রোহিঙ্গারা আসছেই, জানাচ্ছে নিধনযজ্ঞের রোমহর্ষক তথ্য

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রাখাইন থেকে এখনো আসছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা বলছে, রাখাইনে আগের মতো প্রকাশ্যে নির্যাতনের ঘটনা তেমন ঘটছে না বটে, নির্যাতন বন্ধ হয়নি।

মিয়ানমারের সেনা ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গাদের অস্ত্র আর লাঠি দিয়ে আগের মতো নির্যাতন না করলেও হুমকি-ধমকি দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে, বাঁচতে চাও তো চলে যাও ওপারে!

গতকাল শুক্রবার সকালে টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপের হারিয়াখালী নামক স্থানে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদেরই একজন সোলেমা খাতুন (৭০)। তিনি এসেছেন রাখাইনের বুচিদং এলাকার সিংদিপ্রাং গ্রাম থেকে। রাখাইনের ধাওনখালী থেকে নৌকাযোগে গতকাল ভোররাতে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে শাহপরীর দ্বীপে পা রেখেছেন। সঙ্গে একমাত্র জীবিত জ্যেষ্ঠ সন্তান নুুরুল আলম। জনপ্রতি মিয়ানমারের এক লাখ কিয়েত (মুদ্রা) করে নৌকা ভাড়া দিতে হয়েছে সোলেমাদের।

রোহিঙ্গা নারী সোলেমা খাতুনের জীবনেও ২৫ আগস্ট পরবর্তী নির্মমতার ট্র্যাজেডি রয়েছে। সোলেমা খাতুন হারিয়েছেন তাঁর স্বামী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে। স্বামী আবদুর রহমানকে রাখাইন সন্ত্রাসী ও সেনারা মিলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আর রাখাইন সন্ত্রাসীরা ধারালো দা দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে পুত্র মোহাম্মদ আলম, মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আলম ও কন্যা হাবিয়া খাতুনকে।

পুড়িয়ে দিয়েছে বাড়িঘর। এমন ট্র্যাজেডির পরও সোলেমা খাতুন ছেড়ে আসতে চাননি বাপ-দাদার স্মৃতিধন্য জন্মভূমি রাখাইন। নিজেদের বাড়ি ছাই। এক সন্তান ছাড়া আর কেউ নেই। দুজন এ পাড়া থেকে ওই পাড়া নিরাপত্তা খুঁজেছেন। পালিয়ে বেশ কিছুদিন পাহাড়েও ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বড় ছেলে নুরুল আলমকে সঙ্গে নিয়ে দুই সপ্তাহ আগে সোলেমা খাতুন রওনা দেন বাংলাদেশের দিকে। দুই দিন আগে তাঁরা পৌঁছেন শাহপরীর দ্বীপের ওপারে ধাওনখালীতে। গতকাল সকালে কয়েকটি নৌকাযোগে শাহপরীর দ্বীপের হারিয়াখালীতে এসে পৌঁছে ৬৭৮ জন রোহিঙ্গা। তাদেরই সঙ্গে আসেন সোলেমা ও তাঁর সন্তান নুরুল আলম।

গতকাল আসা রোহিঙ্গাবহরের আরেকজনের নাম রহিমুল্লাহ (৬৫)। তিনি জানান, তাঁরা সবাই বুচিদং এলাকার বাসিন্দা। সেখানে বর্তমানে খাদ্যের বড়ই অভাব চলছে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতাও আছে। এসব কারণে বাকি রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে চলে আসছে। রোহিঙ্গা রহিমুল্লাহ জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চির মধ্যে তাঁদের (রোহিঙ্গা) স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে যে আলাপ চলছে তাতে তাঁদের মোটেই আস্থা নেই।

গতকালই এই রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গারা জানায়, যদি রাখাইনে শান্তি ফিরে আসে এবং মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আন্তরিক হয় তাহলে তারা অবশ্যই ফিরে যাবে নিজ দেশে।

 

সূত্র: কালের কণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন