শান্তির পথে অঙ্গীকার রক্ষা করছে না কেএনএফ

fec-image

বান্দরবানে কেএনএফ কর্তৃক সৃষ্ট বিরাজমান পরিস্থিতি নিরসন করে শান্তি প্রতিষ্টার লক্ষ্যে ২২ জুন, ২০২৩ বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লাকে সভাপতি করে একটি শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। এই শান্তি কমিটির সাথে প্রথমে কয়েক দফা অনলাইন বৈঠকে মিলিত হয় কেএনএফ নেতৃবৃন্দ। অনলাইনে প্রথম বৈঠকটি হয় ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই। সর্বশেষ সরাসরি বৈঠক হয় ৫ মার্চ, ২০২৪ তারিখে। ধারাবাহিক আলোচনায় অগ্রগতি এবং পারস্পারিক আস্থা বৃদ্ধির ফলে সরসারি বৈঠকে মিলিত হতে সম্মত হয় কেএনএফ। শুরু থেকেই কেএনএফ অঙ্গীকার করে যে, শান্তি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম চলমান থাকাকালে আর কোনো সশস্ত্র তৎপরতা এবং চাঁদাবাজি কিংবা কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়াবে না তারা। বিশেষ করে ৫ নভেম্বর, ২০২৩ রবিবার বেলা ১১টায় রুমার মুনলাই পাড়ায় বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত শান্তি কমিটির সাথে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর প্রথম মুখোমুখি বৈঠকের পর দুপক্ষের মধ্যে লিখিত এ ধরনের একটি সমঝোতা পত্রে একমত হয়ে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কেএনএফ তাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করছে না। বরং তারা চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ এমনকি নিজ জনগোষ্ঠির মানুষকেও মারধর করার অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে। জেএসএস, ইউপিডিএফের মতো আরেকটি চাঁদাবাজ সংগঠনে পরিণত হয়েছে কেএনএফ। পর্যটকদের মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটিয়েছে। বিশেষ করে, রুমা, থানচিতে চলাচলকারী মোটরসাইকেল, চাঁদের গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহন থেকে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে মারধর, অপহরণ এমনকি গুলি করার ঘটনাও ঘটিয়েছে তারা। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে রুমা এবং বান্দরবানে উপজাতীয় জনগোষ্ঠির মানুষ র‌্যালি এবং মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে ইতোমধ্যে। তবে কেএনএফ সব সময়ই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবী, মূলত জেএসএস তাদের ভাবমর্যাদাকে বিতর্কিত করতে তাদের বিরুদ্ধে এহেন অপপ্রচার চালিয়ে আসছে।

শান্তি কমিটির সাথে তাদের আলোচনায় অশান্তির কার্যক্রমে জড়িত না থাকার অঙ্গীকার করার পরও তাদের কিছু সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ঘটনা নিম্নে তুলে ধরা হলো:

রোয়াংছড়িতে পরিবহন আটকিয়ে চাঁদাবাজি
বিয়ের দাওয়াতে আসা-যাওয়ার পথে চাঁদের গাড়ি ও মোটারসাইকেল আটকিয়ে জোর পূর্বক চাঁদা আদায় করেছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র সদস্যরা। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের অবিচলিত পাড়া থেকে দুর্নিবার পাড়ার মাঝে এ চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে।

ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা জানান, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে প্রায় ৩০টি মোটরসাইকেল নিয়ে রুমা থেকে রোয়াংছড়িতে আসছিলেন তারা। রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের দুর্নিবার বম পাড়া থেকে আধা কিলোমিটার দূরে জঙ্গলে ওঁৎ পেতে থাকা তিনজন বের হয়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। ইউনিফর্ম পরিধান করা ওই তিনজনের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল। এ সময় অস্ত্রধারীরা মোটরসাইকেল প্রতি পাঁচশ টাকা করে চাঁদা আদায় করে ছেড়ে দেয়।

ভুক্তভোগীরা আরো জানান, অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে একই জায়গায় কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যরা আবারো তিনটি চাঁদের গাড়ি এবং প্রায় পঞ্চাশটি মোটরসাইকেল আটকিয়ে রাখে। তবে সকালে যাওয়ার পথে চাঁদা দেওয়ার কথা জানালে গাড়িগুলো তারা ছেড়ে দেয় এবং প্রতি চাঁদের গাড়ি থেকে এক হাজার করে তিনটি গাড়ি থেকে মোট তিন হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে কেএনএফের সদস্যরা। এসময় কেএনএফ সদস্যরা রুমা-রোয়াংছড়ি রাস্তাটি তাদের বলে মোটরসাইকেল চালক এবং সাধারণ জনগণকে জানিয়েছে।

এর দুদিন আগে ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে কেএনএফের ১২ সদস্যের সশস্ত্র দল রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের পরুয়া পাড়ায় হানা দেয়। এসময় ক্যলুংখ্যং পাড়া থেকে পরুয়া পাড়ায় এক আত্মীয়ের কাছে বেড়াতে যাওয়া এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে কেএনএফের সদস্যরা। এছাড়া এ ঘটনাটি নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ ও গণমাধ্যমকে জানালে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ওই ব্যক্তি।

অন্যদিকে ১২ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে রোয়াংছড়ি সদর থেকে রুমায় ফেরার পথে রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নে ৯নং ওয়ার্ডের অবিচলিত পাড়া ও দুর্নিবার পাড়ায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গাড়ি আটকিয়ে রাখে কেএনএফ। এসময় গাড়ি চালককে জঙ্গলের পথে নিয়ে যেতে বাধ্য করে এবং ২৫ মিনিট আটকিয়ে রেখে তাকে ছেড়ে দেয়।

৮ জানুয়ারি, ২০২৪ বিকালে মোটরসাইকেল যোগে রোয়াংছড়ি হয়ে রুমা দিকে যাচ্ছিলেন ফারুক ও মো. শাহ আলম নামে দুই বন্ধু। বিকালে সোয়ানলু পাড়া বালু পাহাড় ব্রিজের উপর তাদেরকে আটকিয়ে কেএনএফ সদস্যরা চাদাঁ দাবি করে। চাঁদা না দিতে চাইলে ধারালো ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে দুই হাজার টাকা কেড়ে নেয়। এসময় তাদের কাছে ছিল ওয়াকিটকি। শুধু তাই নয় কেএনএফ সশস্ত্র গ্রুপের এলাকা বলেও হুমকি দেন তারা। পরে থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন ওই দুই যুবক।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন ধরে রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কে যানচলাচলের সময় সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে কেএনএফ সদস্যরা। সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে প্রতি গাড়ি (মোটরসাইকেল) কিংবা ট্রাক ছাড়াও অন্যান্য যানবাহনের প্রতি ২ হাজার কখনো ৫ হাজার চাঁদা আদায় করছে। এছাড়াও কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা দুই পর্যটকের কাছ থেকে নগদ টাকা কেড়ে নেয় এবং মারধরে ঘটনায় শিকার হতে হয়েছে তাদের।

পাইক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান বৈথাং বম বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে আলোচনা পর সেনাবাহিনী সহযোগিতায় পর গ্রামে ফিরতে পেরেছি। কিন্তু এখন যে চাঁদা দাবিসহ যেসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে এভাবে চলতে থাকলে স্থানীয়দের অনেক সমস্যা সম্মুখীন হতে হবে। আমরা চাই শান্তিভাবে পাহাড়ে বসবাস করতে।

সুয়ানলু পাড়ার বাসিন্দা লালচুম বম বলেন, বালু পাহাড়ের যা দেখলাম সেটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা, যা আমরা কল্পনা করতে পারিনি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ঘটনা বিচ্ছিন্নতাবাদী ছাড়া কেউ করেনি। আমরা চাই সমঝোতা করে আগের মতো পাহাড়ের শান্তি ফিরে আসুক।

ইউপি চেয়ারম্যানকে অপহরণ
রবিবার (১৪ জানুয়ারি, ২০২৪) বিকালে জেলার রুমার কেউক্রাডং থেকে ফেরার পথে পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমাকে বগালেক সড়কে হারমন পাড়া এলাকায় রুংতং ঝিড়ি নামক স্থান থেকে অপহরণ করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। অপহৃত উহ্লামং মারমা (৫০) পাইন্দু ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চান্দাপাড়া বাসিন্দা। তিনি ১ নং পাইন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রুমা উপজেলার চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা জানান, কেউক্রাডং থেকে ফেরার পথে রুংতং ঝিড়ি নামক স্থান থেকে পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমাকে অপহরণ করে কেএনএফের সদস্যরা।

উহ্লাচিং মারমা জানান, বেসরকারি সংস্থা লীন প্রকল্পের কাজে সকালে কেউক্রাডং গিয়েছিল তিনি। কাজ শেষ করে ফেরার পথে তাদের গাড়ি থামিয়ে কেএনএফ সদস্যরা চেয়ারম্যান উহ্লামংকে ডেকে নিয়ে গেছে। কী কারণে অপহরণ করেছে সে ব্যাপারে জাননি না।
পলিপ্রাংশা ইউপি সদস্য অংসা প্রু মারমা বলেন, আমি আর চেয়ারম্যান এক গাড়িতে ছিলাম। কাজ শেষ করে গাড়ি করে রুমা দিকে আসছিলাম। বগালেক এলাকায় কেএনএফের সদস্যরা চেয়ারম্যানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ডেকে নিয়ে যায়। চেয়াম্যানকে রেখে সাথে থাকা অন্যান্যদের ছেড়ে দেয়।

ইউপি চেয়ারম্যান স্ত্রী ঙাং এন ময় বম বলেন, গাড়ি থেকে নামিয়ে আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে কথা বলছিল। কথা শেষে আমার স্বামীকে রেখে দিয়ে সবাইকে গাড়িতে উঠতে বলে। তিনি বলেন, টাকা দিলে আমার স্বামীকে ছেড়ে দিবে বলেছে কেএনএফের সদস্যরা।
পরে অবশ্য চেয়ারম্যানকে ছেড়ে দেয় কেএনএফ।

চাঁদা না পেয়ে যুবককে গুলি করার অভিযোগ
বান্দরবানের রুমায় চাঁদা না পেয়ে উহ্লাচিং মারমা নামের এক যুবককে গুলি করার অভিযোগ উঠে কুকি-চিন ন্যশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) সকালে রুমা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের রিজুক পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আহত উহ্লাচিং মারমা রুমা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের রিঝুক পাড়া গ্রামে মৃত মনাকের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সকালে কেএনএফের ১৭ জন সদস্য অস্ত্র নিয়ে রিজুক পাড়াতে প্রবেশ করে। তাদের চাঁদাসহ কোনোকিছু না দেওয়াতেই গ্রামবাসীর উপর অত্যাচারের পাশাপাশি গুলিবর্ষণ শুরু করে। পাড়াবাসীরা গুলির ভয়ে এদিক সেদিক পালাতে থাকে। এসময় বাড়ির বাইরে থাকা উহ্লাচিং মারমা নামে এক যুবককে উদ্দেশ্যে করে গুলি করে কেএনএফ সদস্যরা। গুলি লেগে ঘটনাস্থলে আহত হন উহ্লাচিং মারমা।
এ ঘটনার ব্যাপারে কেএনএফ জানায়, রাতে জেএসএস সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি জুমঘরে মিটিং করছিল। এ ঘটনা জানতে পেরে কেএনএফ তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালায়। সে সময় জেএসএস-এর একজন সক্রিয়কর্মী আহত হয়।

রুমায় কেএনএফের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
বান্দরবানে রুমায় বিভিন্ন গ্রামবাসীদের উপর কুকি-চিন ন্যশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ কর্তৃক নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও অপহরণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে রুমা সচেতন নাগরিক সমাজ। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) সকালে রুমা বাজারে এ মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে রুমা বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ব্রিজে এসে শেষ হয়। এসময় ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা অর্ধ-শতাধিক নারী-পুরুষ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পাহাড়ের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাইলেও কেএনএফ সন্ত্রাসীরা সেই পরিবেশ অশান্তি সৃষ্টি তৈরি করেছে। পাহাড়ের বসবাসরত নিরীহ মানুষদের গুলি করার হুমকি, হয়রানি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দিন দিন বেড়ে চলেছে। যার কারণের পাহাড়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না। তাদের অত্যাচারের নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরো নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, আমরা চাই সকল জাতিকে নিয়ে শান্তিভাবে বসবাস করতে। কারোর উপর জোর জুলুম দিয়ে বসবাস করতে নয়। কিন্তু দীর্ঘদীন ধরে কেএনএফ সংগঠনকে যে সম্মান দিয়ে এসেছি সে সম্মান পাওয়া তাদের যোগ্য নয়। তাই পাহাড়েরও রুমা উপজেলাতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কেএনএফ বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে প্রতিবাদ করা আহ্বান জানান বক্তারা।

থানচিতে ট্রাকে আগুন দিয়েছে কেএনএফ
বান্দরবানের থানচিতে ট্রাকে আগুন দিয়েছে কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)। রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) বিকাল ৪টার দিকে থানচির বাকলাই সীমান্ত সড়কের ১১ কিলো নামক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, থানচি উপজেলার বাকলাই ১১ কিলো নামক এলাকায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত একটি ডাম্পার ট্রাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা।

থানচি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন মিঞা জানান, বিকেল ৪টার সময় গাড়িতে আগুন দেওয়ার খবর পেয়ে আমার নেতৃত্বে, ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।

থানচিতে পর্যটকদের টাকা-মোবাইল ছিনতাই
বান্দরবানের থানচিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকের কাছ থেকে ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ও ১৫টি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের ‘কেএনএফ’ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) উপজেলার ভেলাকুম পর্যটন স্পটে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনিক মোদক জানান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নাফাকুম পর্যটন স্পটে ভ্রমণে যান দুই ভ্রমণ দলের ২২ জন সদস্য। যার মধ্যে ৪ জন নারী। পরে নাফাকুম ভ্রমণ শেষে ২৫ ফেব্রুয়ারি ভেলাকুম স্পটে ক্যাম্পিং করেন তারা। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ৮ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল তাদের ক্যাম্পে হানা দেয়। পরে তাদের সঙ্গে থাকা ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ও ১৫টি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় তারা। অনিক আরও জানান, সন্ত্রাসীদের যে দলটি তাদের টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের কয়েকজনের পরনে সেনাবাহিনীর পোষাকের মত এবং ব্যাজে ‘কেএনএফ’ লেখা ছিল।

কেএনএফের বিবৃতি
জেএসএস কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) সরকার ও জনগণের মাঝে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে বলে দাবি কেএনএফের। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে কেএনএফের সামরিক শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) ইনফরমেশন অ্যান্ড ইনটেলিজেন্স উইং এর ক্যাপ্টেইন ফ্লেমিং এ কথা জানান।

বিবৃতিতে কেএনএ জানায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে তারা জানতে পেরেছে যে, থানচি উপজেলায় দুষ্কৃতিকারীদের কর্তৃক পর্যটকদের মোবাইল এবং টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে কেএনএফ/কেএনএ নাকি জড়িত তথা ঘটনাটি কেএনএফই ঘটিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে আমরা দ্বৈর্থহীনকণ্ঠে বলতে চাই, উক্ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে কেএনএফ বা তার সশস্ত্র শাখা কেএনএ’র কোনভাবেই সম্পৃক্ততা নেই। আমরা আমাদের কেএনএফ বিবৃতিতে গণমাধ্যমের বরাবরে বলে আসছি সে সব এলাকায় কেএনএ ক্যাডারদের কোনো আনাগোনা ছিল না। তাছাড়া, আমরা আমাদের ক্যাডারদের গেঞ্জিতে কোনো ধরনের কেএনএফ লোগো ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়নি বা মোটেই অনুমোদিত নয়। এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত ও সন্দেহজনকভাবে কেএনএফ-এর সশস্ত্র শাখাকে দোষারোপ করা থেকে সতর্কতার সহিত সকল গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশনের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকারের সাথে শান্তির আলোচনার মাধ্যমে কেএনএফ-এর কার্যক্রম সবসময় শান্তির উপায়ে, জনগণের স্বার্থ চিন্তা করে এবং পাহাড়ে বিদ্যমান অশান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে নস্যাৎ করবার অপচেষ্টা এবং কেএনএফ এর বিরুদ্ধে উঠে পড়া লাগা সকল যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কেএনএফ সব সময় সোচ্চার।

পাহাড়ের বাস্তবতা হলো, কেএনএফের বিবৃতিকে স্থানীয়রা কেউ বিশ্বাসযোগ্য বলে ভাবতে পারছে না। তার কারণ, মোটরসাইকেল, চাঁদের গাড়ি, যাত্রীবাহী বাসসহ সকল ধরনের যানবাহন থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি করছে কেএনএফ। এই চাঁদাবাজি থেকে পর্যটক, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার কেউ যেমন বাদ পড়ছে না, তেমনি তাদের নিজ জনগোষ্ঠির মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। যার কারণে, তারা র‌্যালি করে, মানববন্ধন করে প্রতিবাদ পর্যন্ত জানাতে বাধ্য হয়েছে। নিজ জনগোষ্ঠির মানুষের প্রতি যাদের এই আচরণ, তাদের পক্ষে পর্যটকদের মোবাইল, টাকা ছিনতাই করা তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়।

কেএনএফ অনেক সময় দাবী করে অমুক স্থানে জেএসএসের সন্ত্রাসীদের অবস্থান করার খবর পেয়ে তারা হামলা চালিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোথাও কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপের উপস্থিতি থাকলে সেটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করাই বেসরকারী কোনো সংগঠনের একমাত্র কাজ। আইন নিজে হাতে তুলে নিয়ে সন্ত্রাসীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া আরেকটি সন্ত্রাসের নামান্তর।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে অভিজ্ঞ মহলের মতামত হচ্ছে, শান্তির পক্ষে কেএনএফ তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করছে না, বরং উল্টো বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে বিষিয়ে তুলছে স্থানীয়দের জনজীবন। পাশাপাশি, এখানকার অনেকের আয়ের বড় উৎস পর্যটন করছে অনিরাপদ। কেএনএফের অত্যাচারে পর্যটকরা আজকাল রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি ভ্রমণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে পাহাড়ের শান্তিশৃঙ্খলা কতটা নিরাপদ থাকবে তা বলা মুশকিল। একই কারণে শান্তি আলোচনার চূড়ান্ত সফলতা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হওয়া অমূলক হবে না।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কেএনএফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন