স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বিদায় ২০২৬ সালে

fec-image

বর্তমানে অর্থনীতি, জাতীয় উৎপাদন ও জনজীবনের যে গতিপ্রকৃতি, তা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২৬ সালেই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বিদায় নেবে বাংলাদেশ, নেপাল এবং লাউস; ঢুকবে উন্নয়নশীল দেশের গোত্রে।

বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃসরকার সংগঠন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন- ডব্লিউটিও) সম্মেলন শেষ হয়েছে গত শুক্রবার। সেই সম্মেলনে স্বল্পোন্নত তালিকাভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি, জিডিপি, জনজীবন, মাথাপিছু আয়সহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই শেষে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন নেপালের জাতীয় দৈনিক দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট।

ডব্লিউটিও’র বর্তমান তালিকায় বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ রয়েছে ৪৫টি। এসব দেশের মধ্যে সবার আগে এই তালিক থেকে বেরিয়ে উন্নয়ন বাংলাদেশ, নেপাল ও লাওস। পরবর্তী বছরগুলোতে একে একে আরও ১৫টি দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশেল তালিকায় ঢুকবে বলে জানা গেছে। এই ১৫টি দেশের মধ্যে ১০টি ডব্লিউটিও’র পূর্ণ সদস্য।

সম্মেলনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যরাষ্ট্রগুলো এই মর্মে একমত হয়েছে যে, যেসব স্বল্পোন্নত দেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হবে, তারা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্য ও পরিষেবা বিক্রয়ে শুল্ক মওকুফ ও কোটা সুবিধা পাবে। কৃষি, শিল্প, মেধাসম্পত্তি ও অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর হবে এ সুবিধা।

গত বছর ডিসেম্বরে কাতারের রাজধানী দোহায় বসেছিল ডব্লিউটিও’র সম্মেলন। সেই সম্মেনে বাংলাদেশ ও নেপালের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যেতে সক্ষম হয়েছে।

স্বল্পোন্নত দেশ বলতে যাদের বোঝায়
সাধারণভাবে বলতে গেলে— যেসব দেশের অর্থনীতি, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামো ও জনসংখ্যা সংক্রান্ত যাবতীয় সূচক নিম্নে অবস্থান করছে সেগুলোই স্বল্পোন্নত দেশ। তবে জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী, যেসব দেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ১৮ ডলারের নিচে— সেগুলোকে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ বলা যায়।

এলডিসি তালিকাভুক্ত দেশগুলোর জনগণ পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত অভাবে ভোগেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার নিম্ন থাকে, ফলে শিক্ষিত জনসমষ্টির হারও থাকে কম। এছাড়া অধিকাংশ অনুন্নত দেশ অর্থনীতি ভঙ্গুর এবং পরিবেশগত নানা চ্যালেঞ্জের মুখে থাকে এ দেশগুলো।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর চ্যালেঞ্জ
৫ মার্চ জাতিসংঘের কাতার সম্মেলন থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত এই দেশগুলোর সম্মিলিত মোট জনসংখ্যা প্রায় ১১০ কোটি, অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশের বসবাস এই ৪৫টি দেশে। কিন্তু এসব দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশই দারিদ্র্যে অথবা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন যাপন করছে।

বৈশ্বিক অর্থনীতির ধাক্কা, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে এসব দেশের অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক অবস্থা সবসময়েই টালমাটাল থাকে।

বৈশ্বিক জলবায়ুবিদদের মতে, এই শতাব্দির শেষের দিকে বিশ্বের তাপমাত্রা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। যদি তাদের এই আশঙ্কা সত্যি হয়— সেক্ষেত্রে সীমাহীন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে বিশ্বের স্বল্পোন্নত ব্লক।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনীতি, বাংলাদেশ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন