টেকসই প্রত্যাবাসনে কাজ করছে বাংলাদেশ-আরআরআরসি

রাখাইন পরিদর্শন করে নাখুশ রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা: নাগরিকত্ব ফায়সালা শেষে ফিরতে চায়

fec-image

রাখাইনের মংডু ঘুরে এলেন ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি। এসময় শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ৭ জন বাংলাদেশি কর্মকর্তাও সফর করেন।

শুক্রবার (৫ মে) সকাল ৯টায় টেকনাফের বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে প্রতিনিধি টিম “গো সি এন্ড ভিজিট” কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর ও আশপাশের গ্রাম, স্থাপনা পরিদর্শন শেষে বিকাল ৬টায় ফিরে এসেছেন।

কক্সবাজারস্থ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান মিয়ানমার ফিরে সাংবাদিকদের বলেন, “রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ছাড়া বাংলাদেশের সমস্যা শেষ হবে না। ৭০ বছরের সমস্যা একদিনে শেষ হওয়ার কথা না। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা পরিলক্ষিত হয়েছে। তারা অনেক আন্তরিক বলে মনে হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, আমাদের “গো সি এন্ড ভিজিট” দাবির প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের মংডু ও আশপাশের গ্রাম, স্থাপনা দেখানোর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। তারা মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের আস্থা ফিরাতে চায়।”

শুক্রবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করা প্রায় ২২০ পরিবারের মধ্য থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত টেকনাফ ২৬নং ক্যাম্পের ১৪ পরিবার, ২৭নং ক্যাম্পের ৪ পরিবার ও ২৪নং ক্যাম্পের ২ পরিবারসহ মোট ২০টি পরিবারের ৩ জন নারী সদস্যসহ ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি করিম উল্লাহ, মো. সেলিম, রশিদ উল্লাহ. ছৈয়দ আলম, অলি হোসেন, মো. ফারুক, মোহাম্মদ ইলিয়াস, সাঈদ আলম,আবুল হোসেন, আবু সুফিয়ান, আবু তৈয়ুব, মো. ইলিয়াস, নোমান, মো. তাহের, মো. আলম, আবু সামা, আবদু সালাম, জমিলা, রহিমা খাতুন ও সুবিয়া খাতুন স্পিডবোটযোগে মংডু ঘুরে আসেন।

নিজ দেশের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এসে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি জমিলা, আবু সুফিয়ান, করিম উল্লাহ সাংবাদিকের সাথে কথা বলেন। তারা জানান, “নিজ গ্রামের চিহ্ন পর্যন্ত সেখানে অবশিষ্ট নেই। কিছু ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে আমাদের রাখার জন্য। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আমাদের নাগরিকত্ব ফায়সালা নিয়ে কোন সদুত্তর দেন নি। এভাবে আমরা সেখানে কীভাবে ফিরে যাবো?।”

জানা যায়, চীনের মধ্যস্থতায় চলতি মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রচেষ্টা চলছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের আগেই রাখাইনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানোর প্রস্তাব করে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন ধরে এ প্রস্তাব নাকচ করে দিলেও এবার রাজি হয়েছে মিয়ানমার। এরই প্রেক্ষিতে ৫ মে প্রতিনিধি দলটিকে রাখাইনে পাঠানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে ।

রাখাইনে কী পরিমাণ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে কিনা, তা রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করলেন।

এর আগে গত ১৫ মার্চ (বুধবার) সকালে মিয়ানমারের ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সমাজ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অং মিয়ো’র নেতৃত্বে
টেকনাফ স্থল বন্দর রেস্ট হাউজে অবস্থান করে তালিকা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন । মন্ত্রী ছাড়াও মিয়ানমার অভিবাসন ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই টিমের সদস্য ছিলেন ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত মনোনীত রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর ২০টি পরিবারের সদস্যরা মিয়ানমার সরকারের গৃহীত প্রদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করলেন। তারপর শুরু হবে পাইলট প্রকল্পের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নাগরিক, রাখাইন, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন