রাঙামাটিতে ১৯৭ স্থানে পাহাড় ধস, ৩৮১ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত

fec-image

রাঙামাটিতে টানা ছয়দিনের বৃষ্টিতে পুরো জেলায় ১৯৭ স্থানে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি পরিসরে পাহাড় ধস হয়েছে। এ ঘটনায় জেলায় ৩৮১টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে অতি বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলো ডুবে গেছে। হ্রদের পানিতে ভেসে এক যুবক এখনো নিখোঁজ রয়েছে। কাজ-কর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘরবন্দি শ্রমজীবী মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি এবং রাজস্থলী উপজেলার কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষা নিম্নাঞ্চগুলো হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেছে। যে কারণে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে বিপাকে পড়েছেন।

রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা বলেন, এ ইউনিয়নের সড়কে পথে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে হাজীপাড়া বেইলি ব্রিজের উপর দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ওই এলাকায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আব্দুল মাবুদ বলেন, উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত। বর্তমানে ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মনু মারমা বলেন, আমার পুরো ইউনিয়ন পানিবন্দি। হ্রদে তীব্র স্রােত থাকায় সরকারি খাবার পৌছানো যাচ্ছে না সেখানে। একদিকে খাবার সংকট অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানির অভাব সবমিলে মহা দুযোর্গ চলছে এখানে।

কাপ্তাই উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ঝুলন দত্ত বলেন, কর্ণফুলী নদীর স্রােত বেশি থাকায় চন্দ্রঘোনা ফেরী বন্ধ রাখা হয়েছে। যে কারণে রাজস্থলী উপজেলার সাথে কাপ্তাই উপজেলার এবং চট্টগ্রামের রাঙুনিয়া উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন বলেন, জেলা সদরে ভারী বর্ষণে ১১৫টি স্থানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পরিসরে পাহাড় ধস হয়েছে। ৮২টি বসত ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের দেয়া ৯টি আশ্রয়ন ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮টি সড়কে ধস হয়েছে। ৪টি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত, ২০টি বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইউএনও আরও বলেন, দুর্গম এলাকা হওয়াতে অনেক স্থানে দ্রুত পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যোগাযোগ থেকে সহযোগিতা অক্ষুণ্ন রাখতে

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৃষ্টিতে জেলার প্রধানমন্ত্রীর উপহার ১৩টি আশ্রয়ণের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগের ৭৫টি স্থানে ভাঙ্গন হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতি এড়াতে সংস্কার না করা পর্যন্ত সড়কের ৯টি স্থানে চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

পুরো জেলায় ৬৮৩.৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৩টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। বন্যায় নিম্নাঞ্চল উপজেলার ১২৪টি ঘর এবং বাজার প্লাবিত হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর স্রােত বেশি থাকায় রাজস্থলী-কাপ্তাই উপজেলায় চন্দ্রঘোনা ফেরী চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় ২৩৪টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ওইসব আশ্রয় কেন্দ্রে ১৭২৭ জন লোক অবস্থান করছেন এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনিআরও বলেন, সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখতে সড়কের ৩৫টি স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। ৭০টি স্থানে ভেঙ্গেপড়া গাছপালা অপসারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সচল রাখতে রেসপন্স টিম কাজ করছে।

ডিসি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মেডিকেল টিম এবং এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ আনসার এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন