রাজস্থলী দখলে মরিয়া ‘জেএলএ’, প্রতিহতের হুমকি এমএনপি’র

fec-image

রাঙামাটির দুর্গম এবং গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা রাজস্থলী। এটি আয়তনের দিক থেকে জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা হলেও ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর। ব্রিটিশ আমলে ১৯০৯ সালে রাজস্থলী থানা প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে রাজস্থলী উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।

ঘিলাছড়ি, গাইন্দ্যা ও বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নসহ তিনটি ইউনিয়ন এবং নয়টি মৌজা নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। এ উপজেলার ৯টি মৌজা বোমাং সার্কেলের আওতাধীন ।

২১ হাজারেরও বেশি জনসংখ্যার উপজেলায় মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মুরং, খেয়াং, রাখাইন, বাঙালিসহ ০৭টি জাতিসত্ত্বার বসবাস। কিছু অংশে চাকমা সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে।

জানা যায়, বার্মা বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রাজা মিয়ানমারের বাহিনী বর্মী বারান্ডং সেনাপতির কাছে পরাজিত হয়ে বাংলাদেশে আসার পর ‘বুধুঝিই’ (রাজস্থলীর পূর্ব নাম) এসেছিলেন তার নিজ রাজ্য গড়তে। তাঁর নিজের প্রথা অনুযায়ী রাজ্য গড়ার আগে কলাগাছ রোপন করে দেখা হয়। যত বেশী কলার কাঁদি তত রাজার রাজ্যভিষেক হবে ওই রাজ্যে।

এই নিয়ম মেনে কলা গাছটি রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের থাগড়াছড়ি পাড়ায় রোপন করা হয়। কিন্তু কলার ছড়ায় কাঁদি কম হওয়ায় তিনি এই স্থান ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী বান্দরবান জেলার উদ্দেশ্যে চলে যান। যাওয়ার সময় ওই কলা গাছে রাজার ছোট থলে থেকে যায়। তখন থেকে রাজারথলে নামকরণ হয় এবং পরে তা রাজারথলে থেকে রাজারথলি ও বর্তমান রাজস্থলী নামকরণ করা হয়।

রাজস্থলী উপজেলার পূর্বে বিলাইছড়ি উপজেলা ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা, উত্তরে বান্দরবান সদর উপজেলা এবং দক্ষিণে কাপ্তাই উপজেলার অবস্থান। উপজেলার নিরাপত্তার স্বার্থে রাজস্থলী এবং অপরটি চন্দ্রঘোনা থানার মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

বর্তমানে এ উপজেলাটি আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলে আরাকান আর্মি এবং মারমা ন্যাশনাল পাটির্র (সশস্ত্র গ্রুপ) অবস্থান রয়েছে।

কয়েক বছর ধরে এ উপজেলায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র সশস্ত্র গ্রুপ জুম্ম লিবারেশন আর্মি (জেএলএ) নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কাপ্তাই উপজেলার আংশিক এলাকায় জেএলএ’র সশস্ত্র সদস্যরা প্রভাব বিস্তার করতে পারলেও কাপ্তাই-রাজস্থলী উপজেলা জুড়ে মারমা ন্যাশনাল পার্টি নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখেছে।

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি গাইন্দ্যা ইউনিয়নে জেএলএ’র সশস্ত্র গ্রুপ এবং মারমা ন্যাশনাল পার্টির মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছিলো। উভয় গ্রুপ আধিপত্য বিস্তারে গুলিবিনিময় করলেও হতাহতের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে ২০২২ সালের ২২ মার্চ উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নে দু’পক্ষের বড় ধরণের সংঘর্ষে তিনজন নিহতের খবর জানিয়েছিলো পুলিশ। মাঝে ২০২৩ সালে উভয়র গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ কিছুটা শীতল থাকলেও ২০২৪সালের শুরু থেকে উভয় পক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরকে লড়াই এবং আধিপত্য বিস্তারে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এদিকে ২৭ জানুয়ারি মগ পার্টির কমান্ডার মেজর রণি মারমা ওরফে প্রান্ত ঘোষ রণি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করে জেএলএ’র সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার হুমকি দেন। তবে এ বিষয়ে জেএলএ’র পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ওই উপজেলার স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজস্থলী উপজেলা ভূ-প্রকৃতিগত ভাবে খুবুই গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভবনাময় এলাকা। এ উপজেলা দিয়ে সীমান্ত সড়ক তৈরি হচ্ছে। সড়কটি ভারতের মিজোরামের বর্ডারে মিলিত হবে। অর্থাৎ সড়কটি ঘিরে বরকল উপজেলায় ঠেগামুখ স্থল বন্দর নির্মাণ হওয়ার কাজ শুরুর পথে। এখনি যদি সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা না যায় না তাহলে এ অঞ্চলের উন্নয়নের অগ্রগতি থমকে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।

চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনসারুল করিম বলেন, এলাকার পরিবেশ, পরিস্থিতি ভাল রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন