সীমান্তের ৭ চৌকি পুনরুদ্ধারে মরিয়া মিয়ানমার বাহিনী, দিনভর প্রচণ্ড গোলাগুলি

fec-image

বেসামাল হাজারো লোক, গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে ২শত নারী-শিশু, আশ্রয় শিবির খুলেছেন উপজেলা প্রশাসন।

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের আমতলীমাঠসহ ৭ টি সীমান্ত চৌকি পুনর্দখলে নিতে মরিয়া মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। শনিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে সীমান্তের ৪৩ থেকে ৫০ নম্বর পিলার এলাকায় এ ঘটে।

এ লক্ষ্যে শুক্রবার রাতভর সেই চৌকি গুলো ঘিরে রেখে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে গুলি ছুঁড়তে থাকে চৌকি দখলে থাকা বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে। অবরুদ্ধ বিদ্রোহী (আরকান আর্মি নয়) গোষ্ঠীর যোদ্ধারা এখনো অবরুদ্ধ। এভাবে ৭ টি চৌকির অন্তত ৫শত বিদ্রোহীকে ঘিরে রেখেছে সরকারি বাহিনী। এতে হতাহতের খবর পেলেও সে বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছে না কেউ।

তবে বিদ্রোহীদের এক সোর্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ পার্বত্যনিউজকে জানান, শনিবার বিকাল নাগাদ মিয়ানমারের ৩০ জন এবং তাদের ৬ যোদ্ধা এ ঘটনায় নিহত হয়। যাদের লাশ জঙ্গলে পড়ে রয়েছে।

সূত্র নিশ্চিত করে বলেছেন,এ দখল-পুনর্দখল নিয়ে এ গোলাগুলির ঘটনা চলছে সেই সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এ সংবাদ লেখা অবধি। এ গোলাগুলি থেকে বেশ ক’টি গুলি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়লেও গণমাধ্যম কর্মীরা বৃষ্টির মতো গুলির পরিস্থিতিতে এ সবের তুলতে যেতে পারছে না।

অপর দিকে গোলাগুলির ঘটনার বিষয় নিশ্চিত করছেন নাইক্ষংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন। তিনি জানান, গুলিতে অল্পের জন্যে রক্ষা পেয়েছেন তিনিসহ ২ গণমাধ্যমকর্মী। বিকেলে তিনি এলাকা সীমান্তের গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আসা লোকজনের খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে হঠাৎ মিয়ানমার থেকে একে-৪৭ রাইফেলের কয়েকটি গুলি চেরারমাঠের ইলিয়াছ ও ইউনুসের ধান ক্ষেতে পড়ে। তখন অসংখ্য আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ জড়ো হয়। যাদের অনেকের পরিবার তখন বাড়ি ছেড়ে নিরাপদে চলে গেছেন। বাকিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি আরো জানান, এর আগে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে মিয়ানমার সেনা বাহিনীর সাথে অন্য একটি স্বশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয় আমতলী মাঠ নামক এলাকায় মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর একটি চৌকিতে। যেটি দীর্ঘ দেড় মাস ধরে বিদ্রোহীদের দখলে ছিলো। তারা সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে তা দখল করে। তার ধারণা মিয়ানমার সেনারা শক্তিসঞ্চয় করে এ ক্যাম্পগুলো পুনরুদ্ধারের জন্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটায়।
তিনি আরো জানান, হঠাৎ সীমান্তের এ অংশে গোলগুলির আওয়াজ শুনে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে আসছে নিরাপদে। এ জন্যে তাদেরকে জরুরি সেবা দেয়ার জন্যে অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। যেটি স্থানীয় চাকঢালা জুনিয়র হাইস্কুলে। সেখানে খাবারের ব্যবস্থাও করেছেন উপজেলা প্রশাসন। তার মতে, গোলাগুলির ঘটনায় কয়েক গ্রামের ২ শতাধিক মানুষ এখন পালিয়ে এসেছে। আরো প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৪৪ পিলার নিকটবর্তী আবদুর রহমান, মোহামাদ হাশেম ও সাহাব মিয়া জানান, যেন অরাজক পরিস্থিতি। শনিবার ২২ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে প্রথম একে -৪৭ রাইফেলস এর ১টি গুলির আওয়াজ শুনেন তারা। বেলা ১২টা থেকে বৃষ্টির মতো ভারী অস্ত্রের গুলির আওয়াজ তাদেরকে তটস্থ করে তুলে। শিশু ও নারীরা দিগ্বিদিক পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে স্বজনদের বাসা বাড়িতে।

তারা আরো বলেন, প্রথমে তারা বাড়ি না ছাড়লেও বেলা ২টার পর সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম থেকে লোকজন নিজেদের গরু-ছাগল নিয়ে পালিয়ে এসেছে আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি গুহাতে। পরে বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে লোকজন আশ্রয় নিচ্ছে।

৪৫ নম্বর পিলার এলাকার ইউপি মেম্বার ছাবের আহমদ জানান, তার এলাকাসহ ৭ সীমান্ত চৌকি পুনর্দখলে নিতে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।

৫০ নম্বর পিলারের বাসিন্দা ডা. আবদুল মান্নান জানান, দুপুরে অনেক গোলাগুলি হয়েছে মিয়ানমান সীমান্ত চৌকির দিকে। সেখানে কিছু একটা হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আতঙ্কিত কিছু লোক সীমান্ত থেকে পালিয়ে আসার খবর পেয়ে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে ব্যবস্থা করা হয়েছে। অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে লোকজনকে শিবিরে নিয়ে আনার ব্যবস্থা করছেন তারা।

চেয়ারম্যান, মেম্বার, গ্রাম পুলিশ ও চৌকিদার-দফাদারদের নিবিড়ভাবে এসব দেখার জন্যে বলা হয়েছে। তিনি নিজেও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন।

১১ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন রিসিভ হয় নি। তবে বিজিবির একটি সূত্র দাবি করেন, তারা সব কিছু অবজারভেশনে আছে। সতর্ক রয়েছেন তারা। তাদের টহলও জোরদার করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গোলাগুলি, মিয়ানমার, সীমান্ত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন