শীঘ্রই খাগড়াছড়ি পাবর্ত্য জেলা পরিষদে আসছে নতুন অন্তবর্তীকালীন পরিষদ: তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে

22.01

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

অবশেষে চুড়ান্ত হয়েছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তবর্তীকালীন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যে তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে আওয়ামীলীগের একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া নতুন বিল অনুযায়ী খাগড়াছড়ি পাবর্ত্য জেলা পরিষদ ১ জন চেয়ারম্যান ছাড়াও ১৪ জন সদস্য নিয়ে পুনর্গঠিত হবে। দলীয় অনুগত্যের পাশাপাশি ব্যাক্তিগত ইমেজ, অতীত অভিজ্ঞতা বিবেচনা করেই খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যদের তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। সুত্রটির মতে এ প্রক্রিয়ায় ১৫ সদস্যের অন্তর্র্বতীকালীন পরিষদে প্রথম ভাগ্যবান হিসেবে একাধিক তরুণ উঠে আসতে পারেন।

চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার দৌড়ে সকলকে ছাড়িয়ে গেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও জেলা আওয়ামলীগের সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরী।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামলীগের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাঙ্গালী কোটায় সদস্য হিসেবে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তারা হলেন, খাগড়াছড়ি জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহেদুল আলম, মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান এম আবদুল জব্বার ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামলীগ‘র যুগ্মসম্পাদক নির্মল চৌধুরী। আর বাঙ্গালী কোটায় মহিলা সদস্য হিসেবে মাটিরাঙ্গা উপজেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা‘র নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সুত্রটি নিশ্চিত করেছে। শেষ পর্যন্ত কোন অঘটন না ঘটলে তারাই এ জেলায় বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির প্রতিনিধি হিসেবে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে অভিষিক্ত হবেন।

নানা নাটকীয়তার পর ত্রিপুরা কোটায় সদস্য হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, এনডিসি‘র বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামলীগের সহ-সভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরা, লতিবান ইউনিয়নের তিন বার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান খগেশ্বর ত্রিপুরা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকনেশ্বর ত্রিপুরা‘র নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

মারমা কোটায় সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগ‘র সহ-সভাপতি নেতা মংক্যচিং চৌধুরী, জেলা আ. লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মংশেপ্রু চৌধুরী অপু এবং লক্ষীছড়ি উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রে¤্রাচাই চৌধুরী‘র নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

চাকমা কোটায় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশুতোষ চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা এবং রাঙ্গামাটির জেএসএস সমর্থিত সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার‘র বেয়াই পানছড়ির শতীষ চাকমা‘র নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চাকমা সম্প্রদায়ের পক্ষে এ তিন নেতা পার্বত্য জেলা পরিষদে চাকমা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

উপজাতীয় কোটায় মহিলা সদস্য সাবেক দীঘিনালা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শতরূপা চাকমার চুড়ান্তা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কংজরী চেীধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনিও বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান।

এদিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে নতুন অন্তবর্তীকালীন পরিষদ নিয়োগ প্রক্রিয়া চুড়ান্ত হওয়ার খবরে আশার আলো জ্বলে উঠতে শুরু করেছে আওয়ামী শিবিরে। তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অন্তবর্তীকালীন পরিষদকে স্বাগত জানাতেও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে।

তাদের মতে এ অন্তবর্তীকালীন পরিষদ খাগড়ছড়ির বিশাল জনগোষ্ঠির উন্নয়নে নিবেদিত হবে। এখন পূনর্গঠিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রহর গুনছে একটি ফ্যাক্স বার্তা বা আদেশের।

প্রসঙ্গ, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন অপর দুই জেলার মত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদ’। একজন চেয়ারম্যান(উপজাতী) ও ৩০ জন সদস্য নিয়ে এই পরিষদের যাত্রা। শুরুতে খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদের সদস্য ছিল বাঙালী ৯ জন,চাকমা ৯ জন ,মারমা ৬ জন ও ত্রিপুরা ৬ জন। প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে পরিষদটি গঠন হওয়ার কথা ছিল। সময়ের ব্যবধানে স্থানীয় সরকার পরিষদ ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’-এ রূপ লাভ করেছে।স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের টানাপোড়েনে আর সরকারের উচ্চ মহলের আন্তরিকতার অভাবে একটি কার্যকর স্থানীয় সরকার মাধ্যমকে গনতান্ত্রিক ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল করা গেলোনা দুই যুগেরও বেশী সময়ে।

১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বদৌলতে স্থানীয় সরকার পরিষদের নাম বদল করে রাখা হয়‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’। সে সাথে ৩১ সদস্যের পরিষদ ভেঙ্গে ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে করা হয় একজন চেয়ারম্যান(উপজাতী) ও অপর চার সদস্য দিয়ে অন্তবর্তিকালীন পরিষদ। সে থেকে নির্বাচন বিহীন ও ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও সদস্য পরিবর্তন হয়ে আসছে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদে। সে সাথে জবাবদিহিতা না থাকায় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ এখন দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখিও হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কোনটাই হয়নি। যেখান থেকে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের কথা সেখানে বসে এখন জনগণের টাকায় নিজেদের নিজেদের ভাগ্যেরই বদল করেন নেতারা।

সর্বশেষ গত বছরে ২৩ নভেম্বর মহান জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সংশোধনীতে সেই ৫ জন সদস্যের স্থলে ১৫ জন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন