সরকারদলীয় নেতার ছেলে ও তার বন্ধু কর্তৃক রাঙামাটির লংগদুতে কিশোরী ধর্ষিত !
আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:
সরকারদলের ছত্রছায়ায় থেকে সাজানো মিথ্যা মামলায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম পিতাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে রাতে অন্ধকারে দুইজন মিলে উঠিয়ে নিয়ে ধর্ষণ শেষে নির্যাতন করে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে রাঙামাটি লংগদু উপজেলার বৈরাগী বাজারের নবী হোসেন ও সিরাজ নামের দুই নরপশু। ধর্ষকদের অবিরত হুমকির মুখে প্রথমে থানায় গিয়ে মামলার চেষ্টা চালালে থানা কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয় ডাক্তারি সার্টিফিকেটের জন্য। অন্যথায় মামলা নেওয়া যাবে না।
অনন্যোপায় হয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দুইদিন থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছ থেকে সার্টিফিকেট চাইলে তিনি একটি ছাড়পত্র (যাতে লেখা রয়েছে সেক্সুয়াল এসাল্ট) দিয়ে বলেন এটি নিয়ে থানায় যান মামলা নিবে। পরে আবারো লংগদু থানায় গিয়ে মামলা নিতে বললে প্রথমে থানা কর্তৃপক্ষের গড়িমসি করে পরে মামলা গ্রহণ করে থানা পুলিশ। কথাগুলো জানালেন, দুই নরপশু দ্বারা ধর্ষণের শিকার রাঙামাটি লংগদু উপজেলার বৈরাগী বাজারস্থমহাজন পাড়ায় বসবাসরত দরিদ্র পরিবারের হতভাগ্য কিশোরী আমেনা আক্তার (১৭) ছদ্মনাম।
কিশোরী জানায়, তাদের নিজস্ব জমি অবৈধভাবে দখলে নিতে বারংবার চেষ্টা করেও না পেরে জমিজমা সংক্রান্ত মিথ্যা মামলায় আমার বাবা আব্দুল হাইকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। বাবার অনুপস্থিতিতে আমরা অর্ধাহারে অনাহারে দিনানিপাত করছি। এমন সময় গত ৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত দুইটার সময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে এলে প্রতিবেশি নবী হোসেন ও সিরাজ আমার মুখে কাপড় গুজে ঘর থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে। প্রথমজন নবী কর্তৃক ধর্ষণ শেষে পরে যখন সিরাজ আমাকে ধর্ষণ করতে চাইলো তখন ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আমার মুখের কাপড় সরে গেলে আমি চিৎকার করতে থাকি। এসময় আমাকে প্রচন্ড মারধর করে তারা দুইজন। পরে আমার চিৎকারে আমার আম্মা ও দাদি এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে। এসময় নবী ও সিরাজ পালিয়ে যায়। পরে আমি ও আমার দাদি মিলে ১০সেপ্টেম্বর দুপুরে লংগদু থানায় গিয়ে মামলা করতে চাইলে ডাক্তার সার্টিফিকেট ছাড়া আমাদের মামলা নেবে না বলে জানিয়ে দেয় থানা পুলিশ। পরে রাঙামাটি শহরে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ডাক্তারি ছাড়পত্র নিয়ে লংগদু থানায় গিয়ে মামলা করি। জেনারেল হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে ভিকটিম কিশোরীটি জানায়, আসামীরা এলাকায় আমাদের প্রচন্ড রকমের হুমকি দিচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে রাঙামাটি চলে এসেছে আমার পরিবার।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক ডাঃ নীহার রঞ্জন নন্দী জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মেয়েটির শরীরে আঘাতের চিন্হ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ব্যাপারে রিপোর্ট হাতে পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ভাই আমি ঘটনার দিন এলাকায় ছিলাম না। রাঙামাটি শহরে ছিলাম, তবে আমি ঘটনাটি শুনেছি। এরপর আমি থানায় যোগাযোগ করলে এব্যাপারে থানা কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে বলে আমাকে জানিয়েছে।
লংগদু থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালামের মুঠো ফোনে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, এব্যপারে থানায় মামলা হয়েছে যার নাম্বার হলো ৪ তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাজতো আসামী গ্রেফতার করা। কিন্তু থানায় মামলা হলে কেউ কি আর ঘরে বসে থাকে, মামলার কথা শুনে পালিয়ে যায়। খুইজা মুইজা ধরমু আরকি আমরা। আর মামলা হলেই কি কেউ কি আর পুলিশের সামনে এসে বলে যে আমাকে গ্রেফতার করেন। যে যেভাবে পারে সরে যায়’- উল্লেখ করে ওসি জানালেন, আমরা প্রমান সাপেক্ষে আসামি ধরি।
এদিকে এলাকায় খোজঁনিয়ে জানাগেছে, অভিযুক্তরা এরআগেও এলাকায় বেশ কয়েকটি অপকর্ম করলেও সরকারদলের ছত্রছায়ায় থেকে বারবার পার পেয়ে যায়। আর তাদের এসব অপকর্মের সামলানোয় সার্বিক সহযোগিতা করছেন উপজেলা পরিষদের একজন জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলের লংগদু উপজেলার প্রভাবশালী এক নেতা। তাদের আর্শিবাদে এরই মধ্যে নারী নির্যাতন, যুবককে ধরে এনে ইলেকট্রিকের কাজে ব্যবহৃত প্লাস দিয়ে টেনে পায়ের নখ তোলে ফেলাসহ অসংখ্য অপকর্ম করে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে।