রোহিঙ্গা গণহত্যা সম্পন্ন, মিয়ানমারে এখনও কাটেনি নিরাপত্তা ভীতি
দুই সপ্তাহ আগেও বাংলাদেশের কক্সবাজারে তুলনামূলক নিরাপদে থাকার জন্য মিয়ানমারে থেকে যাওয়া কিছু রোহিঙ্গার মধ্যে কয়েকজন সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করেছিল। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হওয়ার ১৬ মাস পর এবং গণহত্যার ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে মিয়ানমারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায়ের দুই মাস পর এমন ঘটনাটি ঘটে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমারে এখনো রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ভীতি এখনো দূর হয়নি। যারা সীমান্ত অতিক্রম করতে পেরেছে, তারা ভাগ্যবান। এখনো রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই সম্ভবত আরো অনিশ্চিত। তারা এখন মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত লোকদের জন্য তৈরী ক্যাম্পে অবস্থান করছে। সামরিক বাহিনীর শুদ্ধি অভিযানের শিকার হয়ে ওইসব ক্যাম্পে সামরিক বাহিনীর তদারকিতেই অবস্থান করছে।
জাতি নির্মূল অভিযান ও কোভিড-১৯ মহামারীতেই শেষ নয়, এখন আবার বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছ মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে যে মহামারীর ফলে বিদ্রোহী গ্রুপগুলো এখন অনেক কম সঙ্ঘবদ্ধ থাকবে এবং হামলার মুখে অনেক নাজুক হবে। তবে মনে হচ্ছে, মিয়ানমার বাহিনীর এই হিসাবে ভুল হয়েছে।
যারা রোহিঙ্গা সঙ্কট পর্যবেক্ষণ করছেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, তাদের সবাই জানে যে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের জন্য হুমকি হয়ে আছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রায় হওয়ার পরও। এখন বোঝা যাচ্ছে, রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িঘরে ফিরতে পারবে না। কারণ এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে যে মিয়ানমার শাসন করতে অভ্যস্ত জাতীয়তাবাদী সামরিক বাহিনী ও অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের মধ্যে এ বাপারে ভয়ঙ্কর আঁতাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সকল অ-বামারের প্রতি, সাধারণভাবে সীমান্তবর্তী জাতিগোষ্ঠী ও বিশেষভাবে মুসলিম রোহিঙ্গাদের প্রতি, সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের বৈরিতা এখনো মিয়ানমার সরকারের মধ্যে চালিকাশক্তি হিসেবে বিরাজ করছে।
এদিকে ধারণা করা হচ্ছে যে পুরনো পাওয়ার এলিট এখন সু চির গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সাথে পুরোপুরি খাপ খাইয়ে নিয়েছে। অবশ্য তারা উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সমর্থনও সাথে করে নিয়ে গেছেন। এ সন্ন্যাসীরা এমনকি ওই জেনারেলদের চেয়েও বেশি করে রোহিঙ্গদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।
আমরা আবারো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাস্তবতা স্বীকার করে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তারা যেন স্বীকার করে নেন যে বাংলাদেশের পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এখনো দেশ ফিরে যায়নি। কক্সবাজারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তাদের অবস্থান সাময়িকভাবে না ধরে স্থায়ী ধরে নেয়া উচিত। কারণ রোহিঙ্গা গণহত্যা কার্যত সম্পন্ন হয়ে গেছে। অন্য কিছু ভাবার অবকাশ এখন আর নেই।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সাহায্য করতে চায়, তবে তাদেরকে অবশ্যই বাংলাদেশকে সহায়তা করতে হবে এবং কক্সবাজারকে বাসোপযোগী স্থানে পরিণত করতে হবে রোহিঙ্গাদের জন্য, যাতে তারা বাংলাদেশের জনসাধারণ ও সমাজের কাছে মিশে যেতে পারে। অবশ্য তারপরও রোহিঙ্গাদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, তার বিচার চাইব আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে। তবে তার আগে এই মুহূর্তে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে তারা বেঁচে থাকবে এবং তারা মর্যাদা নিয়েই যেখানে থাকছে সেখানে থাকতে পারবে।