সমস্যার বেড়াজালে মানিকছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: ১১ বছর যাবৎ এক্স-রে মেশিন বাক্স বন্দি!

অনিয়ম

ইমরান হোসেন :

মানিকছড়ির একমাত্র ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি সমস্যার বেড়াজালে জর্জরিত। চিকিৎসক, ঔষধ ও ভবন সঙ্কটের পাশাপাশি লো-ভোল্টেজের কারণে ১১ বছর যাবৎ অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিনটি বাক্স বন্দি! চাকার অভাবে ৩ মাস এ্যাম্বুলেন্স অচল। ১১জনের স্থলে চিকিৎসক মাত্র ৩ জন। ফলে প্রতিনিয়ত সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ। বর্তমানে হাসপাতালটি নিজেই রোগাক্রান্ত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও রামগড় (একাংশ) উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র স্বাস্থ্য সেবার আশ্রয় কেন্দ্র এবং মংরাজার আবাসস্থলের এ হাসপাতালটি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত হলেও জরাজীর্ণ টিনসেট ঘরে ১১ শয্যায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এর কার্যক্রম। প্রশাসনিক প্রধান ব্যাতিত ১১ জন ডাক্তারের স্থলে বর্তমানে কর্মরত ৩ জন! এর মধ্যে আবার ডেন্টাল সার্জন রয়েছেন ডেপুটেশনে। ফলে মূলত ২ জন চিকিৎসক দিয়ে দেড় লক্ষাধিক লোকের সেবা কেমন হচ্ছে তা হয়তো পাঠকের বুঝতে বাকি নেই।

সমস্যার ভারে আজ ঐতিহ্যবাহী মংরাজার প্রজারা সু-চিকিৎসা থেকে পদে পদে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন রোগী আ্উট ডোরে দেখা এবং তিন উপজেলার সীমান্তবর্তী রোগির ভিড়ে কর্তৃপক্ষ বেসামাল। খাগড়াছড়ি-চট্রগ্রাম সড়ক ঘেঁষে এবং সহজে চমেক হাসপাতালে যাতায়াতের সুবিধা উপলব্ধি করে প্রতিনিয়ত রোগীরা এখানে এসে ভিড় জমায়। ফলে ১০ শয্যার ঔষধ মাসের ১৫ দিন যেতে না যেতেই শেষ হয়ে যায়। রোগীদের রুমে পর্যাপ্ত আলো, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল।

এছাড়া খাবার ভেন্যু অবস্থা দেখলে মনে হয় এখানে সবাই যেন এতিম অথবা ভিখারী বাস করছে। নুন আনতে পানতা নেই অবস্থা! ২০০৪ খ্রি. তৎকালীন সরকার ৩০০ এম.এ একটি (Listem Korea) এক্স-রে মেশিন দিলেও একমাত্র লো-ভোল্টেজের কারণে আদৌ এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে এখানকার রোগীরা ৩৫কি.মিটার দূরে ফটিকছড়ি গিয়ে নিন্মমানের মেশিনে ডায়াগনস্টিক কাজ সারাতে হয়। এতে তারা সঠিক রোগ নির্ণয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি কিছু দিন পর পর চাকা ও তেলের বরাদ্ধের অভাবে অচল হয়ে পড়ে। গত ৩/৪ মাস ধরে চাকার অভাবে এটি অচল হয়ে আছে।

উপজেলা তৃণমূল কালাপানি থেকে শিশুর চিকিৎসা নিতে আসা মরিয়ম বিবি গত বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, এখানে টোকেন ছাড়া কিছুই নেই, প্যারাসিটামল পর্যন্ত পাই নি। সব বাহির থেকে কিনতে হয়।

ভর্তি রোগী আমেনা খাতুনের অভিভাবক মো রুস্তম আলী অভিযোগ করে বলেন, ঔষধ নাই, তাই বলে কী সেবা ও নেই! নার্সদের ব্যবহার ভালো না, ওরা রোগিকে ঔষধের ডোজ দেয়ার সময় চা-নাস্তার অজুহাতে টাকা খোঁজে। রুমে দূর্গন্ধ, খাবার নিন্মমানের। পানিতে প্রচুর আয়রণ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগী! সেবা দেয়ার মতো সাধ্য ছাড়া কিছুই নেই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার অবহিত করার পর ও শূন্যপদে চিকিৎসক বদলি, ভবন নির্মাণ এবং গাড়ির চাকার বরাদ্দ পাচ্ছি না। বর্তমান পাঁচটি চাকাই নষ্ট। বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ থাকায় অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিনটি স্থাপনের (২০০৪) পর আদৌ এটি চালু করা যায়নি। অথচ জনবল রয়েছে, সেবার মান বাড়াতে প্রতিনিয়ত স্টাফদের প্রতি নজরদারী করা হয়। ২/১ জনের কারণে অনেক সময় রোগীদের সাথে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

উপজেলা আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, এক্স-রে মেশিনটি চালু করতে হলে ৩৮০ ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রয়োজন অথচ এখানে ২২০ ভোল্ট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। তবে অচিরেই এ সমস্যা কেটে যাবে। কারণ মানিকছড়িতে একটি সাব স্টেশন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন