আলীকদমে জুমচাষের বিকল্প ঔষধি বাগান
মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম:
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় পরিবেশ ও বন রক্ষায় জুমচাষের বিকল্প হিসেবে ঔষধি গাছের চাষে সাড়া পড়েছে। বেসরকারি সংস্থা ইকো ডেভেলপমেন্টের উদ্যোগে করা ঔষধি বাগান। বর্তমানে উৎপাদনমূখী ৩০ একর ঔষধি বাগান সৃজন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঔষধি বাগানে উৎসাহী করতে ইকো ডেভেলপমেন্ট থেকে উপকাভোগীদের বিনামূল্যে বীজ বিতরণ ও কারিগরি সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ইকোনোমিকেল ইম্পাওয়ারমেন্ট অব জুমিয়া পিপলস্ ট্রট মেডিশনাল প্লান্ট কাল্টিভেশন (ইইজেএমপি) প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্থাটি জুমচাষীদের পাহাড়ী ভূমিতে ঔষধি বাগান করতে উদ্ভুদ্ধ করছে।
ইকো ডেভেলপমেন্টের ইইজেএমপি প্রকল্পের কমিউনিটি ফ্যাসিলেটর সুইনং মারমা ও প্রুচিং মারমা জানান, সংস্থা থেকে বিনামূল্যে অর্শ্বগন্ধা, শিমুল, কালোমেঘ ও বাসকের বীজ দেয়া হয়েছে। অর্শ্বগন্ধা সেবনে খিঁচুনি, মাথাব্যাথা, স্নায়ুবিক দূর্বলতা, ও লিভার সমাস্যাসহ বিভিন্ন রোগ উপশমে কাজ করে। অর্শ্বগন্ধা চাষে প্রতি একরে এক লাখ থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। শিমুলের মূল সেবনে শিশুদের মূত্রহীনতা, বহুমূত্র, গনোরিয়া, আমাশয় ও অপুষ্টিসহ বিভিন্ন সমাস্যা উপশম করে। শিমূল চাষে প্রতি একরে পনের থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা যায়। কালোমেঘ কৃমি, কৌষ্টকাঠিন্য, জ্বর, গ্যাষ্ট্রিক ও টাইফয়েড রোগের এন্টিবায়েটিক হিসেবে কাজ করে। কালোমেঘ চাষে প্রতি একরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। বর্তমানে বাজারে সব ওষধির গাছ-গাছড়া ও বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বাবু পাড়ার ওষধি চাষী দলের সদস্য মংক্যঅং মারমা জানান, বাগানে এককেজি কালোমেঘের বীজ চিটিয়ে ১৪৬ কেজি বীজ পেয়েছেন। ওই বীজ বিক্রি করে তিনি ১৬ হাজার টাকার বেশি পেয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২০১২ সালে আলীকদম উপজেলায় ইকো ডেভেলপমেন্ট প্রতিজনের এক একর করে ১০০জন উপকাভোগী সদস্য নিয়ে ঔষধি চাষ শুরু করে। এরমধে উৎপাদনমূখী হয়েছে ৩০টি ঔষধি বাগান। বর্তমানে এসব বাগানের উপকারভোগী সদস্যরা সুফল ভোগ করছেন। এবছর আরো ১০৮জন উপকারভোগি সদস্য নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফোগ্য মারমা বলেন, ঔষধি বাগান করে নারীরা আয়বর্ধকমূলক কাজে সম্পৃক্ত হওয়ায় দরিদ্র পরিবারগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, আলীকদম সদর ইউনিয়নের বাবু পাড়ায় একটি ঔষধি বাগানের নার্সারীতে কাজ করছেন কয়েকজন আদিবাসী নারী-পুরুষ। বাবু পাড়া ও চায়েং মেম্বার পাড়ার উপকারভোগী ঔষধি চাষীদলের সদস্যরা যৌথভাবে নার্সারীটি করেছেন। বাবু পাড়ার মাহাইচিং মারমা জানালেন, ইকো ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপনায় দলভিত্তিক যৌথভাবে ওষধি নার্সারীটি করেছেন। তারা পালা করে নার্সারী পরিচর্যা করেন। ঔষধি নার্সারী ও বাগান করে তাদের বাড়তি আয় আসছে। সংস্থা থেকে তারা বীজ ও কারিগরী সহযোগিতা পেয়েছেন।
স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেষজ সহকারী তোফায়েল আহমদ বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার প্রকল্পের প্রতি উপজেলা ভেষজ বাগান রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলো এগিয়ে আসলে অদূর ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষ ভেষজ চিকিৎসার সুবিধা পাবে।
উপকারভোগী সদস্যরা বলেছেন, উপজেলা পর্যায়ে বিক্রয় কেন্দ্র করা হলে ঔষধি গাছ-গাছড়ার গুণাগুণ সর্ম্পকে মানুষ জানবে। উৎপাদনকারীরা স্থানীয়ভাবে বাজারজাতে সুবিধা পেলে উপকারভোীগরা আরো বেশী উৎসাহিত হবেন।
জানতে চাইলে ইকো ডেভেলপমেন্টের উপজেলা কর্মকর্তা ক্যপ্রু চৌধুরী জানান, উপকারভোগি সদস্যদের কাছ থেকে উৎপাদিত ঔষধি গাছ-গাছড়া কিনে ইকো ডেভেলপমেন্টের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ইকো ডেভেলপমেন্ট চাষীদের কাছ সংগৃহিত ঔষধি গাছ-গাছড়া বিভিন্ন্ ঔষধ কোম্পানি কাছে বিক্রি করে থাকে। বর্তমানে ঔষধ কোম্পানিগুলো এখন ভেষজ চিকিৎসার দিকে ধাবিত হওয়ায় ঔষধি গাছ-গাছড়ার চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, প্রযুক্তি যুগে ভেষজ চিকিৎসা এখন নেই বলে চলে। তবে সরকারী ও বেসরকারী প্রচেষ্টায় ভেষজ চিকিৎসা সুবিধা জনগণের দোড় গোড়ায় পৌছে দেয়া সম্ভব। ইকো ডেভেলপমেন্টের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।