রামুর মনিরঝিলের সব সড়কই চলাচলের অনুপযোগী, চরম জনদুর্ভোগ

কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বৃহত্তর মনিরঝিল এলাকার প্রধান সড়কসহ গ্রামীণ সব সড়কই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় ভরপুর এসব সড়কে যানবাহন চলাচলও স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে মনিরঝিল ও আশপাশের এলাকার ২০ হাজারের অধিক জনসাধারণ চলাচলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, মনিরঝিলবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ-দুর্দশার চিত্র। প্রধান সড়কটির কোথাও ইট বিছানো, কোথাও কাঁচা। সড়কের ইট বিছানো অংশ জরাজীর্ণ ও বৃষ্টির পানিতে কাদাময় হয়ে গেছে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এতে ঝুঁকি নিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করলেও প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সম্প্রতি হাসপাতালে নেয়ার পথে এক প্রসূতি মা জরাজীর্ণ সড়কেই গাড়ি আটকে গিয়ে সন্তান প্রসব করেন। বিষয়টি সর্বত্র তোলপাড় হলেও এখনো ওই এলাকার সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নে কোন উদ্যোগ দেখেনি এলাকাবাসী।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মালেক জানান, মনিরঝিলের সব সড়ক এখন খানান্দকে ভরে গেছে। এখানকার সড়কগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এলাকার লোকজন এমনিতেই জনপ্রতিনিধিদের উপর ক্ষেপে আছে। এরমধ্যে সড়কে গাড়ি আটকে গিয়ে সন্তান প্রসবের ঘটনায় জনমনে আরও বেশি ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে মনিরঝিল গ্রামের ৩টি ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক ও ছোট-বড় সব সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমনকি সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় এসব সড়কে এখন হেঁটেও চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অথচ এ সড়কে মনিরঝিল গ্রামের ১০ হাজারের বেশি জনসাধারণ এবং পশ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে আসছে। কৃষি নির্ভর এলাকা হওয়ায় কৃষি পণ্য আনা-নেওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষকরাও চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মনিরঝিল গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মীর কাশেম জানান, এখানকার ৩টি ওয়ার্ডের সব সড়ক এখন মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি তাঁর ওয়ার্ডের যে কটি সড়ক রয়েছে তারমধ্যে একটিও চলাচলের উপযোগী নেই। ছোট-বড় সব সড়কে এখন শুধু গর্ত আর গর্ত। একবছর আগে স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং সংসদ সদস্য তাকে কিছু আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন। তা দিয়ে সড়কে সামান্য বালি আর কংক্রিট দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বলতে গেলে এখানকার মানুষ এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এমন অবহেলিত এলাকা আর কোথাও আছে কিনা তার জানা নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা ব্যাংক কর্মচারী নুরুল ইসলাম ও শিক্ষার্থী আশিক জানান, সড়কগুলো চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় এখানে কোন গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিতে লোকজন কষ্ট পেয়েছে। এখন বর্ষা আসতে না আসতেই সড়কগুলো কাদাময় হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরাও যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামশুল আলম জানিয়েছেন, মনিরঝিল গ্রামটি খুবই অবহেলিত এলাকা। অনেকটা প্রতিবন্ধীর মতো। উত্তর দিকে বাঁকখালী নদী, পশ্চিমে সোনাইছড়ি এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পাহাড়। গ্রামটি যেন বন্দি অবস্থায়। অনেকটা দ্বীপের মতো। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বড় ধরনের কোন বরাদ্দ তিনি এখনো পাননি। পরিষদ থেকে বড় কোন বরাদ্ধ দেয়ার সুযোগ নেই। সম্প্রতি ৫০০ মিটার সড়ক সংস্কারের একটি প্রকল্প সংসদ সদস্য বরাদ্ধ দিয়েছেন। তবে বর্ষা মৌসুমে এটি হয়তো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এজন্য বর্ষায় যাতে লোকজন চলাচল করতে পারে এজন্য তিনি উদ্যোগ নেবেন বলে জানান। প্রয়োজনে আগামীতে পরিষদের সকল বরাদ্ধ দিয়ে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করবেন।

রামু উপজেলা পরিষদর নারী ভাইস চেয়ারম্যান আফসানা জেসমিন পপি জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে তিনি ওই গ্রামে গিয়ে সবকটি সড়কের বেহাল অবস্থা দেখেছেন। খানাখন্দকে ভরপুর এ সড়কে একজন নারী বিনা চিকিৎসায়, চরম যন্ত্রণা সয়ে সন্তান প্রসবও করেছেন। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটি তাঁর জন্য চরম লজ্জার।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রামু উপজেলা প্রকৌশলী মঞ্জুর হাসান ভুঁইয়া জানিয়েছেন, নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী সোনাইছড়ি হতে মনিরঝিল স্কুল সংযোগ সড়কের ২ কিলোমিটার অংশ সিটিজি থ্রি প্রকল্পে অনুমোদনের জন্য ডিপিপি’র তালিকায় আছে। যা প্রাক্কলন করে সদর দপ্তরে প্রেরণ করেছেন। অনুমোদন পেলে চলতি অর্থ বছরে কাজটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২ কিলোমিটার সড়ক এইচবিবি দ্বারা উন্নয়ন করা হবে। এছাড়াও প্রধান সড়কের ৫০০ মিটার সংস্কারের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সড়কের কাঁচা অংশে এ মুহূর্তে কোন কাজ করার সুযোগ নেই। কারণ তা একটি প্রকল্পে অনুমোদনের জন্য রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ মে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মনিরঝিল গ্রামের জরাজীর্ণ সড়কে অটোরিক্সায় সন্তান প্রসব করেন হতভাগ্য গৃহবধু আয়েশা ছিদ্দিকা। তিনি মনিরঝিল গ্রামের ২নং ওয়ার্ডের নুরুল ইসলামের স্ত্রী। ওই ঘটনায় সর্বত্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এমন নাজুক সড়ক ব্যবস্থায় এখানকার জনমনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন