রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সময়মতো আসেন না অধিকাংশ শিক্ষক

fec-image

প্রাত্যহিক সমাবেশ চলাকালে ২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারির মধ্যে উপস্থিত মাত্র ৭ জন

কক্সবাজারের রামু উপজেলার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। অভিযোগ রয়েছে, এ বিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষক যথাসময়ে বিদ্যালয়ে আসেন না। বুধবার (১ নভেম্বর) বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের দেরিতে আসার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদিন সকাল ১০টায় প্রাত্যহিক সমাবেশের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারি রয়েছেন ২৭ জন। কিন্তু সকাল ১০.৫ মিনিটে বিদ্যালয়ে আসেন মাত্র ৭ জন।

বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০.৫ মিনিটের পূর্বে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর আহমদ, সিনিয়র শিক্ষক নাজনীন আকতার মেরী ও আবুল কালাম, খন্ডকালীন শিক্ষক জসিম উদ্দিন এবং অফিস সহকারী অনু বড়ুয়া। তবে এসময় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না থাকলেও বিদ্যালয়ের প্রাত্যহিক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র শিক্ষক আবদুর রশিদ ও খন্ডকালীন শিক্ষক শিপন বড়ুয়া। এছাড়া প্রাত্যহিক সমাবেশ চলাকালে সকাল ১০.১১ মিনিটে বিদ্যালয়ে আসেন আরও ৪ জন শিক্ষক। প্রাত্যহিক সমাবেশ শেষে সকাল ১০.১৫ মিনিটে বিদ্যালয়ে আসেন আরও দুইজন শিক্ষক। ওইসময় অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারিদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি দেখা যায়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর আহমদ শিক্ষকদের দেরিতে আসার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, যথাসময়ে বিদ্যালয়ে আসার জন্য তিনি শিক্ষক-কর্মচারিদের বারবার তাগাদা দিয়ে আসছেন। কিন্তু সবাই তাতে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি আরও জানান, শিক্ষকরা এখানে দলাদলিতেও জড়িয়ে পড়ে। এরপরও শিক্ষার মান ভালো বলে দাবি করেন তিনি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা জানান, শিক্ষকদের দেরিতে আসার বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। এ নিয়ে তিনিও বারবার তাগাদা দিয়েছিলেন। এখন দেরিতে আসা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও জানান, মাসখানেক পূর্বে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তাপ্তি চাকমা আকষ্মিকভাবে এ বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসেছিলেন। ওইসময় তিনি মাত্র দুইজন শিক্ষককে বিদ্যালয়ে যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে দেখেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তাপ্তি চাকমা জানান, তিনি নিজে এসেও শিক্ষকদের দেরিতে আসার প্রমাণ পেয়েছিলেন। বিষয়টি তিনি দেখবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, অনেক শিক্ষক বিদ্যালয়ে দেরিতে আসেন। এমনকি অনেকে প্রাত্যহিক সমাবেশের পরে আসেন। কয়েকজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানোর কারণে দেরিতে আসেন। ১১টা, ১২টার পরও বিদ্যালয়ে আসেন কয়েকজন শিক্ষক। এমনকি বিদ্যালয়ে নিয়মিত না এসে হাজিরা খাতায় রহস্যজনকভাবে স্বাক্ষরও করেন শিক্ষকরা।

শিক্ষকদের এমন গাফেলতির কারণে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। কেবল শিক্ষক-কর্মচারি নয়, বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রীকেও দেরিতে আসতে দেখা যায়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক আবুল কালাম জানান, দীর্ঘদিন একজন পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যত্র থেকে হলেও সৃষ্টিশীল ও প্রশাসনিকভাবে দক্ষ একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে পূর্বের সুনাম ফিরে আনা সম্ভব। এটা শিক্ষক পরিষদ ও ছাত্র-অভিভাবকদেরও সময়ের দাবি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন