সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের চাপের মুখে রাঙামাটি মৎস্য বিভাগের ১৮২ প্রকল্পের দরপত্র বাতিল

tender-tenderbaji

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
রাঙ্গামাটিতে সরকারদলীয় কিছু নেতা কর্মীদের চাপ এবং হুমকির মুখে মৎস্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে আহবান করা ১৮২টি ক্রীক (মাছ চাষের জন্য বাধঁ) নির্মাণ কাজের জন্য আহবানকৃত দরপত্র বাতিল করে দিযেছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে এ কাজ বাতিল করা হয়। প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ের ৫৪টি গ্রুপের ১৮২টি প্রকল্প বাতিল করে দেয়ার সংবাদে রাঙ্গামাটি শহরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকারদলীয় কিছু নেতা কর্মীদের চাপ এবং হুমকির কারণে শেষ পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজের দরপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের চাপ এবং হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে জানিয়েছেন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উক্ত প্রকল্পের দরপত্রের কাজ বাতিল করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার পচিঁশটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার জন্য নেয়া এসব প্রকল্প বাতিল হওয়ায় কয়েক লক্ষ জনগন এর সুফল থেকে বঞ্চিত হলো। ইতিমধ্যে আহবানকৃত দরপত্রের বিপরীতে অনেক ঠিকাদার সিডিউলও ক্রয় করেছে। দরপত্র আহবান করার পরও অনিবার্য কারন দেখিয়ে হঠাৎ করে এ কাজ বন্ধ করে দেয়ায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, সরকারের মৎস্য ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যচাষ উন্নয়ন ও সম্প্রসারন প্রকল্প(৩য় পর্যায়) নামের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সে প্রকল্পের অধীনে পার্বত্য তিনটি জেলার পচিঁশটি উপজেলার প্রত্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ঝিরি ও পাহাড়ের মধ্যে ক্রীক তৈরী করে তাতে মাছ চাষের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ৫৪টি গ্রুপের মাধ্যমে ১৮২টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। দরপত্র আহবান করে ইতিমধ্যে জাতীয় ও আঞ্চলিক একাধিক দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও দেয়া হযেছে। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি হিসেবে আহবান করা দরপত্রের আগামী ১৩ই ফেব্রুয়ারী ছিল বিক্রয়ের শেষদিন এবং ১৬ই ফেব্রুয়ারী দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন।

উক্ত দরপত্র রাঙ্গামাটিসহ খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা মৎস্য অফিসেও বিক্রয়ের জন্য বলা হয়। সরকারের কোড নং ৫-৪৪৩১-৫০১৩ প্রকল্পটি উন্নয়ন বাজেট(জিওবি)  অর্থের সহায়তা ছিল।
সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, রাঙ্গামাটি জেলা মৎস্য অফিস থেকে ও উক্ত দরপত্রের সিডিউল বিক্রি  করা হয়। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতাকর্মী মৎস্য  বিভাগের কর্মকর্তা কর্মীদের সিডিউল বিক্রি না করার জন্য চাপ দেয় এবং বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি বাতিল করে এলটিএম পদ্ধতি করার জন্য বলে। কিন্তু প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী এলটিএম পদ্ধতি হিসেবে দরপত্র আহবান করা যাবেনা এ ধরনের কথা বললে সরকার দলীয় নেতা কর্মীরা তা মানতে নারাজ। পরবর্তীতে উপায়ন্তর না দেখে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিদের্শে গতকাল সোমবার শেষ বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রায় ১১ কোটি টাকার এ প্রকল্পের দরপত্র অনিবার্য কারন দেখিয়ে বাতিল করে দেয়।

রাঙ্গামাটি জেলা মৎস্য অফিসের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, প্রকল্পের মধ্যে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি থাকায় তা এলটিএম পদ্ধতিতে করা যায়নি। কাজ ভাগিয়ে নিতে না পারার কারনে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী অনেকটা তাদের উপর ক্ষুদ্ধ ছিল। এই প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়ার কারনে পার্বত্য প্রত্যন্ত এলাকায় মৎস্য সম্প্রসারন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরী হয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যচাষ উন্নয়ন ও সম্প্রসারন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক আঃ রহমান পার্বত্যনিউজ প্রতিনিধিকে জানান, যে নিয়মে প্রকল্প অনুমোদন আছে সেভাবেই এ প্রকল্পের আওতায় প্রত্যন্ত এলাকায় মাছ চাষ বৃদ্ধি করার জন্য এসব ক্রীক নির্মানের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। সরকার দলীয় কিছু নেতাকর্মীর চাপের কারনে এ প্রকল্পের আহবানকৃত দরপত্র বাতিল করা হয়েছে কীনা সে প্রসঙ্গে তিনি কিছু বলতে নারাজ। উর্ধতন কর্তপক্ষের নির্দেশে তা বাতিল করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রকল্প পরিচালক ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আঃ হান্নানের সাথে যোগাযোগের জন্য মুটোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন