ডুলাহাজারা এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে

শিক্ষার্থীদের অনৈতিক কাজে বাঁধা দেয়ায় ২৪ শিক্ষক অবরুদ্ধ

fec-image

বিশ্ব শিক্ষক দিবসের দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে নাজেহাল ও অবরুদ্ধ হলেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) এইচএসসি ইংরেজি ২য় পত্রের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সুবিধা না দেয়ায় পর পরীক্ষার্থীরা এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

শিক্ষক অবরুদ্ধের খবর পেয়ে সঙ্গীয় পুলিশ টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাহাত উজ জামান। পরে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের উদ্ধার করেন তিনি।

অবরুদ্ধ শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন চকরিয়া সরকারি কলেজের ৯ জন, চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজের ৬ জন, সিটি কলেজের ৬ জন ও কর্মাস কলেজের ৩ জন।

জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রাম কর্তৃক এইচএসসি পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখ মোতাবেক বৃহস্পতিবার ছিল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার দিন। ওইদিন উপজেলার ডুলাহাজারা কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরীক্ষা কেন্দ্রে তিনটি কলেজের বিভিন্ন বিভাগের ২৪ জন শিক্ষক কক্ষ পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই কলেজ কেন্দ্রে শুধুমাত্র ডুলাহাজারা কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করেন। তাদের পরীক্ষা গ্রহণে দায়িত্বরত শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের অসৎ উপায় অবলম্বল ও অনৈতিক কাজে বাধা দেয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের কোন ধরণের সুযোগ-সুবিধা না দেয়ায় কারণে কলেজের শিক্ষার্থীরা দায়িত্বরত কক্ষ পর্যবেক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে যান। পরীক্ষা শেষে ও জাতীয় শিক্ষা দিবসে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ, হুমকি-দামকি দিয়ে কলেজ কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন জানতে পেরে দ্রুত অবরুদ্ধ শিক্ষকদের নিরাপদে গন্তব্যে সরিয়ে নেন।

চকরিয়া সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম জানান, পরীক্ষার শুরু থেকে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা চালায়। তাদের অনৈতিক কাজে বাঁধা দেয়া হয়। পরীক্ষা শেষে খাতা জমা দেয়ার পর সকল শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে নানা হুমকি-ধামকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে থাকে। তারা নিরাপদ আশ্রয় নিতে অধ্যক্ষের কক্ষে যান। অথচ কেন্দ্রে কলেজ কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করে। পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন ডুলাহাজারা কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রশাসনকে খবর দেয়া হলে দ্রুত এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার করেন।

এদিকে, বিশ্ব জাতীয় শিক্ষক দিবসের দিনে ডুলাহাজারা পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের এমন ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা।

তাদের দাবী, যে কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সম্মান দিতে জানে না, ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকিসহ অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে পারে এধরণের নিন্দনীয় ঘটনার জন্য দায়ী হিসেবে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রটি বাতিল চেয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডুলাহাজারা কলেজ কেন্দ্রে কক্ষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করা এক প্রভাষক বলেন, ওই কলেজের শিক্ষার্থীদের যে অশ্লীন আচরণ তা কখনো শুভকর নয়। ২০২৪ সাল থেকে ডুলাহাজারা কলেজ কেন্দ্রে কোন শিক্ষকও কক্ষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে যাবেন না বলেও জানান তিনি।

ডুলাহাজারা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যতটুকু জানি চকরিয়া কলেজ, মহিলা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষকরা মিলে এখান থেকে কেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য এটি ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের এ ঘটনা নিয়ে কোন ধরণের নিরব ভূমিকা ছিলনা। কলেজের বর্তমান দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে উত্তম কুমার চৌধুরী।

ঘটনার বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি এখনো কলেজের দাযিত্ব গ্রহণ করি নাই। আগামী ৯ তারিখের মিটিংয়ের পরে দায়িত্ব দেযার কথা রয়েছে। তবে ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাইনি।

চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাহাত উজ জামান জানান, ডুলাহাজারা কলেজর পরীক্ষা কেন্দ্রে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। মূলত শিক্ষকরা অবরুদ্ধ ছিলনা। শিক্ষার্থীরা ঘটনা করবে এমন আশঙ্কায় ছিলেন শিক্ষকরা। পরীক্ষায় দায়িত্বরত সকল শিক্ষকদের নিরাপদ গন্তব্যে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন