মোখার আঘাতে টেকনাফ, সেন্টমার্টিনদ্বীপসহ রোহিঙ্গা বসতি লন্ডভন্ড

৪ ঘন্টার তাণ্ডবে কক্সবাজারে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

fec-image

প্রচণ্ড গতির বাতাস নিয়ে রবিবার (১৪ মে) বিকাল ৩টার দিকে কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এতে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরো জেলায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের সেন্টামার্টিনেই ক্ষতি হয়েছে ১২০০ ঘরবাড়ি। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে। প্রায় চার ঘণ্টার তাণ্ডবে দ্বীপের ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

মোখার তাণ্ডব চলে গেলেও এখনো আতঙ্ক কাটেনি। কারণ সন্ধ্যা নাগাদ সাগরে জোয়ার হলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিন, টেকনাফ সদর, পৌর এলাকা, সাবরাং, ডেইলপাড়া, জাদিমুড়া এলাকায় প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়েছে। উড়ে গেছে ঘরের চালা। বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে সড়ক থেকে গাছ সরাতে দেখা গেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, মোখার তাণ্ডবে জেলায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেন্টমার্টিনের। কয়েকজন হতাহত হলেও কেউ মারা যায়নি। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আবহাওয়া অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে একটু সময় লাগবে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সমুদ্রে জোয়ার ও কিছুটা বাতাস থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে এখন বাড়ি না যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হলে তারা বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে।

আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, রবিবার (১৪ মে) দুপুর ১টার দিকে মোখার তাণ্ডব শুরু হয়। একটানা ৫টা পর্যন্ত চলে। এসময় বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার ছিল।

সেন্টমার্টিন থেকে জয়নাল আবেদিন জানান, বেলা ১টার দিকে প্রচণ্ড বেগে বাতাস শুরু হয়। এসময় গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। অনেক বাড়ি মাটিতে হেলে গেছে। সাগর খুবই উত্তাল হয়ে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বীপের মানুষ আশ্রয়ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও আতঙ্কে ছিল।

এসময় তারা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে স্মরণ করে ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচার আকুতি জানায়।

সেন্টমার্টিন কোস্ট গার্ড স্টেশন কমান্ডার আবদুল মালেক বলেন, কোস্ট গার্ড ভবনে ৭০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছে। পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরাও। তাদেরকে খিচুড়ি খাবার দেওয়া হয়।

এদিকে টেকনাফের বাহারছড়া, সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, হ্নীলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মোখো তাণ্ডব চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। মোখার কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান বলেন, ঝড়ে ইতোমধ্যে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের কিছু এলাকায় গাছগাছালি ও ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। দুই এলাকায় বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার সংবাদ পেয়েছি।

কক্সবাজার জেলায় ১০নং মহাবিপদ সংকেত জারি করেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, ঘরবাড়ি, জলোচ্ছ্বাস
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন