মিয়ানমার থেকে অবৈধ পথে চিংড়ি আমদানী নিষিদ্ধ: ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত


মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ থেকে
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত উপকূলীয় এলাকার দুদেশের চিংড়ী ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারীরা বিদেশে চিংড়ি রপ্তানী করে কোটি কোটি বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জন করতো এবং এ উপার্জনে বাংলাদেশী টেকনাফ সীমান্তের চিংড়ী ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর অগ্রীম টাকা দাদন হিসাবে মিয়ানমারের আরাকানের নাফ-নদীর উপকূলীয় এলাকার চিংড়ী ঘেরের মালিকদের প্রদান করতো। বিগত চার বছর ধরে এধরনের নিয়ম চলে আসছিল।

মিয়ানমারে চিংড়ী রফতানী অবৈধ হলে ও বাংলাদেশী চিংড়ী মর্মে ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় কর্তৃক বৈধ করে নিত। ১৯৯৫ সালে ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমার পর্যায়ে দুদেশের স্থল বন্দর চালু হবার পর সর্বপ্রথম চিংড়ী আমদানীর মাধ্যমে এ যাত্রা শুরু হয়েছিল। এতে ব্যবসায়ীরা চিংড়ী আমদানীত লাভবান না হওয়াতে তারা মিয়ানমার থেকে চিংড়ী আমদানী থেকে হাতগুটিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে অবৈধপথে চিংড়ী আমদানী করত।

উল্লেখ্য স্থল বন্দর চালু হবার পূর্বে দুদেশের সীমান্ত এলাকার চিংড়ী ব্যবসায়ী এবং উৎপাদনকারীর মধ্যে মধুর সম্পর্ক ছিল। তারই প্রেক্ষিতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতির মাধ্যমে টেকনাফ সীমান্তে চোরাইপথে চলে আসতো। এ ধারাবাহিকতা দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছিল। যেহেতু মিয়ানমারের বিস্তীর্ন আরাকান প্রদেশের নাফ-নদীর উপকূলীয় এলাকার চিংড়ী উৎপাদনকারীরা বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের উপর একমাত্র নির্ভরশীল। মিয়ানমারের চিংড়ী বিদেশে আমদানী করার ব্যবস্থা না থাকাতে তারা এসব চিংড়ী বাংলাদেশী চিংড়ী ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বিদেশে যৌথভাবে রপ্তানী করতো। সেহেতু বাংলাদেশী চিংড়ী ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা অগ্রিম অর্থ মিয়ানমারের চিংড়ী ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারীর কাছে পূঁজি খাটাতো। এ দুদেশের সীমান্ত নাফনদীর উপকূলীয় এলাকার চিংড়ী ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারীর মধ্যে এ ধরনের প্রথা চলে আসছিল।

কিন্তু মহাজোট তথা আঃ লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমারের চিংড়ী সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে না এনে একমূখী হয়ে চিংড়ী আনার ব্যবস্থা করে সীমান্তের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মিয়ানমারের চিংড়ী টেকনাফ পৌর এলাকার কায়ুকখালী খাল দিয়ে চৌধুরী পাড়ায় বৈধভাবে চলে আসতো এবং বিভিন্ন দেশে এসব চিংড়ী রপ্তানী হতো। এ ধারাবাহিকতা গত সাড়ে চার বছর ধরে এ ধরনের প্রতা চলে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সরকারের মেয়াদ শেষে গত ১৯ জুলাই হতে মিয়ানমারের চিংড়ী বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তের চৌধুরী পাড়া চিংড়ী রপ্তানী মওজুদ কেন্দ্রে আসার নিষেধাজ্ঞা আরোপিত করে এবং টেকনাফ সীমান্ত রক্ষী বিজিবি নাফ নদী থেকে পৃথক অভিযানে মিয়ানমার থেকে আসা চিংড়ীও নৌকাসহ কয়েকবার আটক করে। এ নিয়ে চিংড়ী ব্যবসায়ীদের বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান মিয়ানমারের আরাকানে চিংড়ী উৎপাদনকারীর কাছে কোটি কোটি টাকা অগ্রিম পুঁজি খাটিয়েছে চিংড়ীর জন্য। কিন্তু হঠাৎ করে চিংড়ী আসা বন্ধ সংশ্লিষ্ট সীমান্ত রক্ষী বিজিবি কর্তৃক আটক আরোপিত হওয়ায় চিংড়ী ব্যবসায়ীরা এখন মাথায় হাত দিয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের পূঁজি খাটানোর অর্থ আদৌ ফিরে পাবে কিনা? এটাই তাদের সংসয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিংড়ী ব্যবসায়ী জানান, টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীরদ্বীপ থেকে নাইথংপাড়া পর্যন্ত মিয়ানমারের চিংড়ী প্রবেশের সীমান্ত রক্ষী বিজিবির কড়া নজরদারী এবং আটক অভিাযান অব্যাহত থাকলে ও একই সীমান্তের দমদমিয়া থেকে উখিয়া পালংখালী পর্যন্ত বিস্তীর্ন নাফ-নদী অরক্ষিত এবং অবাধে মিয়ানমার থেকে চিংড়ী বিনাবাধায় অবৈধ ভাবে প্রবেশ করছে। এসব চিংড়ী রিসিভিং সেন্টারে আসার পর বৈধ হয়ে যায়।

উল্লেখ থাকে যে, উক্ত সীমান্ত এলাকায় বেঙের ছাতার ন্যায় গজে উঠেছে অহরহ চিংড়ী রিসিভিং সেন্টার। এর একমাত্র উদ্দেশ্য মিয়ানমারের চিংড়ীর উপর। এ ব্যাপারে গত ১ আগষ্ট ৪২ বর্ডার গার্ড বিজিবির অধিনায়ক জাহিদ হাসানের সাথে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমারের চিংড়ী আমদানী নিষিদ্ধ। সুতারাং এ পথে মিয়ানমারের চিংড়ী আর আসবেনা। টেকনাফ কোষ্টগার্র্ড এর দায়িত্বে নিয়োজিত লেঃ কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, টেকনাফ স্থল বন্দরের রাজস্ব কমে যাওয়াতে বানিজ্য মন্ত্রনালয় হতে পরিপত্র আসার পর উক্ত পথে চিংড়ী আসা বন্ধ করে দিয়েছে। টেকনাফ স্থল বন্দরের কাস্টম্স সুপার মোঃ হুমায়ুনের সাথে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনিও একই ধরনের বক্তব্য প্রদান করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন