মিয়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত

৭টি সীমান্ত চৌকি দখলে নিতে মরিয়া সশস্ত্র যোদ্ধা কারা?

fec-image

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৭টি সীমান্ত চৌকি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠা সশস্ত্র যোদ্ধা এরা কারা? যারা সীমান্তে শনিবার (২২ অক্টোবর) সারা দিন গোলাগুলির ঘটনা ঘঠিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাংলাদেশে। যার কারণে বাড়ি-ঘর ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে অন্যত্র রাত কাটাতে হচ্ছে ২ শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে। আর তারা এখনও সীমান্ত সড়কের মাঝে মধ্যে টহল দিচ্ছে আর গুলি ফুটাচ্ছে থেমে থেমে ।

এভাবে একের পর এক সীমান্ত আইন লঙ্ঘনকারী যোদ্ধারা কী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডো নাকি জান্তা বিরোধী আরকান আর্মির কমান্ডো! এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।

তবে অনেকেই বলেছেন, এরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডো। যারা আড়াই মাস আসে এ চৌকি গুলোর দখল হারিয়ে ফেলে তাদের সেনা ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারাই শুক্রবার (২১ অক্টোবর) থেকে সে সব চৌকি পুনরুদ্ধারের গোলাবর্ষণ করেছে দিনভর ।

অপর একাধিক সূত্র দাবি করেন, নতুন করে দখলবাহিনী বিদ্রোহী আরকান আর্মির কমান্ডো। সীমান্তের জিরো পয়েন্ট ও মিয়ানমারের ওপার থেকে আনা গরু চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জের ধরে আরএসইউ (আরকানসলিডারিটি ইউনিট) সাথে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় তারা। শক্তি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশী থাকায় তারা আরএসইউকে শিক্ষা দিতে এ ঘটনা ঘটায় বলে দাবি করেন আরকান আর্মির একাধিক সূত্র।

এদিকে সীমান্ত চৌকিতে ১৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধের পর পালিয়ে এসে জিরো লাইনে অবন্থান নেয়া যোদ্ধা শব্বির আহমদ ও মীর আহমদ পার্বত্যনিউজকে বলেন, এরা মিয়ানমার সেনাবাহিনী নয়। তারা আরকার আর্মির কমান্ডো। তারা বিশ্বাস ঘাতক। অন্যদিন তারা টহলে আসলেও তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করতো। কিন্ত শুক্রবার হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে বিনা প্রস্তুতিতে তাদেরকে ঘিরে ফেলে তারা । এক সাথে তাদের দখলে থাকা ৭ চৌকিতে হানা দেয় সে কমান্ডোরা । এর মধ্যে ৪টা চৌকি তারা দখলে নেয়। বাকি ৩টার বিষয়ে গরু ব্যবসা নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তির পর সিদ্ধান্ত হবে। সে বৈঠক হবে আজ কালের মধ্যে। বৈঠকের মধ্যস্ততা করছেন আরসা নেতা আতা উল্লার এক আস্তাভাজন কমান্ডার। তিনি গত ১২ ঘণ্টা ধরে সীমান্তের ৪২ পিলার নিকটবর্তী এ অজ্ঞাতস্থানে এ বৈঠকের ব্যবস্থা করছেন বলে নিশ্চিত করেন এ যোদ্ধারা।

শব্বির আহমদ ও মীর আহমদ আরো বলেন, উভয় বিদ্রোহী সংগঠন সম্মত হলে নিজেদের মধ্যে আর হানাহানি করবে না তারা। একযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়বে।

তাদের মতে, গত শনিবার ও রবিবারের ঘটনায় উভয় পক্ষের ১৭ জন সশস্ত্র যোদ্ধা নিহত হয়। আহত হয় ৮ জন।

অপরদিকে র্সীমান্তে বসবাসরত অনেকের মধ্যে সদর ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার ছাবের আহমদ জানান, তার বাড়ি সীমান্তের ৪৫ নম্বর পিলারের অতি কাছে। তাদের বাড়ির বিপরীতে মিয়ানমারের ছালিদং সীমান্ত চৌকি। সে চৌকিতে দেড়মাস ধরে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র একটি বাহিনী দখল করে নেন। যারা রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা। এখন স্বাধীনতাকামী।

কিন্তু গত শুক্রবার গেল রাতের অন্ধকারে সে চৌকি ঘেরাও করার সময় মাত্র ১০ সদস্য অবস্থানে ছিলো সেই চৌকিটিতে। শনিবার সন্ধ্যায় আর রাতে ৫ যোদ্ধা বন্দি দশা থেকে পালিয়ে আসলেও ৫ জনের হদিস এখনও নেই বলে জানান তাকে।

৪৪ নম্বর পিলার এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আনসার কমান্ডার আলী হোসেন জানান, সীমান্তে নতুন করে মিয়ানমারের চৌকি দখল করা যোদ্ধারা আরকান আর্মির বলে তিনি শুনেছেন। তারা সরকারি বাহিনী নয়।

অপর বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, ‌সীমান্তে গরু চোরাচালান বিষয়ে মিয়ানমারের দু’বিদ্রোহী সংগঠনের মধ্যে এ দখল বেদখলের ঘটনা ঘটে। যাকে কেন্দ্র করে একে-৪৭ আর এম-১৬ রাইফেল নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী হলে এ ঘটনায় হেলিকপ্টার চক্কর দিতো। এছাড়া অন্য গুলি না ছুঁড়ে মর্টারশেলই ব্যবহার করতো সবসময়। যেমনিভাবে করা হয় সীমান্তের ৩৪,৩৫ থেকে ৪০ নম্বর পিলারে।

সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, সীমান্তে গোলাগুলি কিছুটা কমেছে। বাড়ি-ঘর থেকে পালিয়ে আসা লোকজনের অনেক বাড়ি ফিরেছে।

দৌছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইমরান বলেন, তার সীমান্ত এলাকা ৫০ নম্বর পিলার পয়েন্টে গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত শনিবার তার এলাকা থেকে পালিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নেয়া লোকজন স্ব-স্ব বাড়ি ফিরে গেছে। তবে আতঙ্ক কাটেনি। সীমান্তে বিজিবি সর্তক অবস্থায় আছে।

উল্লেখ্য শুক্রবার রাতে, এ রিপোর্ট লেখা অবধি সীমান্তে ৭টি চৌকিতে হানা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে প্রতিপক্ষকে। গোলাগুলির ঘটনা ঘটে শত শত রাউন্ড। এ নিয়ে সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যদিও বিজিবি টহল জোরদার করেছে। বহিরাগত লোকজনকে বিনা প্রয়োজনে সীমান্ত এলাকা প্রবেশে বাধাঁ দেয়া হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন