রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ভয়াবহ আগুনে দেড় শতাধিক দোকান পুড়ে ছাই

Agun-Baghaichary11 copy

সাজেক প্রতিনিধি:

গভীর রাতের অন্ধকারে আকস্মিক আগুনে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে দেড় শতাধিক দোকান সম্পূর্ন পুড়ে ছাই হয়েগেছে। শনিবার রাত সোয়া তিন’টার সময় আকস্মিকভাবে দাউ-দাউ করে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভোর পাচঁ’টা নাগাদ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আগুনের লেলিহান শিখায় দেড়শতাধিক দোকানঘর পুড়ে গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এতে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

রাত পৌনে পাচঁটার সময় বাঘাইছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আজিজুল ইসলাম আগুন লাগার সত্যতা নিশ্চিত পার্বত্যনিউজকে জানান, আগুনের তীব্রতায় আমরা সঠিকভাবে কোনো কিছু-ই বুঝে উঠতে পারছিনা। সকালে বিস্তারিত বলা যাবে।

বাঘাইছড়ি বিজিবি জোনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রবিউল ইসলাম পুরো বাজারের প্রায় সবকটি দোকান পুড়ে গেছে বলে পার্বত্যনউজকে নিশ্চিত করেছেন।

আকস্মিক এই অগ্নিকান্ডে অন্তত ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িরা। এ ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে বিজিবি-পুলিশসহ উপজেলা প্রশাসনের অফিসার ও কর্মকর্তাগণ ছুটে যান।

এসময় মারিশ্যা জোনের বিজিবি’র পক্ষ থেকে অগ্নি নির্বাপক গ্যাস ব্যবহারের পাশাপাশি বালি ও পানি এনে আগুন নেভাতে এগিয়ে আসেন বাঘাইছড়ি বিজিবি জোনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রবিউল ইসলাম ও তার অফিসার-সৈনিকবৃন্দ।

লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, পুরো বাজারের প্রায় সবকটি দোকানঘর পুড়ে গেছে। খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিসকে খবর পাঠানো হয়েছে, তারা আসতে আসতে সকাল সাতটা নাগাদ সময় লেগে যেতে পারে।

কিন্তু তার আগে বিজিবি’র পক্ষ থেকে আগুন নেভাতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়েছে।

এদিকে, স্থানীয় অনেকেকের সাথে যোগাযোগ করেও তাৎক্ষণিকভাবে এতো ভয়াবহভাবে আগুন লাগার বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার কথা বলা হলেও অনেকে-ই জানিয়েছেন শট-সার্কিটের আগুন এতো তীব্রগতিতে ছড়ানোর কথা নয়। নাশকতার উদ্দেশ্যে কেউ এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পার। কেউ কেউ বলছেন, একটি চা’য়ের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।

আগুনের তীব্রতা এতোটাই বেশি যে, মুহুর্তের মধ্যেই তা ছড়িয়ে তিনটি মার্কেটসহ আশেপাশের অন্তত চারশো দোকানঘর সম্পূর্ন পুড়ে যায়।

তবে স্থানীয় একটি সূত্র দাবী করেছে, বিগত কিছুদিন আগে এই বাজারের ব্যবসায়িদের কাছে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো স্থানীয় একটি আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠন। বারবার বিভিন্ন উপলক্ষে  চাঁদা দিতে দিতে নিঃস্ব ব্যবসায়িদের পক্ষ থেকে নতুন করে আর কোনো চাঁদা দেওয়া সম্ভব নয় বলে চাঁদা দাবী রি আঞ্চলিক সংগঠনটিতে জানিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমান অগ্নিকাণ্ডের সাথে এর যোগসূত্র থাকতে পারে বলে সূত্রের দাবী।

এদিকে বাঘাইছড়ির অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ঢাকার সফর সংক্ষিপ্ত করে বাঘাইছড়ি ছুটে গেছেন। গতকাল বিকালে তিনি বাঘাইছড়ি উপজেলা পৌছে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন কালে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ক্ষতিগ্রস্থ ১৫০ টি দোকানীকে ২ বান্ডিল ঢেউটিন, ৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ প্রদানের আশ্বাস দেন। এছাড়াও ফায়ার ব্রিডেগ স্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

অপরদিকে খগাড়ছড়ির রিজিয়ন কমান্ডার মেজর জেনারের মাহবুবুল আলম পিএসএস অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া মারিশ্যা জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল রবিউল ইসলাম সিগনাল, জেলা পরিষদ সদস্য বৃষকেতু চাকমা, থানার অফিসার ইনচার্জ আজিজুল হক ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজ খবর রাখছেন।

বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেক দোকানীকে ২০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চৌধুরী ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এ ত্রাণ বিতরন করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন