সংরক্ষিত বনের বাঁশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা : বেকার হবে ২০ হাজার মানুষ

Rangamati Baghaichari pic-9.06.13

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সংরক্ষিত বন থেকে সকল প্রকার বাঁশ আহরণ ও বিপণনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি বনবিভাগের এক বিজ্ঞপ্তি মূলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গত ১ জুন থেকে কার্যকর হওয়া নোটিশের কারনে এতে বাঁশ আহরণ, সরবরাহ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় ২০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম জুন,জুলাই ও আগষ্ট মাসে বাঁশের বংশ বিস্তারের উপযুক্ত সময়। এ সময়ে কোনো কোনো প্রজাতির বাঁশ রাইজমের মাধ্যমে আর কোনো প্রজাতি বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে থাকে। তবে বনাঞ্চলে বাঁশগুলো প্রাকৃতিকভাবে জম্মায়।

এসকল বাঁশ তিন বছর পর পরিপূর্ণ লাভ করে এবং কাটার উপযোগী হয়। বাঁশ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রণীত কার্যকরী পরিকল্পনার ২২৩ নম্বর অনুচ্ছেদের ১১ উপ-অনুচ্ছেদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রতিবছর এ মৌসুমে বাঁশ কাটা নিষিদ্ধ থাকে। গত ৫ মে পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর বনবিভাগের বন কর্মকর্তা মো. এস,এম কায়চার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞিপ্তিতে এ সব তথ্য জানা গেছে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মাচালং, লক্ষ্মীছড়ি ও শিজক সংরক্ষিত বনে প্রায় দুই লাখ একর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ একর বনভূমিতে বাঁশ বন। এবস বনভূমি থেকে প্রতি বছর গড়ে অর্ধকোটির বেশি নানা প্রজাতির বাঁশ কর্ণফুলী কাগজ কলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এসব বাঁশ বনে উপর নির্ভলশীল প্রায় ১০ হাজার মানুষ। তাঁরা সংরক্ষিত বনে বসতি করে বাঁশ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়া বাঁশ পরিবহণ ও ব্যবসা উপর নির্ভলশীল প্রায় ১০ হাজার মানুষ।  
তবে ২০০৮ সালে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক একর বাঁশ বনে  মড়ক লেগে যায়। এতে যেমনি বাঁশের উপর নির্ভলশীল মানুষ চরম অর্থ সংকটে পড়েন। তেমনি কাপ্তাই কর্ণফলী কাগজ কলে কাঁচামালের সংকট দেখা দেয়। তখন থেকে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক সংরক্ষিত বনের বাঁশ রাঙ্গামাটি বাইরে নেওয়ার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছয় বছর পর আবার মড়ক লাগা বাঁশ বনে পরিপূর্ণ বাঁশ হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাঁশ আহরণকারীরা অভিযোগ করেন, প্রতি বছর তিন মাস বেকার সময় পার করতে হয়। সংরক্ষিত বনের ভেতর বাঁশ আহরণ ছাড়া কোনো কাজ নেই। এসব এলাকায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ও সরকারিভাবে জুম চাষ নিষেধ। তাই বাঁশ কাটা (আহরণ) বন্ধ থাকলে অনেক পরিবার না খেয়ে থাকতে হয়।

লক্ষ্মীছড়ি সংরক্ষিত বনের কলাবন্যা গ্রামের লক্ষ্মীচন্দ্র চাকমা , বিরো কুমার চাকমা ও ধন্টু চাকমা  বলেন, আমাদেরকে সবসময় বঞ্চিত রাখা হয়। আমরা সংরক্ষিত বনে বসবাসরত দশ হাজারের বেশি মানুষ বাঁশ আহরণের উপর নির্ভলশীল। তিন মাস অর্থ অভাবে দুবির্ষহ জীবন-যাপন করতে হয়। অথচ মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে সরকার জেলেদের ভিজিএফ চালু করেছে, কিন্তু আমরা যুগ যুগ ধরে বাঁশ আহরণ করে আসছি।

বাঘাইহাট বাঁশ পরিবহরণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আকবর হোসেন বলেন, আমরা প্রতি বছর মাচালং সংরক্ষিত বনের ৩০ থেকে ৩৫ লাখ বাঁশ পরিবহণ করি। এছাড়া লক্ষ্মীছড়ি ও শিজক অঞ্চলের বাঁশগুলো আলাদা। বনের মধ্যে একটি বাঁশ ১৫ থেকে ২০ টাকা। বাজার দর এর চেয়ে দ্বিগুন বলে তিনি জানান।
বাঘাইহাট বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আতাউর মজিদ বলেন, এখানে বাঘাইহাট, লক্ষ্মীছড়ি, মাচালং ও শিজক সংরক্ষিত বন থেকে বাঁশ আহরণ করা হয়।

বাঁশ আহরণ ও পরিবহণের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ জড়িত। বাঁশ আহরণ বন্ধ থাকলে অনেক নিরীহ মানুষ অর্থ সংকটে পড়েন। তবে যাঁরা নিতান্ত বাঁশ আহরণের উপর নির্ভলশীল তাঁদের তিন মাস ভিজিএফ চালু করা প্রয়োজন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর বনবিভাগের বন কর্মকর্তা মো. এস,এম কায়সার বলেন, ১ জুন থেকে ৩১  আগস্ট পর্যন্ত সকল প্রকাশ বাঁশ আহরণ ও পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এবিষয়ে বিভিন্ন এলাকায় সকল রেঞ্জ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় আইনানুগ গ্রহনের জন্য নিকটস্থ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের অনুরোধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।  

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন