রাজস্থলীর বাঙালহালিয়াতে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব সম্পন্ন

fec-image

পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সংস্কৃতি বিকাশে এগিয়ে আসুন’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবং এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী উৎসব সাংগ্রাইয়ের সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যবোধ বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে পার্বত্য চট্রগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম আদিবাসী জনগোষ্ঠী মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই ও জল উৎসব পালিত হয়।

রবিবার ( ১৬ এপ্রিল) রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়াতে সমাপ্ত হয়েছে। পিতলের মং ঘণ্টা বাজিয়ে সাংগ্রাই উৎসব উদ্বোধন করে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, সাংগ্রাই উৎসব শুধু মারমা সম্প্রদায়ের নয়। এ উৎসবকে এ এলাকায় বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের উৎসবে পরিণত করতে হবে। এ ধরনের অনুষ্ঠান এ এলাকায় বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করে তুলবে।

তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে তা সবার মাঝে পৌঁছে দেয়ার। এখানে বসবাসরত হিন্দু, মুসলমান, চাকমা, মারমাসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যেসব জাতিসত্তা রয়েছে তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এক কথায়, আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমাদের মাঝে কোনো ভেদাভেদ নাই। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের বিশ্বাসকে সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে যা যা করা প্রয়োজন তা করতে বর্তমান সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। যার যার যে ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে আমাদের সেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।

করোনা মহামারি (কোভিড-১৯) উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গত ২ বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, সাংক্রান বিহু, বিষু উদযাপন হয়নি। ঘরোয়াভাবে হলেও তেমন জাঁকজমকপূর্ণ হয়নি। তাই এ বছর যেন উৎসবের বাড়তি আমেজে মেতেছে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ।

পার্বত্য জনপদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর নিজ নিজ ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে মারমা সংস্কৃতিক সংস্থা (মাসস) আয়োজন করে এ মনোরম অনুষ্ঠানের।

রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার (মাসস) সভাপতি অংসুই প্রুু চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ উৎসবে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি,সভাপতি জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, কাপ্তাই ৫৬ বেঙ্গলের অধিনায়ক লে. কর্নেল নুর উল্লাহ জুয়েল, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইচাইন চৌধুরী, রাজস্থলী উপজেলা চেয়ারম্যান উবাচ মারমা, নির্বাহী অফিসার শান্তনু কুমার দাশ এ উৎসবে হাজার হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নর-নারী ছাড়াও কয়েক হাজার বাঙালি নর-নারী উপস্থিত থেকে এ উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।

পাহাড়ি-বাঙালির পদধূলিতে এক মহামিলন মেলায় পরিণত হয় মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব।

পরে প্রধান অতিথি ফিতা কেটে জলকেলির উদ্বোধন করেন। এরপর প্রধান অতিথিসহ অন্য অতিথিরা মারমা তরুণ-তরুণীদের গায়ে পানি ছিটিয়ে জলকেলির শুভ সূচনা করেন। জলকেলির পর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মারমা শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উৎসব, বাঙালহালিয়া, মারমা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন