সাগরে ২০০ বাংলাদেশি-রোহিঙ্গার মৃত্যু: কঠোর অবস্থানে ৩ দেশ
নিউজ ডেস্ক:
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই পাওয়া অবৈধ অভিবাসী ও শরণার্থীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে সাগর পথে নৌকায় করে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীর অন্তত ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক গণমাধ্যম এবিসি নিউজ এ খবর দিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার জেলেরা ৬৭৭ অভিবাসীকে জীবিত উদ্ধার করে ডাঙ্গায় নিয়ে যান। উদ্ধারের পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল, নৌকায় জল ও খাবারের সংকট পড়লে যাত্রীরা সংঘর্ঘে লিপ্ত হন এবং এতে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা সাগরের ভয়াবহ স্মৃতির কথা উল্লেখ করে জানায়, তাদের মধ্যে অন্তত ২০০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর বেশিরভাগ প্রাণহানিই ঘটেছে নৌকা থেকে অভিবাসীদের ফেলে দিয়ে। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, নৌকা ছেড়ে পালিয়েছিলেন স্বয়ং নাবিক।
তবে এবিসি নিউজ বলছে, খাবার সংকটে সংঘর্ষ ও দুই শ’ অভিবাসীর মৃত্যুর খবরটির সত্যতা যাচাই করা অসম্ভব। ভাষাগত সমস্যার কারণেও অভিবাসীদের অভিযোগ ও বর্ণনার সঠিক চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় এবিসি নিউজ।
মৃত্যুঝুঁকিতে ৬০০০ অভিবাসী
মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া উপকূল এবং আন্দামান সাগরে এখনও মৃত্যুঝুঁকিতে প্রায় ছয় হাজার অভিবাসী। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এ ব্যাপারে জোরালো উদ্যোগ না নিয়ে দোষ চাপানোর কূটনৈতিক খেলা শুরু করায় এবং উপকূল থেকে অভিবাসীদের নৌকা তাড়িয়ে দেয়ায় এ সংকট আরও তীব্রতর হয়েছে।
অভিবাসীদের উদ্ধার না করতে ইন্দোনেশিয়ার নির্দেশ
সাগরে ডুবে মারা গেলেও ভাসমান আর কোনো বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গা মুসলমানকে উদ্ধার না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার জেলেরা।
ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের জেলেরা গতকাল (সোমবার) জানান, আন্দামান সাগরে নৌকায় ভাসতে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ডুবে মরতে বসলেও তাঁদের যেন আর উদ্ধার না করা হয়, সেনা কর্মকর্তারা সেই নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে গত সপ্তাহে আচেহ উপকূলে অন্তত ৭০০ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাকে সাগর থেকে উদ্ধার করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
ওই নির্দেশের ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ফুয়াদ বাসায়া বলেন, “জেলেরা বিপদে পড়া নৌকার আরোহীদের খাবার, পানি ও জ্বালানি দিয়ে বা ক্ষতিগ্রস্ত নৌকা মেরামত করে সহায়তা দিতে পারবে। কিন্তু তাঁদের উপকূলে ভিড়িয়ে আনা হবে অবৈধ অনুপ্রবেশ।”
আচেহর সুমাত্রা দ্বীপের পূর্ব উপকূল থেকে জেলেরা গত শুক্রবার নৌবাহিনীর সহায়তায় দুটি নৌকা থেকে ৭৪৭ জনকে উদ্ধার করেছেন। এর মধ্যে একটি নৌকায় ছিলেন ৭০০ জন। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে জেলেদের প্রতি ওই নির্দেশ জারি করা হলো।
বিদেশিদের ঢুকতে দেবে না মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়-বিষয়ক মন্ত্রী শহিদান কাসিম গতকাল বলেন, স্থানীয় অভিবাসন আইনের বিধিনিষেধের কারণে তার দেশ বিদেশিদের অবৈধভাবে প্রবেশ করতে দিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তাঁরা যা করতে পারবেন তা হলো আশ্রয়প্রার্থীদের খাবার ও জ্বালানির মতো সামগ্রী দিয়ে পাঠিয়ে দিতে।
থাইল্যান্ডের কড়াকড়ি
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার কঠোর অবস্থানের মধ্যে থাইল্যান্ডও তার উপকূলে টহলরত নৌযানগুলোকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌযানের ওপর কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, কোনোভাবেই ওই সব নৌযান যাতে থাইল্যান্ড পানিসীমায় ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে অভিবাসীরা
জানা গেছে, আটকেপড়া বোটগুলোতে অভিবাসীরা বেঁচে আছেন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে। তাদের দেহ হাড্ডিসার। ফ্যাল ফ্যাল করে ওরা তাকিয়ে রয়েছেন সমুদ্রের উত্তাল জলরাশির দিকে। রোগে ভুগে, ক্ষুধায় কাতর এসব মানুষ। তাদের পান করার মতো পানি নেই। খাবার, পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় অধৈর্য হয়ে পড়ছেন সবাই। এ নিয়ে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে মারামারিতে বহু মানুষ নিহত হন।
আন্তর্জাতিক আহ্বানে সাড়া নেই
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ওই অঞ্চলের সরকারগুলোকে দ্রুত এসব মানুষের জীবন রক্ষার আহ্বান জানালেও তাতে কোনো সাড়া মিলছে না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ফিল রিচার্ডসন বলেছেন, বিপন্ন এসব মানুষকে নিয়ে ত্রিমুখী খেলা বন্ধ করতে হবে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এখনও সমুদ্রে ভয়াবহ অবস্থায় ভাসছে কয়েক হাজার মানুষ, যাদের বেশির ভাগই মৃত্যুর মুখে পতিত, তাদের খাবার নেই, পানি নেই এমন কি তারা জানে না তারা এখন কোথায় আছেন। তবে মালয়েশিয়া সরকার বলেছে, এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের পাশাপাশি আসিয়ানভুক্ত সব সদস্য দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে।-আইআরআইবি।