সন্তু লারমার দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা দুদকে

fec-image

পুলিশ সদস্য টারজান খীসা। কর্মরত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) নিরাপত্তারক্ষী (গানম্যান) হিসেবে। পুলিশে কর্মরত থাকা অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) ব্যবসায়। বিট মানি গ্লোবাল ডট নেট নামে ওয়েবসাইট খুলে গ্রাহকদের দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখান। এভাবে তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের অসহায় মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। এক পর্যায়ে লাপাত্তা হয়ে যান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমার সাবেক এ নিরাপত্তারক্ষী। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার। এবার তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১৭ মে) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা করেন, সংস্থার সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম। মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ২৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করে ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জানা গেছে, টারজান খীসার (৪২) গ্রামের বাড়ি রাঙামাটির কোতয়ালী থানাধীন কল্যাণপুর সড়ক এলাকায়। তার বাবার নাম যতীন প্রকাশ খীসা। বর্তমানে পুলিশের চাকরি থেকে বরখাস্ত রয়েছেন তিনি।

দুদক সূত্র জানায়, টারজান খীসা সরকারি কর্মচারী হয়েও অসৎ উদ্দেশ্যে প্রকৃত পরিচয় গোপন করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যবসায়ী পরিচয়ে ব্যাংকে হিসাব খোলা, লেনদেন করা এবং এমএলএম ব্যবসার নামে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে পাঁচ মাসে দ্বিগুণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে ২৩টি ব্যাংক হিসেবে আমানত গ্রহন করে ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা লেনদেন করে স্থানন্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করার অপরাধ করেছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, টারজান খীসা সন্তু লারমার দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রাঙামাটিতে বিট মানি গ্লোবাল ডট নেট নামে একটি এমএলএম কোম্পানি খুলে দ্বিগুন লাভ পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমনাত রাখেন। তার কথায় বিশ্বাস করে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের হাজার হাজার মানুষ কোম্পানিটিতে টাকা জমা রাখেন।

ভুক্তভোগীরা বলেন, দ্বিগুণ লাভের কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেন। এসব টাকা তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিবেং এন্টারপ্রাইজে (এমএলএম) বিনিয়োগ করেন। টাকা নেওয়ার সময় গ্রাহকদের কোন রশিদ বা ডকুমেন্ট দিতেন না। শুধুমাত্র বিট মানি গ্লোবাল ডট নেট নামের ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের হিসাব প্রদর্শন করে বুঝ দিতেন।

ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, নির্ধারিত সময় শেষে গ্রাহকরা টাকা চাইতে গেলে টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি ধামকি ও ভয় দেখাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে ২০১৭ সালের ২৬ মে টাকা ফিরে পেতে সরকারের সহায়তা চেয়ে রাঙামাটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, বিনিয়োগের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিলেও টারজান খীসা সব টাকা নিজের নামে খোলা বিভিন্ন ব্যাংকের ২৩টি অ্যাকাউন্টে জমা করেন। এরমধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ১৭টি, ইসলামী ব্যাংকে ৩টি, আইএফআইসি ব্যাংকে ২টি এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ১টি একাউন্ট খোলেন। এসব অ্যাকাউন্টে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা লেনদেন করেন।

দুদকের তদন্তে বলা হয়, টারজান খীসা এমএলএম প্রতিষ্ঠান ইউনিপে টু ইউর প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ২০১১ সালে ইউনিপে টু ইউর রাঙ্গামাটি জেলার প্রধানের দায়িত্বে থাকা উদ্দীপন চাকমার সঙ্গে টারজান খীসার সখ্যতা আছে। তিনি ইউনিপে টু ইউর রাঙ্গামাটি জেলার ‘সেকেন্ড ম্যান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া তার মেয়ে বর্তমানে ভারতের মিজোরামে পলাতক উদ্দীপন চাকমার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছেন বলেও জানা যায়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, টারজান খীসা ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পুলিশের নায়েক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি পুলিশের নায়েক পদে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এর আগে সন্তু লারমার রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) কর্মী ছিলেন।

নিউজটি ভিডিওতে দেখুন:

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন