রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা বাংলা মাধ্যমে নয়

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক

দেশে সাময়িক আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া শেখানো হবে না। শুধু বাংলা মাধ্যমেই নয়, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়েও তাদের শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হবে। দায়িত্ব নিয়ে কেউ রোহিঙ্গা শিশুদের লেখাপড়া শেখাতে চাইলে তাদের পড়াতে হবে বার্মিজ ভাষায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) ড. এ এফ এম মনজুর কাদির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের লেখাপড়ার দায়িত্ব আমাদের নয়।

এমনিতেই মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিক হিসেবে মানতে চায় না। এরপর যদি রোহিঙ্গারা বাংলা শেখে, তাহলে সে সুযোগ নেবে মিয়ানমার। নীতিগতভাবেই তাদের বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া করানো যাবে না। বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি তাদের শেখানোর সুযোগ নেই। যদি কেউ তাদের পড়াতে চায়, তাহলে রোহিঙ্গাদের মাতৃভাষা শেখাতে হবে।’

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার সেনাবাহনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্যই শুধু এ বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা নয়। এ ঘটনার আগে আসা রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও এ বাধ্যবাধকতা থাকবে।

এই বাধ্যবাধকতার পরও কক্সবাজারের মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা শিশুদের ভর্তি করানোর অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে বাংলাদেশিদের সহায়তায় বাংলা লেখাপড়া করছে বলেও জানা গেছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন গ্যারেজে চাকরি করা রোহিঙ্গা তরুণরা নাম প্রকাশ না করে জানান, রোহিঙ্গা শিশুরা বাংলাদেশিদের সহায়তায় বাংলা বর্ণ ও অক্ষর শিখছে। তাদের লিখতে ও পড়তে ভালো লাগছে বলেও জানান তিনি।

মুয়াজ বিন জাবালের দুই রোহিঙ্গা শিশু ছাত্রকক্সবাজারের স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘মাদ্রাসায় ভর্তি হতে কোনও কিছুর দরকার হয় না। তাই তারা মাদ্রাসায় আরবি ও বাংলা লেখাপড়া শিখছে।’
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও কিছু জানে না। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা) রওনক মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘স্কুল-মাদ্রাসায় কোনোভাবেই রোহিঙ্গা শিশুদের ভর্তি করার কথা নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে শিশু আড়াই লাখের বেশি। সমাজসেবা অধিদফতর শনিবার পর্যন্ত ৩০ হাজার ৩৩৯ জন এতিম শিশু শনাক্ত করেছে।

জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট থেকে আসা ৩৩ হাজার ৫৬২ জন রোহিঙ্গা শিশুকে বার্মিজ ভাষায় লেখাপড়া শেখানোর জন্য ২৮১টি উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ বাংলাদেশের কমিউনিকেশন ম্যানেজার এ এম শাকিল ফাইজুল্লাহ বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আসা লেখাপড়া করানোর মতো শিশু পাওয়া গেছে ৩৩ হাজার ৬৫২ জন। এদের লেখাপড়ার জন্য এরই মধ্যে ২৮১টি স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এসব শিশুদের বার্মিজ ভাষায় উপ-আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাসহ মোট ১২ লাখ মানুষকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার টার্গেট রয়েছে বলে জানান এ এম শাকিল ফাইজুল্লাহ। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে তাদের সবাইকে মাতৃভাষাতেই লেখাপড়া করানো হবে।

রোহিঙ্গা শিশুদের লেখাপড়া করানোর বিষয়ে সম্প্রতি বাধ্যবাধকতার উল্লেখ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও। তিনি জানান, ‘এখন পর্যন্ত অনাথ শিশুর সংখ্যা চার হাজার এবং অন্য শিশুর সংখ্যা ২৪ হাজার। এসব শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে তাদের বাংলা ভাষা নয়, বার্মিজ ভাষাতেই শিক্ষা দেওয়া হবে।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন