কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মিতে যোগ দিলেই ছদ্মনামে নতুন পরিচয়

fec-image

উগ্রপন্থিদের মতো সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএফ)। কেউ সেখানে যোগ দিলেই দেওয়া হয় ছদ্মনাম। আবার কখনও কখনও সেই নামও রদবদল করা হয়। ছদ্মনামের পাশাপাশি কথিত ক্যাপ্টেন, মেজর, কর্নেলসহ নানা পদ-পদবিও দেওয়া হচ্ছে তাদের। কেএনএফের ফেসবুক পেজে কথিত লে. কর্নেল হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন লে. কর্নেল সলোমন। তিনি কেএনএফের তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সলোমনের প্রকৃত নাম লালমুন থাই বম। তাঁর বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর। একসময় তিনি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। এ ছাড়া কেএনএফের মিডিয়া শাখায় আরেকজন পরিচয় দিচ্ছেন কথিত ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং নামে। তবে এ নামে সংগঠনটির অন্য কোনো সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে, কেএনএফের আরও ৯ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বান্দরবান রিজিওনের ১৬ ইস্ট বেঙ্গলের দোপানিছড়াপাড়া এলাকায় সুংসুংপাড়া আর্মি ক্যাম্প থেকে তাদের আটক করা হয়। সন্ত্রাসীদের অবস্থানের গোপন খবর পেয়ে এলাকাটি ঘেরাওয়ের পর ৯টি এলজি, ১৯টি এলজি কার্তুজ, দুটি মোবাইল ফোন এবং দুটি আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে কেএনএফের ৭৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলো।

তবে কেএনএফের প্রধান নাথান বম কোথায় রয়েছেন– এ নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। বম সোশ্যাল কাউন্সিলের নেতাদের ধারণা, ভারতের মিজোরামে পলাতক রয়েছেন তিনি। নাথান সুইজারল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডসে অবস্থান করছেন আছে এমন গুঞ্জনও। তাকে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদরদপ্তরের ইন্টারপোলের শাখা কার্যালয় ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরোর (এনসিবি) এআইজি আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, যে ইউনিট নাথান বম বা তার সহযোগীদের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের তদন্ত করছে, তাদের চিঠি পেলেই ইন্টারপোলের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার শাহীন সৈকত বলেন, নাথানের ব্যাপারে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগের কাজ করবে এনসিবি। যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নাথান কোথায় রয়েছেন– এমন পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই।

বম সোশ্যাল কাউন্সিলের একাধিক সদস্য জানান, নাথান মিজোরামের লংটলাই জেলার মুনাউন গ্রামে থাকতেন। এটা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। বছরখানেক আগেও এপারে বম সম্প্রদায়ের কারও কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে।

আরেকটি সূত্র জানায়, নাথান মিজোরামের রাজধানী আইজলের উপকণ্ঠে ১৭ কিলোমিটার দূরে একটি স্থানে ছিলেন। সম্প্রতি মিজোরামের সাইয়া জেলার থুলসি নামে একটি এলাকায় চলে যান। এলাকাটি মিয়ানমারের সীমান্ত লাগোয়া। তবে কারও কারও ধারণা, নাথান একসময় যে পাহাড়ে এনজিও চালাতেন, সেটি ছিল নেদারল্যান্ডসভিত্তিক। হয়তো কোনো উপায়ে নেদারল্যান্ডস বা সুইজারল্যান্ডে তিনি চলে যেতে পারেন। এর আগেও ছবি আঁকার একটি কাজে নাথান বম ইউরোপ গিয়েছিলেন।

গত ২ এপ্রিল রাতে রুমায় সোনালী ব্যাংকে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অস্ত্র লুট করে কেএনএফ। ওই সময় ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন রাসেলকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরদিন দুপুরে তিনটি গাড়িতে চড়ে কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা থানচি উপজেলা সদরে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে সন্ত্রসী হামলা চালিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে থাকা প্রায় ১০ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রুমা ও থানচি থানায় আটটি এবং সদর থানায় একটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮ জন নারী সদস্য রয়েছে।

কেএনএফের সঙ্গে শান্তি সংলাপ চলাকালে শর্ত অমান্য করে সংগঠনটির সামরিক শাখার সদস্যরা ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা, অস্ত্র ও টাকা লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে। এর পর কেএনএফের সঙ্গে আলোচনা বাতিল করে শান্তি কমিটি। অন্যদিকে, বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় সন্ত্রাসবিরোধী সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার বাহিনী।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কেএনএফ, বান্দরবান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন