আ’লীগ নেতার মৎস্যঘেরে হামলা-লুটপাট, গুলিবর্ষণ
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোন রামপুর মৌজায় ৫’শ একর আয়তনের একটি মৎস্যঘেরে হামলা ও লুটতরাজ তাণ্ডব চালিয়েছে অস্ত্রধারী ডাকাতদল। ওইসময় ৩০-৩৫ জনের ডাকাতদল শুরুতে ঘেরটিতে হানা দিয়ে অন্ততপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে ওই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
এরপর ঘেরটির সহকারী ম্যানেজার এবং কর্মচারীদের অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে অফিসকক্ষের আলমিরা থেকে মাছ বিক্রির নগদ পাঁচ লাখ টাকা এবং ঘেরের হিমাগারে রক্ষিত প্রায় ৫ লাখ টাকার মাছ ও দুইটি মোটর সাইকেল লুটে নিয়ে গেছে। ঘটনার সময় ডাকাতদলের সদস্যরা ঘেরটির সহকারী ম্যানেজার মিন্টু চৌধুরীকে অপহরণ করেছে।
২৯ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) রাত ১টার দিকে উপজেলার চিংড়িজোন রামপুর মৌজার চোয়ারফাঁড়িস্থ উত্তর এমএলঘোনায় ঘটেছে ডাকাত দলের হামলা ও তাণ্ডবের এ ঘটনা। তবে রাতেই ঘটনার খবর পেয়ে চকরিয়া থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও ততক্ষণে ডাকাতদল নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
৩০-৩৫ জনের অস্ত্রধারী ডাকাতদল ঘেরটির মাছসহ মালামাল লুটের উদ্দেশ্যে এ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন ঘেরটির পরিচালক চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম।
ঘেরটির পরিচালক ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, পাঁচবছর আগে মুল মালিক থেকে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট মুমিনুর রহমান, চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, মোয়াজ্জেম হোসেন শাওনসহ আমরা রামপুর মৌজার ৫০০ একর (প্রায় ১২শত কানি) আয়তনের উত্তর এমএল ঘোনাটি ইজারা নেয়। আমাদের সঙ্গে জমি মালিকপক্ষের অংশিদার তৌফিকুল ইসলামও আছেন। ইজারা নেয়ার পর থেকে আমরা ঘেরটিতে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করে মৎস্যচাষ করে আসছি।
ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক দাবি করেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক একটার দিকে অতর্কিত ৩০-৩৫ জনের অস্ত্রধারী ডাকাতদল মৎস্যঘেরে হানা দেয়। ওই সময় ডাকাতরা কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে ওই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এরপর ঘেরের অফিসকক্ষে ঢুকে সহকারী ম্যানেজার ও কর্মচারীদের অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে অফিসকক্ষের আলমিরা থেকে মাছ বিক্রির নগদ ৫ লাখ টাকা এবং প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মাছ ও দুইটি মোটর সাইকেল লুটে নিয়ে গেছে।
ঘটনার সময় ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে ঘেরটির সহকারী ম্যানেজার মিন্টু চৌধুরীকে অপহরণ করেছে। অপহৃতের গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মল্লিক চোবাহানপাড়া গ্রামে। তিনি ওই এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে। আমরা এখনো (শুক্রবার বিকাল পাঁচটা নগাদ) তাঁর খোঁজ পাইনি।
ঘেরটির জমির মালিকপক্ষের অংশিদার এবং পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, মৎস্যঘেরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলার সাহারবিলের কোরালখালীর আলোচিত নবী হোছাইন প্রকাশ নবী চৌধুরী। তাঁর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জনের অস্ত্রধারী ডাকাতদল ঘেরটি দখলে নিতে গোলাগুলি করেছে। ওইসময় ঘেরের কর্মচারীরা নবী হোছাইন ও আবু তৈয়বকে লাইটের আলোতে দেখেছে।
তিনি বলেন, ডাকাতদলের তাণ্ডবের ঘটনাটি রাতেই চকরিয়া থানার ওসিকে জানাই। এরপর তাঁর নির্দেশে থানার এসআই মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটিদল ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও ততক্ষনে ডাকাতদল লুন্ডিত মাছসহ মালামাল নিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এব্যাপারে আমাদের পক্ষথেকে থানায় মামলা রেকর্ড করার প্রস্তুতি চলছে।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকের মুহাম্মদ যুবায়ের বলেন, রামপুর চিংড়িজোনের মৎস্যঘেরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনাটি রাতেই আমি জেনেছি। তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পুলিশের একটিদল পাঠাই, তবে ওইসময় ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি পুলিশ। ওসি বলেন, ঘেরটির ইজারা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ঘটনার সূত্রপাত বলে মনে হচ্ছে। তারপরও সংগঠিত ঘটনার প্রেক্ষিতে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হবে।