রামু উপজেলা চেয়ারম্যান উপ-নির্বাচনে আ’লীগ বিএনপি ও জামায়াতের তিন প্রার্থী মাঠে

10836370_730199173741039_1784657357_n

রামু প্রতিনিধি:

সারাদেশে যখন শীতের আমেজ ছড়িয়ে পড়ছে ঠিক তখন রামুতে উত্তাপ ছড়িয়েছে উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন। কাঙ্ক্ষিত এ নির্বাচনের বাকী আছে মাত্র ২০ দিন। ২০দিন পরেই রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের পর্দা নামবে। এ নির্বাচনে কে হাসবেন শেষ হাসি এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে বসত বাড়ির আঙ্গিনা থেকে চায়ের দোকান কিংবা খেলার পাঠ থেকে অফিস পাড়া পর্যন্ত।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণা আর ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ নির্বাচনে শাসকদল আওয়ামীলীগ, বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থিত তিন প্রার্থীর ত্রিমুখী লড়াই হবে জমজমাট। দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলো। এজন্য নিজেদের মতো করেই আগাম গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারনাসহ দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিতও করছে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জামায়াত।

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন, রামু উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বিগত নির্বাচনে পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজ উল আলম। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম আহমেদুল হক চৌধুরীর বড় ছেলে মেরাজ আহমেদ মাহিন চৌধুরী এবং জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ মো. হাসান দলের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

আ’লীগের ৫, বিএনপি’র ২ ও জামায়াতের ১ জনের মনোনয়ন বৈধ:

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত ৫ জন, বিএনপি সমর্থিত ২ জন এবং জামায়াত সমর্থিত ১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সবক’টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। রামু চৌমুহনী বণিক সমবায় সমিতি লি:’র সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল আলম চৌধুরী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত জমা দেননি। আগামী ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং ৪ ডিসেম্বর প্রার্থীদের অনুকুলে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হেব।

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন রামু উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বিগত নির্বাচনে পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজ উল আলম। দলের একাধিক সূত্র তাঁর দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে শেষ মূহুর্তে হলেও মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে পারেন বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থী ও খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ এমনটাও বলেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

এছাড়াও দলের মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থী ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুসরাত জাহান মুন্নী, উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি নুরুল কবির হেলাল ও রামু উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো: সালাহ উদ্দিন।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মরহুম আহমেদুল হক চৌধুরীর বড় ছেলে মেরাজ আহমেদ মাহিন চৌধুরী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে উপ-নির্বাচনের প্রতিদ্ধন্ধিতা করছেন এটা প্রায় চুড়ান্ত। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে মরহুম আহমেদুল হক চৌধুরীর সহধর্মিনী আনোয়ারা বেগমও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

তবে শেষ মুহুর্তে বিএনপিতেও প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে কেউ উড়িয়ে দিতে রাজি নয়। বিএনপির পক্ষে দু‘জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করলেও আহমেদুল হক চৌধুরীর বড় ছেলে মেরাজ আহমেদ মাহিন চৌধুরীর প্রতিদ্বন্ধিতার বিষয়টি দলীয়ভাবে নিশ্চিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করে রামু উপজেলা বিএনপি নেতা সৈয়দ মো. আবদুস শুক্কুর ও টিপু সুলতান বলেছেন, তাকে বিজয়ী করতে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

রামু উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার পর থেকেই গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াত সমর্থিত একক প্রার্থী রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ মো. হাসান। চলতি বছর ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য রামু উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জামায়াত নেতা ফজলুল্লাহ মো. হাসান। ওই নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বি ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ফজলুল্লাহ মো. হাসান বলেন, তিনি এবার জয়ের লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

চলতি বছর ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত রামু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপি সভাপতি আহমেদুল হক চৌধুরী ৩৩ হাজার ৩০৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা জামায়াতের আমীর ফজলুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান ২১ হাজার ২১৩ ভোট, আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মাবুদ ১৯ হাজার ২৪১ ভোট এবং উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল ৮ হাজার ৩৭৪ ভোট পেয়েছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার ৪ মাস পর রামু উপজেলা চেয়ারম্যান আহমেদুল হক চৌধুরী গত ১১ আগস্ট ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয়ে যায়।

এ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মেরাজ আহমেদ মাহিন চৌধুরী বলেন, তার পিতা মরহুম আহমেদুল হক চৌধুরীকে রামুর সর্বস্তুরের মানুষ বিপুল ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছিলেন। নির্বাচিত হলেও অসুস্থতার কারণে তারা পিতা মানুষের এতো বিশাল ভালোবাসার প্রতিদান না দিয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে যান। পিতার প্রতি মানুষের এ ভালোবাসার প্রতিদান দিতেই তিনি এ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। নির্বাচিত হলে রামুর বিরাজমান সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি ও মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবেন।

রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া জানিয়েছেন, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ-উল-আলম‘র প্রতিদ্বন্ধিতার বিষয়টি দলীয়ভাবে নিশ্চিত হয়েছে। একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক ও সমাজসেবক হিসেবে রিয়াজ-উল-আলম‘র সুনাম রয়েছে। রামুর উন্নয়নে তার মতো তরুণ ও মেধাবী রাজনীতিকের বিকল্প নেই। রিয়াজ-উল-আলমকে বিজয়ী করতে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ কাজ করবে।

মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নমূলক রাজনীতির ধারা সৃষ্টির লক্ষ্যেই তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রিয়াজ-উল-আলম বলেন, নির্বাচিত হলে স্থানীয় সাংসদ এবং সরকারের পদস্থ ব্যক্তিদের সাথে সমন্বয় করে রামু উপজেলাকে মডেল উপজেলায় রূপান্তর এবং পর্যটক বান্ধব রামু গড়তে কাজ করে যাবেন।

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ মো. হাসান জানিয়েছেন, বিগত উপজেলা নির্বাচনে তিনি বিপুল জনসমর্থন পেয়েছিলেন। ইতিপূর্বে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রেখেছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবারও তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন