খাগড়াছড়িতে গ্রেনেড বিষ্ফোরণে নিহত দুই বিজিবি সদস্যের লাশ দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে: তদন্ত কমিটি গঠিত

Ramgarh   16-11-14 copy

নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়:

খাগড়াছড়িতে প্রশিক্ষণকালে গ্রেনেড বিষ্ফোরণে নিহত দুই বিজিবি সদস্যের লাশ ময়না তদন্ত শেষে জানাজার পর নিহতদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে গ্রেনেড বিষ্ফোরণের ঘটনা তদন্তে বিজিবি’র খাগড়াছড়ি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল শাহরিয়ার ফরিদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিজিবি’র চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক কমাণ্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল হাবিবুল করিম পার্বত্যনিউজকে বলেন, একটি নিছক দূর্ঘটনা মাত্র। বিজিবি’র নিয়মিত গ্রেনেড ফায়ারিং প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে আজ রামগড় ব্যাটালিয়নের সদস্যরা খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জে গ্রেনেড নিক্ষেপ প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। এসময় এ দূর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনাটি আসলে কোনো সৈনিকের ত্রুটি না মেকানিক্যাল ফল্টের কারণে ঘটেছে তা তদন্ত না করে বলা যাবে না।

বিজিবি সূত্রে জানাযায়, গ্রেনেড দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা তদন্তে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সূত্র জানায় বিজিবি হেডকোয়ার্টার থেকে দু’জন কর্মকর্তা ঘটনা তদন্তের জন্য রবিবার রাতেই খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।

এদিকে খাগড়াছড়িতে ময়নাতদন্তের পর নিহতদের লাশ রাত ৭টার দিকে রামগড় ১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদরে পৌাঁছার পর পুরো ব্যাটালিয়নে শোকের ছায়া নেমে আসে। সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ব্যাটালিয়ন সদরের স্পোর্টস মাঠে নিহতদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজায় গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল, বিজিবির গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল শাহরিয়ার, ১৬ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্ণেল খালেদ, ৪০ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্ণেল রহমান, ২১ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্ণেল আমিন, রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন,এসএসপি(রামগড় সার্কেল) শাহ জাহান হোসেনসহ সামরিক,বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে রাত ৯টার দিকে বিজিবির প্রহরায় নিহতদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়।

 

উল্লেখ্য, রবিবার সকালে খাগড়াছড়ি সেনানিবাসের ফায়ারিং রেঞ্জ ফিল্ডে অনুশীলনকালে গ্রেনেড বিস্ফোরনে রামগড় ১৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের এক কর্মকর্তাসহ দুইজন নিহত এবং চারজন আহত হয়। নিহতরা হচ্ছেন নায়েক সুবেদার আবুল কাশেম(৫০) ও সিপাহী হাসান সিকদার(৪০)। আবুল কাশেমের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার চিলোরা গ্রামে ও হাসানের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিনিয়া উপজেলার দক্ষিণ খোকরার পূর্বপাড়া গ্রামে।

আহতরা হচ্ছেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার পলাশপুরস্থ ৪০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের মেডিক্যাল অফিসার ডা.ক্যাপ্টেন তাইফুল, রামগড় ১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের নায়েক সুবেদার মাসুদ রানা(৫৫), ল্যান্স নায়েক ছামেরুল(৩৫) ও ল্যান্স নায়েক সিরাজ(৩৫)। বাৎসরিক গ্রেনেড ফায়ারিং অনুশীলন করতে আজ রবিবার সকালে রামগড় ১৬ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর থেকে বিজিবির ১৫৯ সদস্যের দলটি খাগড়াছড়ি যায়।

রামগড় ১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্ণেল খালেদ বিন ইউছুফ গ্রেনেড বিস্ফোরনে হতাহতের ঘটনার সত্যত্যা স্বীকার করেছেন।ফায়ারিং ফিল্ডে উপস্থিত বিজিবির এক সদস্য জানান, সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি জানান, সিপাহী হাসান ৮৪ হর্স পাওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি গ্রেনেডের পিন খোলার সময় হঠাৎ গ্রেনেডটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে হাসানের একটি হাত উড়ে যায়। এসময় হাসান ও তার পাশে দাঁড়ানো অনুশীলন তদারকারী কর্মকর্তা নায়েক সুবেদার আবুল কাশেম প্রাণ হারান। ফায়ারিং ফিল্ডে অবস্থানকারী ডা. ক্যাপ্টেন তাইফুল ও ল্যান্স নায়েক মাসুদ রানা মাথায় , ল্যান্স নায়েক ছামেরুল ও ল্যান্স নায়েক সিরাজ বুকে বিস্ফোরিত গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে আহত হন। আহতদের সামরিক হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় সন্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহত নায়েক সুবেদার আবুল কাশেম ১৯৭৮ সালের ২৭ অক্টোবর এবং সিপাহী হাসান সিকদার ১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর বিডিআর এ যোগদান করেন। আবুল কাশেম ৪কন্যা ও এক পুত্র সন্তানেরজনক। তিনি গত ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার থেকে বদলী হয়ে রামগড়স্থ ১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নে যোগদান করেন। সিপাহী হাসানের একটি পালিতা কন্যা রয়েছে। দুঘর্টনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও বিজিবির উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন