সোনালী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি: ৩০ কোটি টাকার ভুয়া ঋণে জর্জরিত ৫০৬ দিনমজুর

fec-image

রাঙামাটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলার নাম লংগদু। এ অঞ্চলের হতদরিদ্র গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে একটি চক্র প্রতারণার ফাঁদ ফেলে ৩০ কোটি টাকার ঋণের ভারে জর্জরিত করেছে। বর্তমানে ভুক্তভোগীরা ঋণের বোঝা টানতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। আবার অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে গেলে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে একটি গ্রুপ লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদম এবং বগাচত্বর ইউনিয়নের ৫০৬ জন দিনমজুরকে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করে এবং তাদের লংগদু উপজেলা সোনালী ব্যাংক থেকে প্রত্যেককে এক হাজার টাকা নগদ অর্থ হাতে ধরিয়ে দেয়।

এরপর পার হয়ে গেছে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়। হঠাৎ করে সোনালী ব্যাংক থেকে ওই ব্যক্তিদের কাছে ঋণ পরিশোধের নোটিশ আসতে থাকে। হতদরিদ্র এসব মানুষ দুঃশ্চিতায় পড়ে যায়। তারা ঋণ না নিয়ে কেন ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়েছেন এ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। এরপর কেঁচো কুঁড়তে গিয়ে সাপ বেড়িয়ে আসার গল্প।

এ ঘটনা চারদিক ছড়িয়ে পড়লে ভাসান্যাদম এবং বগাচত্ত্বর এলাকার ভুক্তভোগীরা এক হতে থাকে। এরপর তারা স্থানীয় প্রশাসন এবং ব্যাংক ম্যানেজারের শরাপন্ন হয় বিষয়টি সমাধানে। প্রত্যককে আশার বাণী শুনালেও কেউ সমাধানের পথা দেখাতে পারিনি।

ভুক্তভোগী এসব মানুষেরা অভিযোগের তীর ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, উপজেলার সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন ম্যানেজার প্রফুল্ল বাবু, স্থানীয় মো. হাতেম, কালাম ওরফে মিষ্টি কালাম এবং মো. জামাল গং চক্র মিলে ভুক্তভোগীদের সরকারি প্রণোদনার নামে তাদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহণ করে। বিনিময়ে সোনালী ব্যাংক থেকে প্রত্যককে এক হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়। এরপর মাফিয়া চক্রটি ভুক্তভোগীদের আইডি কার্ডের সামনে নাম, ঠিকানা ঠিক রেখে পিছনের ঠিকানা পরিবর্তন করে নেয়।

অসাধু উপায় অবলম্বন করে এসব মানুষের নামে চক্রটি ব্যাংক থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ঋণ তুলে ফেলে নিজেরা ভাগ-বাটায়োরা করে ফেলে। বর্তমানে সুদে তা দাঁিড়য়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকায়। ৫০৬ জন হতরিদ্র মানুষ কোটি টাকার ভুয়া ঋণে দুঃশ্চিন্তায় দিন পার করছেন এবং সমাধানের পথ খুঁজছেন।

বগাচত্ত্বর ইউনিয়নের বাসিন্দ জেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০০৮ সালে আমার কাছ থেকে স্থানীয় কয়েক এসে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলে। এর কিছুদিন পর উপজেলার সোনালী ব্যাংকে নিয়ে আমাকে সারাদিন বসিয়ে রেখে বিকেলে এক হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দেয়। এত বছর পর শুনি সোনালী ব্যাংক ঋণ বাবদ আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা পাবে। ঋণ পরিশোধের জন্য আমাকে একটি নোটিশ দিয়েছে।

ভাসান্যাদম এলাকার বাসিন্দা স্কুলের দপ্তরীর চাকরি করা আইনাল উদ্দিন বলেন, আমি ঋণ না নিয়ে কেন ঋণ পরিশোধ করবো। প্রয়োজনে জেলে যেতে রাজি; তবুও ভুয়া ঋণ আমি পরিশোধ করবো না।

ভাসান্যাদম এলাকার বাসিন্দা লাকড়ি বিক্রেতা হাজেরা বেগম বলেন, আমি জঙ্গল থেকে লাকড়ি (জ্বলানী কাঠ) এনে বিক্রি করি। অনেক সময় ভিক্ষা করি। আমি কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করবো?

লংগদু উপজেলার সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর ম্যানেজার আবুল হাসেম এ বিষয়ে কোন কথা বলছে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে কথা বলতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ আছে বলে জানান তিনি।

লংগদু উপজেলার চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বারেক সরকার বলেন, তৎকালীন সময়ে মাইনী মুখ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় অনেকের প্রত্যয়নপত্র সাক্ষর করেছি। চক্রটির এমন কাজ অমানবিক। আমি ব্যাংক ম্যানেজারকে বলেছি তাদের (ভুক্তভোগীদের) ঋণ গ্রহণে চাপ না দিতে। বিষয়টি আমি সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে অবগত করেছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন