মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির শব্দ, আতঙ্কে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

fec-image

বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে গোলাগুলির শব্দ চার দিন বন্ধ থাকার পর (১৬ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার সকাল থেকে ফের থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

এ ঘটনাকে বর্তমানে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের মিয়ানমার সীমান্তের এপারে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পাশাপাশি নবস্থাপিত পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া পরীক্ষার্থীদের মাঝে বেশি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে তুমব্রু বাজার ব্যবসায়ীরা কিছুটা সহনশীল হলেও চাকমা ও তঞ্চঙ্গা নৃ-গোষ্টির লোকজন আতঙ্ক গ্রস্থ হয়ে পড়ে।

বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশাফাঁড়ি ও উত্তরপাড়ার থেকে ঘুমধুমের পরীক্ষা কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়া অংপ্রু তঞ্চঙ্গ্যা, রোকেয়া বেগম ও রহিমা আক্তার জানান, তাদের আজকের এসএসসি পরীক্ষা ছিলো। ৪ দিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় শুনতে পান প্রকট আওয়াজে মিয়ানমার বাহিনীর গোলাগুলি। পরীক্ষা দিতে তারা আতঙ্কের মাঝেই বাড়ি থেকে বের হয়েছে। রাতে পড়ার টেবিলে মিয়ানমারের গোলার শব্দ তাদের আতঙ্কিত করলেও কিছুটা সহনীয় ছিলো। কেননা বাড়ির সবাই তখন পাশে ছিলো। তবে সকালে গোলাগুলির আওয়াজ ভেদ করে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে একা পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় অনেক ভয় তাদের তাড়া করে। আর তাও প্রথম পরীক্ষা। দুই ভয় তাদের আতঙ্ক গ্রস্থ করে।

তুমরু মধ্যম পাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম, তুমরু বাজার ব্যবসায়ী বদিউল আলম জানান, বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অসংখ্য গোলার আওয়াজ তারা শুনেছেন। অনেক বড় আওয়াজের গোলার শব্দ ১০টির উপর। যা তারা ধারণা করছে মর্টার শেলের আওয়াজ।

তারা আরো জানান, মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে তার জেড বিমান আসার আওয়াজ শুনে বাড়ির উঠানে বের হয় তারা। তবে তা ছিল তুমব্রু সীমান্তের ওপারে। তবে তুমব্রু গ্রামের খুব সন্নিকটে।

তারা আক্ষেপ করে বলেন, কেন তারা এখানে বসতঘর করলেন। কারণ, কখন তাদের বসতবাড়ি বা এলাকায় গোলা এসে পড়ে। কেননা গত ২৪ আগস্ট ও ৩১ আগস্ট তাদের গ্রামে মিয়ানমারের গোলা এসে পড়ায় তারা সে থেকে চরম আতঙ্কে থাকে সব সময়। এভাবে বৃদ্ধা জাফর আহমদ, তাবু তালেব ও শফিক মিয়াসহ সকলের একই অনুভূতি প্রকাশ করে।

তুমব্রু কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আজিম উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালের গোলার আওয়াজে তার এবং তার মুসল্লিদের মনে চরম আতঙ্ক দানা বাঁধে। বুক কেঁপে উঠে তাদের। মসজিদটি তুমব্রু সীমান্ত থেকে মাত্র দেড়শ গজ দূরত্বে অবস্থান। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় নাগাদ এক নাগাড়ে গোলার শব্দ তিনি শুনেছেন। যাতে মুসল্লিরা কিছুটা ভয় পান।

বাইশফাঁড়ি ওয়ার্ড়ের গ্রাম পুলিশ আবদুজ্জাবার বলেন, তিনি রাতদিন এ সব গোলার শব্দ শুনতে পান। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নতুন করে গোলাগুলির আওয়াজ যেন বেশি আতঙ্ক তার মাঝে।

নো ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাসরত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, আজকে শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। আসলে এ ‘গুলিখেলার’ শেষ কবে হবে, তার কোনও হিসেব নেই। আমাদের শিবিরের শিশু ও নারীরা ভয়ে থাকে। আর আমরা গোলাগুলির শব্দ শুনতে শুনতে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘সীমান্তে প্রায় একমাস ধরে চলছেই গোলাগুলি। কোনও পরিবর্তন আসেনি। মিয়ানমার আইন লঙ্ঘন করে চলছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় আমার এলাকার মানুষের অনেক সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে চাষিরা কষ্টে আছেন। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।’

নো ম্যান্স ল্যান্ডে দায়িত্বে থাকা বিজিবির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে জানান, সীমান্তের অবস্থা খুব খারাপ। এখানে লোকজনের চলাচলে সতর্ক করা হয়েছে। জরুরি কাজ না থাকলে এখানকার লোকজনকে ঘোরাফেরা না করতে বলা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আতঙ্ক, এসএসসি পরীক্ষার্থী, গোলাগুলি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন