বৃষ্টি হলেই সড়ক যেন পুকুর, চলছে না যানবাহন

রামুতে সড়ক খনন করে উধাও ঠিকাদার, জনদুর্ভোগ চরমে

fec-image

কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা টিলাপাড়া-সওদাগর পাড়া সড়কের কার্পেটিং কাজে ঠিকাদারের চরম অবহেলায় যাতায়াতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ১০ হাজার জনসাধারণ। এক কিলোমিটার সড়ক খনন করার পর সংস্কার কাজ এক মাস ধরে বন্ধ থাকায় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। এ কারণে ওই সড়কে হেঁটে চলাচল করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলে খনন করা সড়কে হাঁটু পরিমা পানি জমে যায়। ফলে আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার মানুষ, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাগ্রামী ছাত্রছাত্রীরাও চলাচলে দুর্ভোগের সম্মুখিন হচ্ছেন।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম জানান, সড়কটির সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে। সড়কজুড়ে এখন গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে যায়। গাড়িও চলছেনা। মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, একবছর আগে সড়কটির সংস্কার কাজের দায়িত্ব পান উখিয়া উপজেলার বাসিন্দা ঠিকাদার শাহজাহান। এরপর পুরো শুষ্ক মৌসুম চলে গেলেও তিনি কাজ শুরু করেননি। এমনকি ওই ঠিকাদারকে কাজের তাগাদা দেয়ার জন্য খুঁজেও পাওয়া যায়নি। পরে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর এ কাজের টেন্ডার বাতিল করে ঠিকাদারকে চিঠি দেন। পরে ওই ঠিকাদার জেলা এলজিইডি অফিসে তদবির করে চলতি বর্ষা মৌসুমে কাজ শুরু করেন। কাজ শুরুর সময় ঠিকদার তাকে (চেয়ারম্যান) যেতে বললেও তিনি ভরা বর্ষা মৌসুম হওয়ায় যাননি।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ও সরওয়ার আলম জানান, কয়েকমাস আগে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা টিলাপাড়া হয়ে সওদাগর পাড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং কাজ শুরু হয়। সংস্কার কাজের শুরুতে পুরনো ইট ও মাটি তুলে সড়কটি খনন করা হয়। কয়েকটি স্থানে সড়কের পাশেই রাখা হয় নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপ। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার মাসখানেক পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার রহস্যজনক কারণে কাজ বন্ধ করলে শুরু হয় জনদুর্ভোগ। বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রকার যান চলাচল।

উখিয়ারঘোনা সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সম্প্রতি উখিয়ারঘোনা সড়কের এই এক কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কয়েকমাস পূর্বে কাজ শুরু করেন। কিছুদিন কাজ করার পর মাস-দেড়েক আগে হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন এ সড়কে গাড়ি চলাচল করতে পারছেনা। লোকজনও চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বিদ্যালয়ে আসা শত শত ছাত্রছাত্রী যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের একাধিক অংশ পুকুরে পরিণত হয়। এছাড়া গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় দূরদূরান্তের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই সড়কটির সংস্কার কাজ দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করা এখন এলাকাবাসীর গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। এ জন্য তিনি সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

উখিয়ারঘোনা সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এক মাসেরও বেশি সময় সড়কটির কাজ বন্ধ রয়েছে। গাড়িও চলছেনা। তাই দূরের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। বৃষ্টি হলে সড়কে হাঁটু পানি জমে যায়। একারণে বৃষ্টি হলে বিদ্যালয়ের কাছের শিক্ষার্থীরাও আসতে পারেনা।

এদিকে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ওই সড়কে চলাচলকারি শতাধিক অটোরিক্সা, ইজিবাইক (টমটম) চালক। এ কারণে সংসারের জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও জানান একাধিক অটোরিক্সা ও টমটম চালক।

রামু উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী মঞ্জুর হাসান ভূঁইয়া জানান, শুরুতে কয়েকজন ইটভাটা মালিক কাজে বাঁধা দেন। এ কারণে যথাসময়ে কাজ হয়নি। প্রথমেই সড়কে ইটের খোয়া ফেলে দিতে পারলে গাড়ি চলাচল সম্ভব হতো। এখন বালি আর বৃষ্টি পানি একাকার হয়ে সড়ক কাদাময় হয়ে গেছে। কাজের মেয়াদ বেশি না থাকায় ঠিকাদারকে বর্ষার মধ্যেই কাজ শেষ করার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছিলো। এরপরও তিনি সহসা সরেজমিন পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য অভিযুক্ত ঠিকাদার মো. শাহজাহানের মোবাইল ফোনে একাধিক কল করা হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন