রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার বেহাল দশা !

ctg1

রাঙামাটি প্রতিনিধি:
রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার বেহাল দশা ! নাম সর্বস্ব ক্লাবগুলি জোয়ারের আসরে পরিণত হওয়ায় স্টেডিয়ামের অনেক জায়গা বেহাত হয়ে গেছে। অনেক শীর্ষ ক্লাব কর্মকর্তা যার যেমন সুবিধামতো বিভিন্ন সময়ে অনৈতিক ব্যক্তির সাথে হাত মিলিয়ে অন্যের নাম দিয়ে ক্রীড়া সংস্থার জায়গা দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামািিট জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন অনেক ভূমি ছিল। প্রায় দুই একরের অধিক ভূমির মধ্যে কিছু অসাধু ক্লাব প্রতিনিধি ও ক্রীড়া কর্মকর্তার কারণে স্টেডিয়ামের অধিকাংশ জায়গা বেহাত হয়ে যায়। যার প্রেক্ষিতে দখলে নিয়ে জনবসতি গড়ে উঠেছে। এমন কি ক্রীড়া সংস্থার সুইমিংপুলের কিছু ভূমি ভরাট করে তার ওপর দিয়ে একটি প্রভাবশালী পরিবারের ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করে।

পরবর্তীতে ঔ পরিবারের ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করার জন্য ক্রীড়া সংস্থার আরেক প্রভাবশালী কর্মকর্তার সহাতায় আরো কিছু জায়গা দখলে নিয়ে গার্ডওয়াল নির্মাণ করে। সরকারের পূর্ব পরিকল্পনামতে স্টেডিয়ামের চতুরদিকে রাস্তার সিদ্ধান্ত থাকলেও বর্তমানে একদিকের রাস্তা ব্যক্তিগত দখলে রেখেছে। কিন্তু কিভাবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোন কর্মকর্তাকে সন্তুুষ্ট করে রাস্তার জায়গায় গার্টওয়াল নির্মাণ করে।

এছাড়াও কোন নিয়মের ভিক্তিতে জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালনা হয়ে আসছে? সংস্থার রেজিস্ট্রেশন ক্লাব কয়টি এবং আজ পর্যন্ত কতটি ক্লাবের অস্থিস্ত আছে? এসব কিছুর কোন নিবদ্ধন রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা হয়েছে কিনা তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। বর্তমানে অধিকাংশ ক্লাবের কোন অস্তিত্ব নেই। বিধি-বিধান অনুসারে প্রত্যেক ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা নিয়মিত কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ও বার্ষিক অডিট রির্পোট প্রকাশের নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ক্লাবের এ ধরনের কার্যক্রম নেই।

অভিযোগ উঠেছে, স্টেডিয়ামের রাস্তার জায়গায় জনৈক ব্যক্তি বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা প্রথমে বাধা দেন। পরবর্তীতে ক্রীড়া সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য সেমিপাকা সবুজ টিন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে।

সূত্র আরো জানায়, আশিকা নামে স্থানীয় একটি এনজিও নামে মাত্র ভাড়ায় ক্রীড়া সংস্থার পুরাতন ভবনটি ভাড়া নেয়। উক্ত ভবনটি পরবর্তীতে কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তুলে । ইতিমধ্যে উক্ত কমিউনিটি সেন্টার ভেঙে নতুনভাবে গ্যালারী নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে পার্শ্ববর্তী গ্যালারী ৬টি কক্ষ এবং ক্রীড়া সংস্থার অফিসের হল রুম আশিকা নামে মাত্র বরাদ্দ দেয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থার একজন কর্মকর্তা এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোন অডিট নাই। বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজনের নামে অনুদান পাওয়া লক্ষ লক্ষ টাকার কোন হিসাব নেই। একই সাথে জেলা ক্রীড়া সংস্থার তালিকাভুক্ত ক্লাব গুলোর গত ২০ বছর ধরে কোন অডিট হয় নাই। ফলে ক্রীড়া সংস্থার তালিকাভুক্ত ক্লাবের কোন বৈধ কমিটি নাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সমাজসেবা / সমবায় বিভাগের নিবন্ধন ব্যতীত কোন ক্লাব বা সংস্থা তাদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়ম নাই। কিন্তু বর্তমানে রাঙামাটি শহরে সবুজ সংঘ, রিজার্ভমুখ স্পোটিং ক্লাব ও মুকুলফৌজ ক্লাব ব্যতীত অন্যগুলি সরকারের নিবন্ধনকৃত নয়। নিবন্ধন ব্যতীত কোন ক্লাব ক্রীড়া সংস্থার তালিকাভুক্ত হতে পারে না বলে জানা গেছে। এসব নাম সর্বস্ব ক্লাব সমূহের অডিট ও বৈধ কমিটি নাই। ফলে খেলাধুলার পাশাপাশি ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

প্রতিবছর জেলা ক্রীড়া সংস্থা ,পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন ও পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে টুর্নামেন্টের নামে আর্থিক অনুদান নিয়ে আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। অডিটের মাধ্যমে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন নানা অনিয়মসহ দুর্নীতি অভিযুক্ত ক্লাবসমূহের তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা-জবাবদিহীতা নিশ্চিত করে রাঙামাটি জেলার ক্রীড়া সংস্থার পূর্বের গৌরব ফিরিয়ে আনতে আকুল আবেদন জানিয়েছে ক্রীড়ামোদীরা।

এক্ষেত্রে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে সক্রিয় করতে হলে ক্রীড়াবিদ ক্রীড়ামোদিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির জন্য তৃণমূল থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে তরুণদের আগ্রহ এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে পারে খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন