রাঙমাটি মেডিকেল কলেজ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তৃতীয় বৈঠক: অনড় অবস্থানে সরকার: ১০দিন সময় চাইলেন উষাতন তালুকদার এমপি

Pic-23-02-15-1-300x190

স্টাফ রিপোর্টার:

বহুল আলোচিত রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী অনড় অবস্থানের কারণে কিছুটা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছে বিরোধিতাকারী সংগঠন জনসংহতি সমিতি। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে অনুষ্ঠিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অনড় অবস্থানের কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. নাসিম জানালে জেএসএসের নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করে।

এসময় জেএসএসের অন্যতম শীর্ষ নেতা উষাতন তালুকদার এমপি তাদের সিদ্ধান্তের জন্য অতিরিক্ত ১০ দিন সময় প্রার্থনা করেন। ধারণা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সাথে জেএসএস শীর্ষ নেতা সন্তু লারমার বৈঠকের পর তারা এই নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছে।১৮ ফেব্রুয়ারী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সোমবার দুপুর ২.১৫ মিনিটে শুরু হয়ে বৈঠকটি এক ঘন্টারও বেশী সময় স্থায়ী হয়।অনিশ্চিয়তায় পড়া সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ এর কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এটি ছিল তৃতীয় বৈঠক।স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার ও জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি কে এস মং সভাকে জানান, যেহেতু রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের বিষয়ে জনসংহতি সমিতিসহ পাহাড়ের বেশ কয়েকটি সংগঠনের ভিন্নমত রয়েছে। তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করার জন্য কয়েকদিন সময় প্রয়োজন। পরে সভার পক্ষ থেকে আলাপ আলোচনার জন্য সাংসদ উষাতন তালুকদারকে দশদিনের সময় দেওয়া হয়।

 বৈঠকে উষাতন তালুকদারের প্রার্থিত সময় মঞ্জুর করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. নাসিম জানান,দশদিন অর্থাৎ আগামী ৫ মার্চের মধ্যে কলেজ নিয়ে জনসংহতি সমিতির কোনো গঠনমুলক প্রস্তাবনা পাওয়া না গেলে ওইদিনই সরকার এই কলেজের কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হচ্ছে সে সম্পর্কে সরকারের অবস্থান ব্যখ্যা করবে। তবে দশদিনের মধ্যে তাদের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া না গেলে সরকার তার গতিতেই মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম এগিয়ে নেবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ চালুর ব্যাপারে সরকার নমনীয়তা দেখাবে না।

বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, রাঙামাটির সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা,রাঙামাটি নারী সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার,  রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন, সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ, আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ টিপু সুলতান, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের প্রকল্প পরিচালক ডাঃ শহীদ তালুকদার, সিভিল সার্জন ডাঃ স্নে কান্তি চাকমাসহ স্বাস্থ্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 সভার সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এই কলেজের বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি সভাকে জানান পিছিয়ে পড়া পার্বত্য জনগণের শিক্ষা চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উদ্যোগী হয়ে এই কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। কলেজটি প্রতিষ্ঠা হলে শিক্ষা চিকিৎসার পাশপাশি পার্বত্যাঞ্চলের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও আরো গতিশীলতা আসবে। এর ধারাবাহিকতায়ই প্রধানমন্ত্রী গত ১০ জানুয়ারি সারাদেশের আরো ১১টি নব প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজের সাথে এই কলেজটিও টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন ঘোষণা করেন। মাঝখানে অনাকাঙ্খীত কারণে কিছু ঘাত প্রতিঘাতের ঘটনা ঘটলেও এই কলেজের কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনড় বলে বৈঠকে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, কলেজের কাজ অবশ্যই শুরু হবে, এর কার্যক্রমে বা অবকাঠামো বিষয়ে কারো কোনো বক্তব্য থাকলে সরকার অবশ্যই তা বিবেচনায় নিবে। কারণ সকল পক্ষের আস্থার মধ্যে থেকেই সরকার এই শুভ কাজটি এগিয়ে নিতে চায়। আগামী মাসের ১ম দিন থেকেই এই কলেজের কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সকল পক্ষের সহযোগীতা কামনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, গত ১০ জানুয়ারি টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এই কলেজের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ওইদিন কলেজের বিরুদ্ধে অবরোধের ডাক দিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয় জনসংহতি সমিতি। এক পর্যায়ে সংঘাত সংঘর্ষের কারণে রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা ও কারফিউ জারি করা হয়। ঘটনার সময় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের হামলায় আহত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মনির নামে নানিয়ারচর উপজেরার এক সাধারণ কিশোর।

ইতোমধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশের মেডিকেল কলেজগুলো ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও ছাত্রভর্তিসহ আনুসাঙ্গিক কার্যাদি সমাপ্ত করেও এই মেডিকেল কলেজের পাঠদান শুরু করা যায়নি। মূলত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে এই কলেজে ভর্তি হওয়া মেধাবী তরুণদের শিক্ষা জীবন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন