আত্মস্বীকৃত ১০১ ইয়াবা কারবারির দেড় বছর কারাদণ্ড, অস্ত্র মামলায় খালাস

আত্মস্বীকৃত ১০১ ইয়াবা কারবারিকে দেড় বছর কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অস্ত্র মামলায় তাদের খালাস দিয়েছে আদালত।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।
রায় ঘোষণাকালে কারান্তরীণ থাকা ১৮ আসামি উপস্থিত থাকলেও পলাতক আছেন ৮৩ জন। এ মামলায় আরেক আসামি কারাগারে মৃত্যুবরণ করায় তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অ্যাডভোকেট মুস্তফা, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, অ্যাডভোকেট সলিমুল মোস্তফা, অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন প্রমুখ।
এদিকে, মামলার রায়ে আসামিরা আনন্দিত ও উল্লসিত। আদালত থেকে পুলিশ ভ্যানে নেওয়ার পথে তাদের চোখেমুখে এই দৃশ্য দেখা গেছে। অনেকে হাত উচিয়ে দর্শকদের অভিবাদনও জানায়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে ১০২ জন ইয়াবাকারবারী আত্মসমর্পণ করে। তৎকালীন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তৎকালীন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী, কক্সবাজারের ৪ জন সংসদ সদস্য, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ উর্ধতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘদিন প্রস্তুতির পর বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান করা হয়। কিন্তু আত্মসমর্পণের পর তাদের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা এবং ৩০টি দেশীয় তৈরি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে ওসি (তদন্ত) এবিএমএস দোহা বাদী হয়ে মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন।
ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্রসমূহ টেকনাফের মহেশখালীয়া পাড়াস্থ বিচ হ্যাচারি নামক একটি পরিত্যক্ত হ্যাচারি থেকে উদ্ধার করা হয় বলে মামলা ২টির এজাহারে উল্লেখ করা হয়। আত্মসমর্পনের আগের রাতে এসব ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে এজাহারে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। অথচ সারেন্ডারকারীরা মুক্তি পেতে রাষ্ট্র সব ধরনের আইনি সহায়তা দেবে বলে আত্মসমর্পনের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করেছিল।
এ ২টি মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং আসামিদের পক্ষে সাক্ষীদের জেরা করা হয়। মামলায় আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষা ফলাফল যাচাই, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। মামলাটির সকল বিচারিক কার্যক্রম গত ১৫ নভেম্বর শেষ হয়। সেদিন উপস্থিত ১৭ আসামিকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
তারা হলেন, নুরুল হুদা মেম্বার (৩৮), শাহ আলম (৩৫), আবদুর রহমান (৩০), ফরিদ আলম (৪২), মাহবুব আলম (৩৪), রশিদ আহমদ খুলু (৫৪), মো. তৈয়ব (৪৬) পিতা- মৌলভী আলী হোসেন, জাফর আলম (৩৭), মো. হাশেম প্রকাশ আংকু (৩৮), আবু তৈয়ব, (৩১) পিতা-দিলদার আহমদ, আলী নেওয়াজ (৩১), মো. আইয়ুব (৩৫), কামাল হোসেন (২৬), নুরুল বশর প্রকাশ কালাভাই (৪০), আবদুল করিম প্রকাশ করিম মাঝি (৪০), দিল মোহাম্মদ (৩৪) এবং মো. সাকের মিয়া প্রকাশ সাকের মাঝি (২৮)।
আসামিদের পক্ষে আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দেন টেকনাফের বাহারছরার শামলাপুর পুরানপাড়ার মাওলানা নাছির উদ্দিন, বাহারছরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজ উদ্দিন এবং সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন ভুলু।