যৌতুকের দাবিতে রাঙামাটি শহরে গৃহবধুকে নির্যাতনের অভিযোগ

Lp_nabinagare-satri-opohoro - Copy

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
যৌতুকের দাবিতে রাঙামাটিতে এক গৃহবধুকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৪ জুলাই রাঙামাটি শহরের শান্তি নগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত গৃহবধু আরিফা আক্তার (১৯) রাঙামাটি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার ছয় দিন পরও ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছেন নির্যাতনকারী স্বামী সোবহান প্রকাশ সোহরাব ও তার বড় ভাই রাজা মিয়া। নির্যাতনকারীদের প্রকাশ্যে ঘুরতে দেখে এলাকাবসীর মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

রাঙামাটি পৌর সভার কাউন্সিলর রবিউল আলম জানান, শান্তিনগর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পৌর টার্মিনাল এলাকার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী রাজা মিয়ার ছোট ভাই সোবহান তার স্ত্রী আরিফাকে নিয়ে বসবাস করতো। গত ১৪ জুলাই রাতে আরিফা আক্তারকে বেদম মারধর করে সোবহান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। পরের দিন তাকে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নির্যাতিত গৃহবধুর বড় ভাই নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন যৌতুকের দাবিতে তার ছোট বোন আরিফাকে নির্মম নির্যাতন করে তার স্বামী ও ভাসুর। ঘটনার দিন সোবহান আরিফাকে পিটিয়ে আহত করে ঘরে বন্দি করে রেখে যায়। স্থানীয়রা আরিফাকে উদ্ধার করতে আসলে উল্টো সোবহান থানায় অভিযোগ নিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আরিফাকে উদ্ধার করলেও অভিযুক্ত সোবহানকে হাতে পেয়েও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

ঘটনার বিবরণ ও মামলা সুত্রে জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরের বিশ তারিখে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার লংগদু ইউনিয়নের ভাইবোন ছড়া গ্রামের আমির বাদশা’র মেয়ে আরিফা আক্তারের সাথে একই গ্রামের মৃত নঈম উদ্দিনের ছেলে মোঃ সোবহান প্রকাশ সোহরাব এর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পর থেকে যৌতুক নিয়ে পারিবারিক কলহ চলতে থাকে।

আরিফার বড় ভাই অভিযোগ করেন, বিয়ের দুই মাস পর থেকে দুই লাখ ঠাকা যৌতুক দাবি করে সোবহান একাধিকবার তার বোন আরিফাকে মারধর ও নির্যাতন করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এনিয়ে দুইবার পারিবারিকভাবে সালিশও হয়। একপর্যায়ে সোবহানকে পঞ্চাশ হাজার টাকাও দেয়া হয়। কয়েকদিন পর সোবহান যৌতুকের দাবিতে আবারো নির্যাতন চালাতে থাকে।

গত এক মাস আগ থেকে সোবহান রাঙামাটি শহরের শান্তিনগর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী সহ বসবাস শুরু করে। সে তার বড় ভাই রাজা মিয়ার সাথে ভাঙ্গারী ব্যবসা করে। গত ১৪ জুলাই রাতে আবারো সোবহান আরিফাকে বাপের বাড়ি থেকে বাকি দেড় লাখ টাকা নিয়ে আসতে চাপ দেয়। এতে আরিফা অপরগতা প্রকাশ করলে তাকে লাঠি দিয়ে বেদড়ক মারধর করে বাসায় তালা দিয়ে বাইরে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে পুলিশকে খবর দিয়ে পুলিশ এসে আরিফাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।

এ ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত সোবহানের সাথে কথা বলতে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পালিয়ে যায়। পরে তার বড় ভাই এসে জানালেন সুবহান জরুরি কাজে চট্টগ্রাম চলে গেছে। ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি ঘটনার দিন রাঙামাটিতে ছিলাম না। মারধরের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন শুনেছি কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আমার ভাই তার স্ত্রীকে সামান্য চড় থাপ্পর দিয়েছে। আমি রাঙামাটি এসে এ ঘটনার বিচার করবো বললেও ভাইয়ের শশুর পক্ষ আমার কথা না শুনে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর রবিউল আলমের পরামর্শে মামলা করতে যায়। যৌতুক দাবির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমার ভাই যৌতুক চায়নি, আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া সাড়ে চার ভরি সোনার অংলংকার ফেরত চেয়েছে। তাই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামান্য কথাকাটাকাটি হয়েছে।

এই ঘটনায় রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় নির্যাতিত গৃহবধু আরিফা বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন মামলার আইও এসআই রফিক। মামলা নাম্বার ৫ তাং-১৮/০৭/১৩। মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে মেয়েটিকে তার স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া গেছে এবং এলাকায় বসবাসরত বেশ কয়েকজন প্রতিবেশি যৌতুকের জন্য আরিফাকে তার স্বামী নির্যাতন করতো বলে পুলিশকে জানিয়েছে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন