রামগড়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বৌদ্ধ মূর্তি চুরির মিথ্যা অভিযোগ

ভূমি বিরোধের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা

পার্বত্য নিউজ রিপোর্ট:
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ম্রাইলা কার্বারী পাড়া এলাকায় ভূমি নিয়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মাঝে বিরোধ দেখা দিয়েছে। শুরুতেই এ বিরোধ মিটানোর লক্ষ্যে সিন্দুকছড়ি জোনের সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিরোধ মিটানোর চেষ্টা করলে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কথিত বৌদ্ধ মুর্তি চুরি ও ভাংচুরের অভিযোগ আনে। তবে প্রশাসন,পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সাথে কথা বলে ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া পাওয়া যায়নি।

অুনসন্ধানে জানা যায়, রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের ম্রাইলা কার্বারীপাড়া এলাকার ইঞ্জি. আনোয়ারসহ চারজন ২০১০সালে স্থানীয় কবির আহমদ থেকে একটি জমি ক্রয় করেন। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতিকারী উপজাতীয় সদস্য বিষয়টি ভালো ভাবে নিতে পারেনি। এক পর্যায়ে ময়লাপ্রূ কার্বারীর নেতৃত্বে ময়লাকো মারমা, চাইচুই মারমা, কালু মারমা গংদের সাথে এ ভূমি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় তীব্রভাবে। এরই মধ্যে কয়েকটি উপজাতী পরিবার জমিটি তাদের দাবী করে সেখানে বসতঘর নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়। ফলে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। উত্তেজনা দমাতে গত ১৩ মে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ম্রাইমা কার্বারী পাড়ায় যায়। সেখানে বসবাসরত জমির দাবিদার উপজাতীয় লোকজন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ফলে ১৬ মের পুর্বে তারা উক্ত দখলি যায়গা মুল মালিককে ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেদিন সেখানে কোন বৌদ্ধ বিহার ছিলনা।

পরিস্থিতি যেন ভিন্নখাতে যেতে না পারে তাই দ্রুত এ বিরোধ মেটাতে গত ২২মে সেনাবহিনী গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ভালো ভাবে নিতে পারেনি অবৈধ দখলকার পক্ষ । তাই বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পরে সেখানে নব নির্মিত বৌদ্ধ মন্দিরে মুর্তি চুরির করার অভিযোগ আনে মহলটি।

রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, এমন কোন অভিযোগ পাননি । তবে বৌদ্ধমুর্তি চুরির বিষয়টি সঠিক নয় বলে তিনি আরো জানান।

ম্রাইলা কার্বারী পাড়ার স্থানীয় উপজাতী মহিলারা জানায়, সেনা সদস্যরা বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে আমরা বাধা প্রদান করি। সেনারা এ সময় জানতে চায় তোমরা কার নির্দেশে এখানে বাড়ী নির্মাণ করছ। তারা সেনাবাহিনীকে উত্তর দেন, আমাদের পুর্ব পুরুষেরা এখানে বাস করত তাই আমরাও এখানে বাস করছি। এ জমি আমাদের। পরে সেনাবাহিনী এখানে ঘরবাড়ী তৈরী করতে নিষেধ করে বলে তারা অভিযোগ করে।

১৫ফিল্ড রেজিমেন্ট সিন্দুকছড়ি জোনের লে.কর্ণেল নাজিম খান চুরির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত ২২ মে গুইমারা সাবজোনের একটি নিয়মিত টহল দল ঐ এলাকায় ভূমি নিয়ে বিরোধ ও উত্তেজনা বিরাজের খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ছুটে যায়। সেখানে সেনাবাহিনী কোন রকম অপ্রীতিকর কাজ করেনি। বরং শান্তি শৃংখলা রক্ষার জন্য পাহাড়ী-বাঙ্গালীদেরকে মিলেমিশে একসাথে বসবাস করার জন্য অনুরোধ করেন। একটি মহল পাহাড়ে শান্তি শৃংখলা বিনষ্ট করার জন্য সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মূর্তি চুরির যে মিথ্যে অভিযোগ করছে তা মোটেই সত্য নয়। সেনাবাহিনী সকল ধর্মের মৌলিক বিষয়ে সন্মান করে। কখনো কোন ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত লাগে এমন কাজ থেকে সর্বদা বিরত থাকে ।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সংশ্লিষ্ট একাধিক অভিজ্ঞ মহল এ প্রতিবেদককে জানান, অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র একটি অংশ সব সময় কোনো বিশেষ ভূমি যখন দখল করতে চায় তখন সেখানে ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করে। পরে জমির বৈধ মালিক দখল নিতে গেলে দখলকারী গোষ্ঠীটি ধর্মকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক রূপ দেবার ষড়যন্ত্র করে। নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘর, ধর্মীয় স্থাপনা নষ্ট করে বাঙালী, প্রসাশন ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। আলোচিত ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে তারা মনে করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন