মূল ফটকে প্রাচীর নির্মাণ, পর্যটকদের সীমাহীন দুর্ভোগ

fec-image

বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদরে পর্যটকদের জন্য সেবা প্রতিষ্ঠান তথ্য সেবা কেন্দ্রের মূল ফটকের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে হাজার হাজার পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগের পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া প্রাচীর নির্মাণের ফলে তথ্য সেবা কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী পদ্ম ঝিড়ি রেস্টুরেন্ট ও পেটুক রেস্টুরেন্টসহ ২৫টি ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ৭ মাস ধরে এই প্রতিবন্ধকতায় স্বীকার। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, থানচি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে একটি মনোরম পরিবেশে ১৯৮৭ সালে সরকারি কর্মচারীদের জন্য টিনশেড কোয়াটার নির্মাণ করা হয়। উপজেলা প্রশাসন ২০১৪ সালে টিনশেট ঘরগুলি ভেঙ্গে পর্যটক বিকাশের জন্য পর্যটন কর্পোরেশনের আর্থিক সহযোগিতায় তথ্য সেবা কেন্দ্র হিসেবে একটি টিনশেট ঘরকে সংস্কার করে সেবা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেন। একই এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের রাজস্ব আয়ের বর্ধনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে সেমিপাকা দোকান নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি দোকান থেকে নগদ ৬ লাখ টাকা করে মোট দেড় কোটি টাকা নিয়ে ১০ বছর চুক্তিতে ২৫ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে টাকা উপজেলা প্রশাসনের আয় বর্ধন বা রাজস্বখাতে জমা হয়। প্রতিটি দোকানে সাড়ে ৭ হাজার টাকা হারে মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করাও হয়।

এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন পর্যটকদের জন্য সাংগু নদীর থেকে তথ্য সেবা কেন্দ্র পর্যন্ত ১টি লোহা সিঁড়ি, ফুলের বাগান, ২টি গোল টেবিল , পাহাড়ী ডিজাইনের মাচাং (গোলঘর) ২টি, মূল ফটকে মোজাইক করার গেইট ১টি, ও প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র, ৪ কক্ষ বিশিষ্ট মানসম্মত ২টি গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়।

২০১৮ সালে ৩টি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, ফটোস্ট্যাট ও কম্পিউটারের দোকান ১টি, কসমেটিক ও জুতার ২টি দোকান পুরোদমে চালু হয়। সেসময় প্রবেশ পথের মূল ফটক খোলা ছিল এবং কোন প্রাচীর নির্মাণ করা হয়নি। ফলে জাঁকজমকভাবে ব্যবসা চলছিল।

২০২০ সালে করোনা মহামারি এবং চলতি বছরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি চীনের তাণ্ডবে দীর্ঘ দুই বছর দোকানপাট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ী তেমন বেচাকেনা করতে না পারলেও দোকান ভাড়া গুনতে হয়েছিল।

২০২৩ সালে এপ্রিল মাসের থানচি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে তথ্য সেবা কেন্দ্রের প্রবেশ পথে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা মূল ফটকের প্রাচীর নির্মাণ করলে পর্যটক, সাধারণ মানুষ সহজের প্রবেশ করতে না পারায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ফটোস্ট্যাট ও কম্পিউটার, হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, জুতা-কসমেটিকের দোকানে গত সাত মাস বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে পেটুক হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে মালিক মোহাম্মদ কামাল হেসেন ও পদ্ম ঝিড়ি হোটেল মালিক মোহাম্মদ ওসমান হোসেন বলেন, ব্যাংক ও স্থানীয়ভাবে ঋণ নিয়ে দোকান নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে ৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় মালামালসহ খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। এদিকে মাসিক ভাড়া ৭৫০০, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারী বেতন সব মিলে মাসের খরচ প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। হোটেলের প্রবেশ পথে তথ্য সেবা কেন্দ্রের মূল ফটকের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করায় গত ৭ মাস কোন বেচাকেনা নেই। এখন পরিবার নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তারা আরো জানান, প্রবেশ পথে বাঁধা থাকায় হোটেলে তেমন পর্যটক আসেনা। এতে করে প্রতিনিয়ত রান্না করা খাবার নষ্ট হয়। এছাড়া করোনা মহামারি এবং কুকি চীনের তাণ্ডবে পর্যটক ভ্রমণে নিষোধাজ্ঞা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখন প্রবেশ পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজা পাথরে ভ্রমণে আসা ঢাকার বাসিন্দা অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন (৫২) বলেন, বর্তমান সরকার অনেক উন্নয়ন করেছে কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কারণে এখানে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজগুলো করা হয়েছে। সরকার পর্যটন বিকাশে জন্য যা করার প্রয়োজন তা করেছে। কিন্তু পর্যটকদের প্রবেশ মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়ী করেন তিনি।

তথ্য সেবা কেন্দ্রে পর্যটক পথ প্রদর্শক মো. আবুল হোসেন (৩৯) বলেন, আমাদের সেবা কেন্দ্র থেকে জনবিচ্ছিন্ন থাকায় রাতে আধারে সোলার ব্যাটারি ৪টি, চেয়ার ৩টি এবং ১টি ফাইল তালা ভেঙে চুরি করে গেছে। এছাড়া মাচাংঘর (গোলঘর) লোহা সিঁড়ি, গোল টেবিলগুলি অযত্ন-অবহেলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মূল ফটকের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।

থানচি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ বলেন, মূল ফটকের প্রাচীর নির্মাণে রাস্তা ব্লক হয়ে যাওয়া বিনোদনের জন্য মাচাংঘর ও গোলটেবিল গুলিতে আমরা সন্ধ্যাকালীন সময়ের বসে চা নাস্তা করার সুযোগ থেকে গত ৭ মাস যাবৎ বঞ্চিত হয়েছি। প্রশাসন যেন দ্রুত বন্ধ হওয়া রাস্তা খুলে দেয় তার দাবি জানান তিনি।

হোটেল ডিসকভারী পরিচালক শহীদ উদ্দিন বলেন, করোনার সময় এবং কুকি চীনের তাণ্ডবে হোটেল দুই বছর বন্ধ ছিল। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কোন রকমে চললেও এপ্রিল থেকে হোটেল বন্ধ রেখে ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল মনসুর বলেন, আমি ঠিকাদার শৈক্যচিং মারমাকে বলেছিলাম প্রবেশ মুখে যেন প্রাচীর নির্মাণ না করে। কিন্তু আমার কথা কোন প্রকার কর্নপাত করেননি তিনি। গত জুন মাসের নির্মিত প্রাচীরটি ভেঙে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাঙা জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে অনুমোদন প্রয়োজন হয়। যে কারণে ভাঙা সম্ভব হয়নি।

প্রাচীর নির্মাণের ঠিকাদার শৈক্যচিং মারমর সাথে যোগযোগ করার চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়ার সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন