“দেশে ফেরা নিয়ে সন্দিহান রোহিঙ্গারা। শুধু রোহিঙ্গা নয়; দালাল চক্রের হাত ধরে ঢুকছে চাই মিয়ানমারের নাগরিকরাও। মৌখিক প্রতিশ্রুতি নয়, লিখিত দলিল চান রোহিঙ্গারা। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।”

মিয়ানমার সংঘাত নিয়ে কী ভাবছে রোহিঙ্গারা

fec-image

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এই চলমান সংঘাতের খবর রাখেন অনেক আগেই বাংলাদেশের টেকনাফ-উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। কারণ অনেকেরই আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতরা রয়ে গেছেন মিয়ানমারে।

জান্তা সরকারের নির্যাতন আর গণহত্যার মুখে দেশত্যাগী রোহিঙ্গারা এই পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন? এবার কি তারা সসম্মানে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরতে পারবেন?

রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রোহিঙ্গা নেতা ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মংডু, বুধিডং, হোমালি, হাওয়ার বিল, হারি বিলসহ রাখাইনের অনেক এলাকায় রোহিঙ্গারা ঘর থেকে বের হলেই নির্যাতন চালাচ্ছে মিয়ানমারের পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

সাধারণ রোহিঙ্গারা বলেন, মিয়ানমারে এখনো যে সমস্ত রোহিঙ্গা আছেন তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের পানি, খাদ্য, চিকিৎসা বিদ্যুৎ,ইন্টারনেট লাইন, গ্যাস সরবরাহসহ সকল সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের হত্যা এবং তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ঢুকতে চাইছে মিয়ানমারে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা। এজন্য বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থানও নিয়েছে অনেকে। তবে এপারে বাধার জন্য ঢুকতে পারছে না।

এদিকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি প্রধান নবি হোসাইন মিয়ানমারের ঢেকুবনিয়া ক্যাম্প দখলের দাবি করে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। ৫ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিওবার্তায় এমন দাবি করে গ্রুপটি।

রোহিঙ্গারা আরও বলেন, তারা আরাকান আর্মিকেও বিশ্বাস করেন না। কারণ আরাকান আর্মির বেশিরভাগ সদস্যই রাখাইন জাতি গোষ্ঠীর সদস্য। অভিযোগ আছে রাখাইনরাই রোহিঙ্গাদের বেশি নির্যাতন করেছিলো। তাদের ভিটে মাটি দখলে নিয়েছিলো।

তবে মিয়ানমার জান্তা সরকারের এমন করুন পরিস্থিতি ও সেনাদের জীবন বাঁচাতে ধাপে ধাপে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ৩৩০ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়াকে রোহিঙ্গারা প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসেবেই মানছেন।

মিয়ানমারের সরকার বিরোধী জোট রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার যে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, সেটির লিখিত দলিল চান রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গা নেতা কামাল হোসেন বলেন, খুশিতে নয়, গণহত্যার শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসেছি। আমরা এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চাই না। আমরা এমন জীবন চাই না। নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু আমাদের অবস্থান হচ্ছে সেফটি, সিকিউরিটি, ডিগনিটি (নিরাপত্তা এবং আত্মমর্যাদা) এই তিনটা বিষয় নিয়ে প্রত্যাবাসন হোক সেটা আমরা চাই। আমাদের দাবিগুলো পূরণে মিয়ানমার যাতে বাধ্য হয়, সে জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন দ্রুত দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে যে সমস্ত রোহিঙ্গা আছেন তারা যেন দেশ ছেড়ে না আসা সেটার আহব্বান জানাচ্ছি।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, মিয়ানমারের অন্য নাগরিকরাও বাংলাদেশে আসতে চাইছে। আর তাদেরকে বাংলাদেশে আনতে সক্রিয় হয়ে উঠছে মানবপাচার চক্র।

এই জনপ্রতিনিধি জানান, বর্তমানে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে বিজিবি ও পুলিশ। সীমান্ত শিথিল হলেই আসবে রোহিঙ্গারা, আর সেই সুযোগের অপেক্ষায় আছে মানব পাচারকারীরা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার, রাখাইন, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন