাল নিজেই।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, কথাগুলো যদি সত্যিই হয়, তাহলে এতবড় ঘটনা ঘটার পরও বিল্লাল বড় চিৎকার করে আশপাশের লোকজন কিংবা বাড়ির মালিককে কেন ডাকেনি! রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত ২টা এই মাঝখানের সময়টায় সে কী করছিল! আর রাত সাড়ে ১১টার সময় বিল্লাল তাদের রুমের দরজা খোলা পেলো কীভাবে? নাকি আগে থেকে দরজা খোলা রেখেই গলায় ফাঁস দেয় ফাতেমা?

তবে বাসার মালিক নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘটনার ২ সপ্তাহ আগে টেকনাফের উনচিপ্রাংয়ে ফাতেমার কর্মস্থলে আলাদা বাসা নেয় সে। এতদিন স্বামী বিল্লাল আগের রুমে একাই ছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু ঘটনার মাত্র দুদিন আগেই ফাতেমা আগের বাসায় আসে। আর এ দুদিনের মাথায় এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।

এর আগে ঘটনার ব্যাপারে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ জানান, থানা পুলিশের কল পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি মাটির সাথে লাগোয়া গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় মহিলা ঝুলে আছে। স্বামী পাশে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে আছে। এটা হত্যা না আত্মহত্যা বোঝা বড় দায়।

স্থানীয় পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্বামী বিল্লাল হোসেনের খবরের ভিত্তিতে পুলিশ এসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে লাশটি উদ্ধারপূর্বক মর্গে পাঠিয়ে দিয়েছে। স্বামীকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি আত্মহত্যা এটি সরাসরি বলা যায় না। এই ঘটনার যথাযথ তদন্তের ভিত্তিতে দোষীর শাস্তির দাবি জানান তিনি।

এদিকে ঘটনার ব্যাপারে নিহতের পরিবারকে জানানো হয়েছে। উখিয়া থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে নিহতের পরিবার ঘটনার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন