শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার ছাড়ছে মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি শেভরন

fec-image

শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারের গ্যাস ফিল্ডের সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি শেভরন।

এর আগে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে সংঘটিত সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করেছিল কোম্পানিটি। এর পর থেকে দেশটিতে রাষ্ট্রীয় গ্যাসফিল্ডের অংশীদারত্ব ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করে আসছে শেভরন।

২০২২ সালে শেভরন বলেছিল, মিয়ানমার থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেবে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটি মিয়ানমারের ইয়াদানা গ্যাসক্ষেত্রের ৪১ দশমিক ১ শতাংশ মালিকানা বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

সে সময় কানাডার এমটিআই এনার্জির কাছে শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার কথা জানালেও দামের অংক প্রকাশ করেনি।

চলতি সপ্তাহে শেভরনের একজন মুখপাত্র জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে মিয়ানমার ছেড়ে যাবে শেভরন। তবে কখন থেকে তা কার্যকর হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কোনো তারিখ জানাননি তিনি।

এমটিআইয়ের কাছে শেয়ার বিক্রি নিয়ে কোনো সমস্যার কথাও তিনি বলেননি। ওই মুখপাত্র বলেন, ‘‌আমরা মিয়ানমারে সব সম্পদ বিক্রি করে বেরিয়ে যাব। চুক্তি সই হয়ে গেছে। তবে চুক্তির শর্ত গোপনীয়।’

বাইডেন প্রশাসন সম্প্রতি মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি এমওজিইর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির সামরিক জান্তাকে আর্থিক চাপের মুখে ফেলতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে এ নিষেধাজ্ঞা শেভরনের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলবে কিনা তা এখনো অনিশ্চিত।

সেনাবাহিনী ২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমার সংকটের মধ্যে পড়েছে। ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়নের ফলে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সেনারা বিদ্রোহ করেছে। দেশব্যাপী তারা সামরিক জান্তা প্রতিরোধী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সামরিক বাহিনীর হাতে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর অভিযোগ তুলেছেন। সহিংসতা বন্ধের আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে জান্তা সরকার বলছে, তারা ‘‌সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।

ইয়াদানা গ্যাসক্ষেত্রের শেভরনের শেয়ার কেনায় অ্যাকটিভিস্টদের চাপের মুখে পড়েছে এমটিআই। এ ব্যাপারে এখনই রয়টার্সকে কোনো মন্তব্য জানাতে রাজি হয়নি কোম্পানিটি।

রয়টার্সের একটি সংবাদে বলা হয়েছে, বারমুডায় অবস্থিত এমটিআইয়ের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ইটি মার্টিম হোল্ডিংসের কাছে শেভরন তার শেয়ার বিক্রি করেছে। এ বিষয়ে ইটি মার্টিম হোল্ডিংসের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ফরাসি জ্বালানি তেল ও গ্যাস গ্রুপ টোটালএনার্জিস ২০২২ সালে ইয়াদানা গ্যাস প্রকল্প ছেড়ে দেয়। সে সময় শেভরন টোটালএনার্জিসের শেয়ার কিনে নিলে মার্কিন কোম্পানিটির মালিকানার পরিমাণ ২৮ শতাংশ থেকে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে।

মার্তাবান উপসাগরে অবস্থিত ইয়াদানা গ্যাসক্ষেত্রটি প্রতি বছর প্রায় ৬০০ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উত্তোলন করছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ এমওজিই গৃহস্থালি কাজে সরবরাহ করে। বাকি ৭০ শতাংশ রফতানি করা হয় প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে।

বর্তমানে ইয়াদানা গ্যাস প্রকল্পে জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন মিয়ানমারের এমওজিই ও শেভরন ছাড়াও থাইল্যান্ডের জাতীয় এনার্জি কোম্পানি পিটিটির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পিটিটিইপির মালিকানা রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি, মিয়ানমার, শেভরন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন