টেকনাফ কেন্দ্রিক অপহরণ ও মানব পাচার চক্রের মূলহোতাসহ আটক ৬

fec-image

টেকনাফ কেন্দ্রিক অপহরণ ও মানব পাচার চক্রের মূলহোতা মুহিত কামাল ও সাইফুলসহ ৬ জন অপহরণকারীকে গ্রেফতার র‍্যাব-১৫ এর আভিযানিক টিম। গত ৭ আগস্ট সোমবার সকাল ১১টার দিকে র‌্যাব-১৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণ চক্রের চকরিয়া-রামু-ঈদগাঁও এলাকার এজেন্ট সাইদুল আমিন এবং আব্বাসকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ধৃত আব্বাসকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে প্রেক্ষিতে তার দেয়া তথ্যানুযায়ী টেকনাফ পল্লান পাড়া, লেংগুর বিল ও লম্বরি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এই চক্রের মূলহোতা মুহিত কামাল ও সাইফুল ইসলামসহ আরো দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত অপহরণকারী তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করে। তারা হলো- টেকনাফ উপজেলার নতুন পল্লান পাড়ার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মুহিত কামাল (৩৪), দক্ষিণ লম্বরী গ্রামের হাফেজুর রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম(৩৮), রামু উপজেলার দাড়িয়ারদীঘি গ্রামের মৃত নুরুল হকের ছেলে মো. আব্বাস মিয়া প্রকাশ জাহাঙ্গীর(৪০), থৈয়ংগা কাটা গ্রামের আব্দুল আলমের ছেলে সৈয়দুল আমিন (২৮), টেকনাফ
নতুন পল্লানপাড়ায় বসবাসকারী উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ৩নং ক্যাম্পের ব্লক-বি/২৭ এর রোহিঙ্গা আব্দুস সালামের ছেলে তাহের হোসেন(২৫) ও টেকনাফ নতুন পল্লানপাড়ায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা কাদির হোসেনের ছেলে হাবিবুল্লাহ প্রকাশ লালু (৩০)।

গ্রেফতারকৃতদের হেফাজত হতে ৩টি স্মার্ট ফোন, ৩টি বাটন মোবাইল ফোন, ১৩টি সীম কার্ড এবং নগদ ২৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান ” কক্সবাজার টেকনাফের একটি অপহরণ চক্র দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গা থেকে এনজিও এবং কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ দেওয়ার কথা বলে নিরীহ লোকদেরকে টেকনাফে নিয়ে এসে জিম্মি করে। পরবর্তীতে মিয়ানমারের বিভিন্ন নাম্বারে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার থেকে কল দিয়ে ভিকটিমের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করে থাকে। গত ২৩ জুলাই র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার একটি অভিযোগের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, ২০ জুলাই তৌহিদ নামে এক স্থানীয় যুবক ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালি গ্রামের হামিদ হোসেন এবং নিজামুদ্দিনকে রাজমিস্ত্রির কাজ দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মিয়ানমারের সিমে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার থেকে দেড় লাখ টাকা করে মোট তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এই ঘটনায় ২৩ জুলাই একটি অপহরণ মামলা হয় এবং পুলিশ তৌহিদকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তৌহিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের আভিযানিক দল মূল চক্রকে আটকের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে।

অপহরণকারীদের বরাত দিয়ে র‍্যাব-১৫ কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভিকটিমদের কাজ দেওয়ার কথা বলে টেকনাফে এনে তারা প্রথমে দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত গুদামঘরে বন্দি করে রাখে। ভিকটিমের সংখ্যা ২০-২৫ জন হলে তাদেরকে মাছধরা বোটে করে সেন্টমার্টিন এ নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে মিয়ানমারের অপহরণ চক্রের সদস্যরা মাছ ধরার বোটে করে তাদের মিয়ানমারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মিয়ানমারের নাম্বারে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার দিয়ে কল দিয়ে ভিকটিমের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করে। স্থানীয় বিকাশ নাম্বারে মুক্তিপণের টাকা প্রেরণ করা হলে তারা ভিকটিমকে মাছ ধরার বোটে করে আবার টেকনাফে নিয়ে এসে ছেড়ে দেয়।

অতি. পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী আরো জানান, ” টেকনাফের নতুন পল্লানপাড়া, লম্বরি এবং লেংগুর বিল গ্রামের প্রত্যেক পরিবার এই অপহরণ চক্রের সাথে নানাভাবে জড়িত। এই অপহরণ চক্রের মূল হোতারা গ্রামের লোকদেরকে প্রত্যেক মাসে ৪-৫ হাজার টাকা করে প্রদান করে। মূলহোতারা গ্রামের প্রবেশ মুখে ২৪ ঘণ্টা চেকার নিয়োগ করে রাখে। প্রশাসনের কোন গাড়ি বা কোন সদস্যকে দেখলে চেকাররা সাথে সাথে whatsapp এ্যাপের মাধ্যমে গ্রুপে জানিয়ে দেয়, ফলে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং প্রয়োজনবোধে পালিয়ে যায়।”

উদ্ধারকৃত আলামতসহ ধৃত অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজারের জেলার ঈদগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত অপহরণ চক্রের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানায় ৫টি, উখিয়া থানায় ১টি এবং ঈদগাঁও থানায় ১টিসহ মোট ৭টি মামলা রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অপহরণ, টেকনাফ, মানব পাচার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন