অবসর নিয়ে যা বললেন মেসি
আধুনিক ফুটবলের ‘জাদুকর’ লিওনেল মেসি বিশ্বকাপ জয়ের পর তিনি যেন বনে গেছেন মহাতারকা। তার শৈশব-কৈশোরের গল্পগুলো আগে থেকেই জানা সবার।
তবে সেই গল্পগুলো কখনো পুরনো হয় না। বছরের পর বছর কাটে, আসে নতুন প্রজন্ম। তাদের কাছেও একই বিস্ময় আর মুগ্ধতা ছড়িয়ে ধরা দেন ফুটবলের এই বরপুত্র। মাঝেমধ্যে তার নতুন সব সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেগুলো পড়তে যেন হুমড়ি খান পাঠকরা।
মিসরীয় সৌদি সাংবাদিক ওমর আদিবকে গত জানুয়ারিতে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন মেসি। ইন্টার মায়ামি তখন দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে এসেছিল আরবের দেশটিতে। তখন নেওয়া সাক্ষাৎকারটা যদিও প্রকাশ পেয়েছে গত মঙ্গলবার। এমবিসি বিগ টাইমের পডকাস্টের সাক্ষাৎকারটি সেটি তাদের অনলাইনে উন্মুক্ত করেছে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ওলে। যেখানে রোজারিও থেকে বার্সেলোনার যাত্রা, আবার বার্সার সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে কথা বলেছেন। বিশ্বকাপ না জিতলে পরিস্থিতি কেমন হতো তা নিয়েও কথা বলেছেন আর্জেন্টাইন এই মহাতারকা।
২০২১ সালের ৮ আগস্ট, রবিবার। আর্জেন্টিনায় যখন সূর্য উদয় হয়, বার্সেলোনায় তখন অস্ত যাচ্ছিল। কান্নাভেজা চোখে সেদিন শৈশব-কৈশোরের ক্লাব বার্সায় নিজের বিদায় নিশ্চিত করেন তিনি। সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল জানিয়ে মেসি বলেন, ‘বার্সেলোনা আমাকে ছাড়তে হবে, এটা আমি কখনো চিন্তাও করিনি। তাই ক্লাব পরিবর্তন বিষয়টা মেনে নেওয়া আমার জন্য কঠিন ছিল। কারণ আমি তো পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমি তো থাকতে চেয়েছিলাম। সবই খুব দ্রুত হয়ে গেছে। সেদিনের পর আমার নিজের জীবনকে নতুন করে গড়ে তুলতে হয়েছিল। আমার পরিবার, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আসতে হয়েছিল নতুন শহরে। যেখানে নতুন ড্রেসিং রুম, নতুন খেলার ধরন, নতুন একটা লিগ, আরেকটা ক্লাবের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। এই পরিবর্তনটা ছিল আমার জন্য। সারা জীবন তো বার্সেলোনাতেই ছিলাম। আর সেখানে থাকাটাই উপভোগ করেছি। নতুন জায়গায় সবকিছু নতুন করে মানিয়ে নিতে হয়েছিল। প্রথম দিকে কাজটা খুব কঠিন ছিল।’
শুধু প্রতিভা থাকলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় না। মেসিও সেটি দিয়েই তা হননি। তার সবচেয়ে বড় গুণ তিনি আত্মসমালোচক, ‘খুব ছোট বয়স থেকে আমি নিজের ভুলগুলো খুঁজে সেটা শুধরাতাম। যা আজ অবধি আমি করছি। প্রত্যেকেরই স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার আছে। যখন সমালোচনাটা হয় আমার ফুটবল খেলা নিয়ে, তখন সেসব কথা আমাকে বিরক্ত করে না। তবে প্রথমে আমি আত্মসমালোচক। আমার ভুল বা সঠিক কোনটি সেটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অন্য কারোর প্রয়োজন নেই। কারণ সেটা আমি ইতিমধ্যেই জেনে গেছি। যখন কোনো কিছু আমার পক্ষে যায় না তখনই সেটা নিয়ে আমি নিজেই কাজ করি। এটা আমার পেশার অংশ এবং সম্মানজনক। কোনো সমস্যা নেই।’
আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ না জিতলে কী হতো
‘সত্যি কথা হলো, এটা এমন একটা কাপ যা আমি অনেক উপভোগ করেছি। প্রথম ম্যাচটা হেরে যাওয়ার পর আমরা পরের প্রতিটা ম্যাচ গুরুত্ব দিয়ে খেলেছি। দারুণ একটা মাস আমরা কাটিয়েছিলাম। দেশের জন্য তো আমাকে কিছু রেখে যেতে হবে। আর তাই খুব করে চাইছিলাম বিশ্বকাপ জিততে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সেই মুহূর্তটা শেষ হয়ে গেছে। আমরা ইতিমধ্যে বিশ্বকাপ জয় করে ফেলেছি এবং ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরেছি।’
কেমন হতো যদি আর্জেন্টিনা কাতারে তাদের তৃতীয় শিরোপা হাতছাড়া করত? জবাবে মেসি বলেন, ‘যদি সত্যিই আমরা বিশ্বকাপ না জিততাম, তবে নিশ্চিতভাবেই আমি জাতীয় দল ছেড়ে দিতাম। কারণ আমি একটা পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। আমি আমার ক্যারিয়ারে আরেক ধাপ এগোতে চলেছি, আবার ক্লাব বদলাতে যাচ্ছিলাম এবং পরিস্থিতি অনেক বদলে যেত। তখন আবার নতুন করে বিশ্বকাপ জেতার কৌশল তৈরি করার মানসিকতা থাকত না।’
৩৬ বছর বয়সেও লিওনেল মেসির ফিটনেসে কোনো ঘাটতি খুঁজে পাওয়া যায় না। তার ব্যাখ্যায় মেসি বলেন, ‘আপনি যদি পেশাদার হন তবে এটি আপনি মেনে চলবেন। বলা চলে নিজের ভেতর থেকেই কেউ একজন তাড়না দেবে, রুটিন মেনে চলার জন্য। নিজের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রচুর লড়াই, সংগ্রাম ও পরিশ্রম করতে হয়। এর মাধ্যমে সেই প্রতিভাকে শক্তিশালী করতে হয়। আমি প্রায়ই খেলার মধ্যে থাকি। শরীরে অনেক ধকলও যায়। ভালো বিশ্রাম সর্বোপরি আমি মনে করি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার বিশেষ কোনো রুটিন নেই। বেশিরভাগ খেলোয়াড় যা মেনে চলে আমিও তাই করি।’
মেসি অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। এমন দৃশ্য কেউ কল্পনাও করতে চায় না। এমনকি মেসি নিজেও না, ‘যখন আমি দেখব যে পারফরম করতে পারছি না। চেষ্টা করেও কোনো ফল নেই, সতীর্থরা আমার দ্বারা কোনো উপকার পাচ্ছে না। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি নিজেকে গুটিয়ে নেব। কারণ আগেই বলেছি, আমি আত্মসমালোচক। যদি মনে করি আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে, আমি বয়সের কথা চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলব। কারণ কখন কী করতে হয় তা আমি জানি। বুটজোড়া তুলে রাখার পর কী হবে, এটা নিয়ে আমি কখনো ভাবিনি। আমি শুধু মুহূর্তগুলো উপভোগ করার চেষ্টা করছি।’